ছাতকে কোটি টাকার পাবলিক মিলনায়তন জবরদখল

শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে পাবলিক মিলনায়তন জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে। ছাতক প্রেসক্লাব নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সরকারী এ ভবন জবরদখল ও বছরের পর বছর অবৈধভাবে সংযোগ দিয়ে বিপিডিবির বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি সাংবাদিক সংগঠনের নামে এমন অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করায় উপজেলা জুড়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ছাতক ক্লাব রোডে ছাতক পাবলিক মিলনায়তন ভবনটি এক সময় রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সবধরনের সভা-সমাবেশে স্থানীয়রা এই পাবলিক মিলনায়তন ব্যাবহার করতেন। অভিযোগ উঠেছে ২০১৪ সাল থেকে ছাতক প্রেসক্লাব নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পাবলিক মিলনায়তন ভবন জবরদখল করা হয়েছে। যার ফলে রাজনৈতিক ও সামাজিকসহ বিভিন্ন ধরনের সভা-সমাবেশে করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়াও অবৈধভাবে সংযোগ দিয়ে বিপিডিবির বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রায় ৫০ বছরেরও অধিক পুরনো সরকারী এই ভবনটির সামনে রয়েছে ময়লা আবর্জনার স্তুপ।

জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশল অধিদপ্তর বিতরণ বিভাগ ছাতক, মিটার চেকিংকালে অবৈধভাবে সংযোগ এর অনিয়ম ধরা পড়ে। এর পর হারুন অর রশীদ ও আবদুল আলিম এর কাছে তিনদিনের মধ্যে সংশোধনের নোটিশ প্রদান করা হয়। তবে প্রদত্ত নোটিশের জবাব প্রদান করেছে ছাতক প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ। তারা নতুন করে মিটার প্রদানের আবেদনও জানিয়েছে। কিন্তু ‘প্রেসক্লাবের’ নাম ব্যবহার করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনী ব্যবস্থা না নিয়ে নামেমাত্র দায়সাড়া নোটিশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ এমন অভিযোগও উঠেছে। অবশ্য বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।ছাতক প্রেসক্লাব নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পাবলিক মিলনায়তন ভবন জবরদখল ও অবৈধভাবে বিপিডিবির বিদ্যুৎ ব্যবহার করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় মুলধারার সাংবাদ কর্মীরা। পাবলিক মিলনায়তন উদ্ধারসহ দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

এ বিষয়ে ছাতক উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক ও সাংবাদিক সাকির আমিন বলেন, ছাতক পাবলিক মিলনায়তন উদ্ধার করে জনসাধারনের ব্যাবহার উপযোগী ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন রণি বলেন, আমরা ১৯৮৫ সাল থেকে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করে আসছি। আমাদের প্রেসক্লাব শুরু থেকেই বালিকা বিদ্যালয় সড়কের রোকেয়া ম্যানশনে সভাপতি গিয়াস উদ্দিন তালুকদারের নিজস্ব মার্কেটে ছাতক প্রেসক্লাবের অফিস রয়েছে। এজন্য পাবলিক মিলনায়তন দখল করে রাখা প্রেসক্লাবের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি আরো বলেন, মূলত ছাতক প্রেসক্লাবের নাম ভাঙিয়ে একটি অসাধু চক্র কোটি টাকার পাবলিক মিলনায়তন দখল করেছে। ২০১৪ সাল থেকে ওই মিলনায়তন দখলে রেখে তারা অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারও করছে। এ থেকে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) ছাতক শাখার সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ ছাতক শাখার প্রতিষ্টাতা আহবায়ক শামীম আহমদ তালুকদার বলেন, সাংবাদিকরা হলেন জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ। সাংবাদিকরা সমাজের সব অনাচার, অনিয়ম, অভাব, অভিযোগ, উন্নয়ন ও সম্ভাবনা তুলে ধরার মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেন। আমরা সেই সাংবাদিকতাই দেখতে চাই।

অভিযুক্ত হারুন অর রশীদ এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছাতক প্রেসক্লাবের সঙ্গে প্রতিষ্টালগ্ন থেকেই রয়েছি। আজবধি সাংবাদিকতা করছি। আমাদের ছাতক প্রেসক্লাব হলো কোর্ট স্বিকৃত বৈধ প্রেসক্লাব। আদালতের রায়ের কপি রয়েছে। তিনি বলেন ছাতক পাবলিক মিলনায়তনের পরিত্যাক্ত ঐ কক্ষ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অফিস হিসাবে ব্যাবহার করেছে। তৎসময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার মেয়র এর অনুমতি স্বাপেক্ষে অস্থায়ী ভাবে এই কক্ষ ব্যাবহার করছি। জবরদখরের প্রশ্নই উঠেনা। তিনি আরো বলেন, যারা ফেইসবুকে অপপ্রচার করছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও যারা প্রিন্ট পত্রিকায় সংবাদ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাবেন বলে জানান হারুন অর রশীদ।বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অধিদপ্তর বিতরণ বিভাগ ছাতকের সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, ওই মিলনায়তনের মিটার চেকিংকালে অনিয়ম ধরা পড়ায় ব্যবহারকারী প্রেসক্লাব সভাপতি হারুন অর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম বরাবরে নোটিশ প্রদান করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে নতুন মিটারের আবেদন জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরনো সকল বকেয়া আদায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।ছাতক বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আাল মামুন সর্দার নোটিশ প্রদানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

You might also like