জকিগঞ্জের গ্যাস সিএনজি আকারে বাজারজাতের পরিকল্পনায় সরকার
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ দক্ষিণ বঙ্গের ভোলার পাশাপাশি জকিগঞ্জ থেকেও সিএনজি (কমপ্রেসড্ ন্যাচারাল গ্যাস) আকারে গ্যাস নিতে চায় সরকার। ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসিকে কাজ দেয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সিএনজি হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের আরেক রূপ যা ওজনে বাতাসের থেকেও হালকা। চাপের দ্বারা সংকুচিত করে, তরলে পরিণত করে ট্যাঙ্কে জমা করা যায়।
প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, পাইপ লাইন না থাকায় জকিগঞ্জের গ্যাস উত্তোলন করা যাচ্ছে না। ইন্ট্রাকোর একটি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সামনে এলে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন তাদেরকে বিস্তারিত প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবনা পেলে তারপর বলা যাবে দর কত হবে, তারা কতটুকু আনতে পারবে।
এ বিষয়ে জানার জন্য ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াদ আলীকে কল দেয়া হয়। তিনি ফোনও রিসিভ করেননি এমন কী এসএমএস দিলেও সাড়া দেননি।
সিএনজি আকারে গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি এখনও প্রমাণিত নয়। এখনও পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। দ্বীপ জেলা ভোলার শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডের উদ্বৃত্ত ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট (দৈনিক) গ্যাস সিএনজি আকারে আনতে চুক্তি করা হয় ইন্ট্রাকোর সঙ্গে। শাহবাজপুরে গ্যাসে উদ্বৃত্ত থাকলেও পাইপলাইন না থাকায় আনা যাচ্ছে না। সেই গ্যাস ইন্ট্রাকো ভোলা থেকে পরিবহন করে তিতাস গ্যাসের আওতাধীন এলাকার শিল্প-কারখানায় সরবরাহ করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেন, যেসব এলাকায় গ্যাসের সমস্যা বেশি, সেখানে এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে শুধু সরবরাহ বাড়ল না, সংকটও দূর হবে।
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসি সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১৭ টাকা (প্রতি ঘনমিটার) দরে কিনে ৪৭.৬০ টাকা দরে বিক্রি করবে। এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে। যদিও সেই সিএনজি এখনও শুরু করতে পারেনি কোম্পানিটি। সুন্দরবন কোম্পানিতে এখনও ডিমান্ড নোটের টাকা জমা করেনি। নভেম্বর নাগাদ দৈনিক ৫ মিলিয়ন সরবরাহ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি।
অন্যদিকে ২০২১ সালের জুনে সিলেটের জকিগঞ্জে গ্যাস ফিল্ডটি আবিস্কার করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। বাংলাদেশের ২৮তম গ্যাস ফিল্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এটিকে। কূপটির অভ্যন্তরে চাপ রয়েছে ৬ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) আর ফ্লোটিং চাপ রয়েছে ১৩ হাজারের অধিক। ৪টি স্তরে ৬৮ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কূপ থেকে দৈনিক ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে বাপেক্স আশা করছে। নতুন এই ফিল্ড থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বিয়ানীবাজার ও ৪০ কিলোমিটার দূরে গোলাপগঞ্জের কুপ অবস্থিত।
বাপেক্স গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার করলেও জনগণের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। সিলেট অঞ্চলের বিতরণ কোম্পানি জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লি’র (জেজিটিডিএসএল) কাছে বিক্রি করতে হবে।
জেজিটিডিএসএল মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও আইটি ডিভিশন) প্রকৌশলী এবিএম শরীফ বলেছেন, পাইপলাইন নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্ত চেয়ে কয়েকটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। পেট্রোবাংলার নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জকিগঞ্জ থেকে গোলাপগঞ্জ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার পাইপলাইনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনুমোদন পেলে ১৮ মাস সময় লাগবে পাইপলাইন স্থাপনে। পাইপ সরবরাহকারি কোম্পানি ১ বছরের মতো সময় নেবে। আর স্থাপনে ৬ মাস সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। বড় কোনো নদী নেই, সে কারণে এতে জটিলতা কম রয়েছে।
বাংলাদেশে ২৯টি গ্যাসফিল্ড আবিস্কৃত হয়েছে। এসব ফিল্ডে প্রমাণিত মজুদ ধরা হয় ২০.৫৫ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট)। সম্ভাব্য ও সম্ভাবনাময় মিলে আরও প্রায় ৮ টিসিএফ মজুদ ধারণা করা হয়।
এ যাবত প্রায় ১৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১টিসিএফ’র মতো গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। সে হিসেবে আর মাত্র ৮ বছরের গ্যাসের মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে। গত ৯ অক্টোবর দেশীয় কোম্পানির ৭০টি কূপ থেকে ৭৮৩.৯ মিলিয়ন ঘনফুট, আর আইওসির ৪৩টি কূপ থেকে ১৩০৬.৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। ওইদিন আমদানি থেকে সরবরাহ করা হয়েছে ৭৬১.২ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমরা দৈনিক কমবেশি ২২০০-২২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছি। চাহিদা রয়েছে ৪ হাজারের কাছাকাছি। আমরা দু’টি এফএসআরইউ দিয়ে দৈনিক ১ হাজার আমদানি করতে পারি। তারপরও ১ হাজারের মতো ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।