ছাতকে আবুল হোসেনকে পরিকল্পিত হত্যা নাকি অন্য কারণ প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার অপচেষ্টা॥ টনার আড়ালে থাকা প্রকৃত রহস্য কি
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে বারকি শ্রমিক আবুল হোসেন পরিকল্পিতভাবে হত্যার শিকার নাকি অন্য কারণ রয়েছে এ নিয়ে ধুম্রজাল স্মৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে একটি কুচক্রি মহল চক্রান্ত করে আবুল হোসেনের সহজ-সরল স্ত্রী মোছা: সবতুন বেগমকে বিভিন্ন ভাবে ফুসলিয়ে প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে। এ ঘটনায় জেলা জুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।জানা যায়, উপজেলা ইসলামপুর ইউনিয়নের সৈদাবাদ গ্রামের মৃত. আব্দুল মনাফের ছেলে আবুল হোসেন শুক্রবার (২১ অক্টোবর) নিজ বাড়ী থেকে নিখোঁজ হন। পর দিন সকাল ৮ ঘটিকা পর্যন্ত আবুল হোসেন বাড়ীতে ফিরে না আসায় তার স্ত্রী মোছা: সবতুন বেগম ও ভাই আলী হোসেনসহ আত্মীয় স্বজন সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজা খোঁজি করে আবুল হোসেনকে পাওয়া যায়নি। ২৭ অক্টোবর আবুল হোসেন এর ভাই আলী হোসেন থানায় জিডি নং-১৪৯৯ দায়ের করা হয়। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দিবাগত রাত আনুমানিক ৪ ঘটিকার সময় নিজ বাড়ী হতে টেলা জাল ও সুতার পাইয়া জাল নিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বের হন আবুল হোসেন। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজে তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। পুলিশ সুত্রে জানা যায়, জিডি দায়ের পর তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এস আই সামছুল আরিফিন। যেহেতু জাল দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে আবুল হোসেন নিখোঁজ হয়েছেন সেহেতু বিলে জাল ফেলে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগীতা নেওয়ার কথা বলা হয়। পরে মোছা: সবতুন বেগম ও আলী হোসেনকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় মোছা: সবতুন বেগম হাসি টাট্রা করছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার পর তাৎক্ষনিক থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মোছা: সবতুন বেগম নিজে জিডি না করে আলী হোসেনকে পাঠিয়ে জিডি করায় নানা সন্দেহ দানা বাঁধে। অভিযোগ উঠেছে মোছা: সবতুন বেগম ও আলী হোসেন সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করছেন না। তারা ভুল তথ্য দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছেন।
এদিকে ২ নভেম্বর মোছা: সবতুন বেগম বাদী হয়ে তার স্বামী মো. আবুল হোসেনকে অপহরণ করে খুন ও লাশ গুম করার অভিযোগ এনে আমল গ্রহনকারী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, ছাতক, সুনামগঞ্জে সি আর মামলা নং ৪৮৮/২০২২ ইং দায়ের করা হয়। এতে একই গ্রামের ইন্তাজ আলীর ছেলে শুকুর আলী, মন্তাজনগর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে মনির উদ্দিন, সফিক উদ্দিনসহ ৬ জন ও অজ্ঞাতমা ৫/৬ জন আসামী করা হয়। ৬ নভেম্বর ছাতক থানায় মামলা নং-০৪ এফআইআর করা হয়। তবে জিডি দায়ের করতে আবুল হোসেনের স্ত্রী মোছা: সবতুন বেগম এর অনিহা থাকলেও এবার তিনি নিজেই মামলার বাদী হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে আবুল হোসেন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ও প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতেই মোছা: সবতুন বেগম ও ভাই আলী হোসেন একটি কুচক্রি মহলের প্ররোচনায় নিরীহ লোকদেরকে আসামী করা হয়েছে। যাদের চক্রান্তে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার অপচেষ্টা চলছে তারা এই হত্যাকান্ডে জড়িত কি না তদন্তে খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। গত ৮ নভেম্বর একটি ফেইসবুক পেইজে লাইভে এসে মোছা: সবতুন বেগম ও আলী হোসেন দুজনই বার বার নিখোঁজ আবুল হোসেনের লাশ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তখন প্রশ্ন উঠে তাহলে তারা জানেন আবুল হোসেন আর বেঁচে নেই। আবুল হোসেনকে জীবিত পাওয়ার দাবী না করায় সন্দেহ আরো প্রকট হয়। অপরদিকে আবুল হোসেন নিখোঁজ হওয়ার ২৪ দিন পরম মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) স্থানীয় গুয়া বিলের পাশে বন রকম স্থানে একটি কষ্কাল দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে কষ্কাল উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ মর্গে প্রেরন করা হয়। তবে মাত্র ২৪ দিনে একটি লাশ হাড়-কষ্কালে পরিনত হওয়ার লোম হর্ষক ঘটনা স্থানীয়দের হতবাক করে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে ২৪ দিনে একটি লাশ পঁচে গলে কষ্কালে পরিনত হলো কিন্ত একটি চিল-কাকও টের পেলোনা। হাড়-কষ্কাল দেখে চেনার কোন উপায় নেই। তবে আবুল হোসেনের পরিবার বলছে কষ্কালের পাশে যে কাপড়-লুঙ্গি পাওয়া গেছে তা নিখোঁজ হওয়ার সময় আবুল হোসেনের পড়নে ছিল এবং এর বিবরন জিডিতে উল্লেখ আছে। তাই তারা মনে করছেন এই কষ্কালই আবুল হোসেনের লাশ।
এসব ঘটনায় সন্দেহের তীর আবুল হোসেনের স্ত্রী মোছা: সবতুন বেগমের দিকে। প্রশ্ন উঠেছে মোছা: সবতুন বেগম এর চেহারায় স্বামী নিখোঁজ হওয়া বা হারানোর কোন ছাপ নেই। এক সুত্রে জানা যায়, স্থানীয় মন্তাজনগর গ্রামের সাবুল মিয়া নামে এক বারকি শ্রমিক এর সাথে আবুল হোসেন এর স্ত্রী মোছা: সবতুন বেগম এর পরকীয়া সম্পর্ক চলে আসছিল। এ বিষয়টি দেখে ফেলেন মো. আবুল হোসেন। এ নিয়ে একাধিকবার তাদের মধ্যে বাকবিত-া হয়। ধারনা করা হয় এর জের ধরে আবুল হোসেনকে হত্যা করা হতে পারে। এমনকি আমল গ্রহনকারী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, ছাতক, সুনামগঞ্জে যে দিন মামলা দায়ের করা হয় আবুল হোসেন এর স্ত্রী মোছা: সবতুন বেগম আগের দিন রাতে সুনামগঞ্জে একটি বোর্ডিং এ পরকীয়া প্রেমিকের সাথে রাত্রী যাপন করেন। অন্যদিকে শুক্রবার (১৮ নভেম্ভর) আবুল হোসেনের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে স্থানীয় নাসিমপুর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছেন এলাকাবাসী। সভায় বক্তারা বলেন, কষ্কালের পাশে যে কাপড় পাওয়া গেছে তা দেখে তার পরিবার প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত যে এটিই আবুল হোসেনের লাশ। দ্রুততম সময়ে আবুল হোসেনের লাশ সনাক্ত ও হত্যাকরীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির জানান তারা। সুত্রে জানা যায়, আবুল হোসেন হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার নিজের ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বার ও পরকীয়া প্রেমিক সাবুল মিয়ার ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বার গুরুত্ব বহন করে। কিন্ত আবুল হোসেনের ভাই আলী হোসেন জানান লাশ পাওয়ার পরদিন মুঠোফোন ঘর থেকে চুরি হয়েছে। নাম্বারও নেই তাদের কাছে।
এ বিষয়ে পরকীয়া প্রেমিক সাবুল মিয়ার সাথে এক মাধ্যমে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি আবুল হোসেনের বাড়ীতে যাওয়া আসা করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে তিনি স্বীকার করেন। তবে সুনামগঞ্জে একটি বোর্ডিং এ রাত্রী যাপনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তার নিজের কোন মুঠোফোন নেই।এ বিষয়ে ছাতক থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, কষ্কাল উদ্ধার করার পর আমরা ডিএনও প্রোফাইল সংগ্রহ করেছি। আমরা মনে করছি এটি একটি হত্যাকান্ড। রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন জিডি দায়েরের পর পুলিশ তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে। কিন্ত মোছা: সবতুন বেগম ও আলী হোসেন পুলিশের পরামর্শ গ্রহন করেননি। তারা শুরু থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। এতে পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ বলেন, আমরা মনে করছি এটি একটি হত্যাকান্ড। ডিএনও প্রোফাইল সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তদন্ত চলছে।