ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ও নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জানা যায়, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উঁচু জমির শত শত একর ব্যুরো ক্ষেত, ঘর বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, বীজতলা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সবজি বাগান, মৎস্য খামারসহ গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট। উপজেলার সর্বত্রই বন্যার পানিতে থৈ-থৈ করছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এখানে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদী সহ সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও নদ-নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। শহরের অদুরে ছাতক-সিলেট সড়কের বিভিন্ন অংশ তলিয়ে গেছে। রাত থেকে সিলেট সহ সারা দেশের সাথে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শহরের অলি-গলি বন্যার পানি উঠে তলিয়ে গেছে। ছাতক-দোয়ারা, , মুক্তিরগাও, বালিউরা, নরশিংপুর, হায়দরপুর, লামারসুলগঞ্জ, বড়কাপন, হাদা সড়কসহ গ্রামীণ সব ক’টি সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
গ্রামীণ হাট বাজার ছাড়াও কয়েকটি বাসা-অফিস ও দোকানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। প্লাবিত হয়েছে দোলারবাজার, ধারণ বাজার, জাউয়াবাজার, আলীগঞ্জ বাজার,পীরপুর বাজার, কপলা বাজার, বুরাইয়া বাজার, জাহিদপুর বাজার, কামারগাঁও বাজার, লাকেশ্বর বাজার, চৌমোহনী বাজার, হাজীর বাজার, ইসলাম বাজার, মাদ্রাসা বাজার ও নিম্নাঞ্চল এলাকার ঘর-বাড়ি। অনেকই দোকান ও বাসাবাড়ির মালামাল সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। উজানের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারনে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে ব্যাপক হারে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ শহরের সকল চুনশিল্প কারখানা, ক্রাশার মিল বন্ধ। সুরমা নদীতে নৌকা- কার্গো লোডিং আন লোডিং ও বন্ধ হয়ে পড়েছে । এক সপ্তাহ ধরে শত-শত শ্রমিক এখানে বেকার। হওয়ায় জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডে তথ্যমতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা স্টেশন ২৬৮, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১.৫২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত। ফলে নদ-নদীতে সকল নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাত থেকে খেয়া পারাপার ও বন্ধ হয়ে গেছে। পানি বন্দী হয়ে পড়া মানুষের জন্য ত্রাণ ও ইউনিয়নে-ইউনিয়নে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলার জন্য দাবী উঠেছে।উপজেলার পৌরসভা সহ উত্তর খুরমা, দক্ষিণখুরমা, সিংচাপইড়, ভাতগাঁও, চরমহল্লা, দোলারবাজার, নোয়ারাই, ইসলামপুর, কালারুকা, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছাতক সদর ও ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।এ দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক থেকে এই সড়কের প্রবেশ পথে জালালপুর নামক স্থানে রতœা নদীর উপর একটি পুরাতন কালভার্ড। কালভার্ডটি ভেঙ্গে নতূন কালভার্ড নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করে এলজিইডি। কালভার্ড ভেঙ্গে পূর্ণ-নির্মাণে কাজ পায় একটি ঠিকাদরি প্রতিষ্টান। তার পর কালভার্ড ভেঙ্গে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যানচলাচলের বিকল্প কোন রাস্তা নির্মাণ না করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কালভার্ড ভেঙ্গে মানুষের চলাচলে মারাত্বক ব্যাঘাতের সৃষ্টি করেছে এ অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বন্যায় ওই খাল পানিতে ভরে যায় এতে হাজার মানুষের দূর্ভোগ আরো চরম আকার ধারন করেছে বলে জানান স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মুজিবুর রহমান মালাদার। প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।
নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক রাজা জানান, তার ইউনিয়নে সবজি বাগান, মৎস্য খামার, ঘরবাড়ি ও উঁচু জমির বোরো ফসল বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শত-শত বসত ঘরে বন্যার পানি ঢুকেছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুফি আলম সুহেল জানান, বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ইউনিয়নের নীচু এলাকার অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিল জসিম উদ্দিন সুমেন জানান, বন্যার পানি ঢুকেছে বাসাবাড়িতে। অনেক লোকজন পানিবন্দী হয়ে আশ্রয় খোজাখুজি করছেন।ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুনুর রহমান জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর এলাকায়, অফিসে ও পরিষদের অধিকাংশ বাসায়ও পানি ঢুকে গেছে। ছাতক সরকারি হাই স্কুলে সাময়িক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র্র খোলা হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে আরো বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র্র খোলা হবে বলে জানান তিনি।