ছাতকে হাতুড়ে পশু ডাক্তার হুমায়ুনের খুঁটির জোর কোথায় ?

শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে চিকৎিসা সেবায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এ উপজেলায় ৩টি পশু উন্নয়ন কেন্দ্র থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনটিই ডাক্তার বিহীন পড়ে আছে। এই সুবাদে হাতুড়ে পশু ডাক্তার সেজে পশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ভবন দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে কিছু অসাধু লোক। দীর্ঘদিন ধরে প্রাণিসম্পদ অফিসের ৬টি পদ শূন্য ও ৩টি পশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার লক্ষাধিক হাঁস মুরগী ও গবাদিপশু। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাঁস, মোরগ, কোয়েল, কবুতরসহ অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর মালিক ও ক্ষুদ্র খামারীরা। এ বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও কতৃপক্ষের টনক নড়েনি।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৩টি পশু উন্নয়ন কেন্দ্র থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনটিই ডাক্তার বিহীন পড়ে আছে। অভিযোগ উঠেছে সৈদেরগাঁও পশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ভবনে দীর্ঘদিন যাবৎ হূমায়ুন নামের এক হাতুড়ে পশু ডাক্তার স্ব-পরিবারে বসবাস করে আসছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল দুরে থাকার কারনে আবার অনেকেই চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে এই হাতুড়ে ডাক্তারের শরনাপন্ন হন। কিন্ত ভুল চিকিৎসায় ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন গবাদি পশুর মালিকেরা। সরকারী ভবনে স্ব-পরিবারে বসবাস করে কোন প্রশিক্ষন ছাড়াই ডাক্তার সেজে অবাদে চালিয়ে যাচ্ছেন ঔষধ বানিজ্য এবং হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা এই কথিত পশু ডাক্তার।

শানুর মিয়া নামে হতদরিদ্র এক কৃষকের চারটি ছাগল অসুস্থ্য হলে সৈদেরগাঁও পশু উন্নয়ন কেন্দ্রের হাতুড়ে পশু ডাক্তার হুমায়ুনের স্মরণাপন্ন হন। ৪টি ছাগলের চিকিৎসা খরছ ১২০০ টাকা লাগবে শানুরকে জানান হুমায়ুন। হতদরিদ্র কৃষক নিরূপায় হয়ে ৩শত টাকা নগদ ও বাকি টাকা দুদিন পরে পরিশোধ করবেন মর্মে চিকিৎসা করান। কিন্ত পরদিন হতদিরিদ্র কৃষকের ৪টি ছাগল একে মৃত্যু বরন করে। সাপ্তাহ দিন পর হতদরিদ্র ঐ কৃষক স্থানীয় ধারন বাজারে আসলে বাজারের গলিতে পথরোধ করে টাকা দাবি করেন সৈদেরগাঁও পশু উন্নয়ন কেন্দ্রের হাতুড়ে পশু ডাক্তার হুমায়ুন। কিন্ত কৃষকের অভিযোগ ছাগল গুলো ভ’ল চিকিৎসায় মৃত্যুবরন করেছে তাই টাকা পরিশোধে অপরগতা প্রকাশ করেন। সৈদেরগাঁও পশু উন্নয়ন কেন্দ্রের হাতুড়ে পশু ডাক্তার হুমায়ুনের ভুল চিকিৎসায় মিজান নামের আরেক হতদরিদ্র কৃষকের ৪ টি ছাগল মৃত্যুবরন করার অভিযোগও উঠে। হাতুড়ে পশু ডাক্তার হুমায়ুনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ অনেকেই।

এক যুগের অধিক সময় ধরে হাতুড়ে পশু ডাক্তার সেজে পশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ভবন দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন হুমায়ুন। প্রতারনা মাধ্যমে গবাদি পশুর ভুল চিকিৎসা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছন লাখ টাকা টাকা। সুত্র জানায়, পশু উন্নয়ন কেন্দ্রের পাশেই হুমায়ুন ক্রয় করেছেন সাড়ে ১৪ লাখ টাকায় বাসার জায়গা। তবুও হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ও পশু উন্নয়ন কেন্দ্র উদ্ধার করতে কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ায় সাধারন মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে হুমায়ুনের খুঁিটর জোর কোথায় ?

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সুত্রে জানা যায়, হাসপাতালে ১১টি পদের মধ্যে ৬টি পদ-ই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভ্যাটেরিনারি সার্জন), উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (কৃত্তিম প্রজনন), ভেটেরিনারী কম্পাউন্ডার ও এফএএআইসহ ৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি দিয়েই চলছে এই হাসপাতালের কার্যক্রম। এ উপজেলায় তালিকাভুক্ত গরু, মোরগ ও হাঁসের খামার, গবাদিপশুর সংখ্যা বিষয়ে কোন তথ্যই জানা যায়নি। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই।

জানা যায়, এ হাসপাতালে কৃত্তিম প্রজনন, ছাগলের ঠান্ডা কাশিসহ ভ্যাক্সিন দিতে এক সময় প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১২০ জন বিভিন্ন সেবা নিতেন। বর্তমানে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে খামারি ও গবাদি পশুর মালিকরা। এ ছাড়াও উপজেলার ৩টি পশু উন্নয়ন কেন্দ্র ডাক্তার বিহীন থাকায় খামারিরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অভিযোগ উঠেছে। এলাকায় পর্যাপ্ত গবাদিপশু থাকার পরও সেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসকের অভাবে গবাদি পশুর মালিকেরা ছুটছেন হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে। আর তাদের গলাকাটা ফি’র শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ। কতৃপক্ষের অসচেতনতা ও অবহেলায় আগ্রহ হারাতে বসেছেন গবাদি পশু পালনকারীরা।

এ ব্যাপারে নাদামুর গ্রামের শানুর মিয়া বলেন, হুমায়ুনের ভুল চিকিৎসায় আমার ৪টি ছাগল মারা যায়। এর আগে ভুল চিকিৎসায় একই গ্রামের মিজান নামের একজনেরও ৪ টি ছাগল মারা যায়। সৈদেরগাঁও পশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অবস্থানরত হুমায়ুন সব সময় বলে আসছেন আমি নিয়োগপ্রাপ্ত না। তিনি ময়মনসিংহ থেকে প্রশিক্ষন নিয়েছেন। ছাতক উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানেন তিনি এই বাসায় রয়েছেন। তবে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য প্রভাবশালি একাধিক ব্যক্তির মাধ্যমে এ প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কল করে অনরোধ জানিয়েছেন হুমায়ুন।ছাতক উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিম মিয়া জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি সাড়ে ৩ মাস হয় এখানে এসেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন অবৈধভাবে থাকার বিষয়টি উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা বরাবর চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এটা পরিত্যাক্ত পশু উন্নয়ন কেন্দ্র।প ছাতক উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী সমন্নয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

You might also like