জকিগঞ্জে ভেঙে গেছে ৩ নদীর মোহনা ডাইক পৌর শহরে পানি বাড়ার আশঙ্কা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারোঠাকুরী ইউনিয়নের আমলশীদ এলাকায় বরাক মোহনায় সুরমা-কুশিয়ারা উৎসস্থলে ত্রি-গাঙের ডাইক ভেঙে গেছে। ডাইকটি ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকে উপজেলার ১টি পৌর শহরসহ ৯টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার পরে ডাইকটি স্রোতের তোড়ে ভেঙে গেছে, এমনটি জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।বারোঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসীন মর্তুজা ডাইক ভাঙার খবর এলাকায় প্রচার করেন। ডাইক ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে বারোঠাকুরী, খাসিরচক, খাইরচক, বারোঘাপ্তা, সোনাসার এলাকা রাতের মধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, ডাইক ভাঙার কারণে সুরমা-কুশিয়ারার তীরবর্তী জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও সিলেট শহরে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে জানতে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ না করায় প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে…সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরাক-সুরমা-কুশিয়ারার মোহনায় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

ভৌগলিক কারণে সিলেটের অধিকাংশ নদ-নদীর উৎস ভারতীয় অংশে। বরাক নদ আসাম প্রদেশের করিমগঞ্জ জেলা হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আমলশিদ এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহমান। সুরমা সিলেটের কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ ও সিলেট সদর হয়ে সুনামগঞ্জে গিয়ে মিশেছে, আর কুশিয়ারা সিলেটের গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ উপজেলা হয়ে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে চলে গেছে। এর বাইরে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তার পিয়াইন, ডাউকি ও সারি নদী, কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদ এবং কানাইঘাটের লোভা নদীর উৎস নদীও ভারতের মেঘালয়ে অবস্থিত। একইভাবে ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত জুড়ী নদী মৌলভীবাজারের জুড়ী ও কুলাউড়া হয়ে হাকালুকি হাওর হয়ে সিলেটে ঢুকেছে। তাই ভারতীয় অংশে প্রবল বৃষ্টি হলেই যৌথ এসব নদীর মাধ্যমে পানি বাংলাদেশে গড়িয়ে আসে। সেখান থেকে প্রবাহিত পানিতেই নদীগুলোর ছুটে চলা। এসব নদী দিয়ে পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা পানিতে কোটি কোটি টন পাথর, বালি ও মাটি আবহমান কাল ধরে এ অঞ্চলের নদ-নদী, হাওর বাওড়কে ভরাট করে দিচ্ছে। নদীকে উত্যক্ত করার কারণে এখন এর বৃদ্ধির হার সীমা লঙ্ঘন করছে। এই বালি, পাথর, নুড়ি ও মাটি শুধু নদ-নদীর তলদেশ নয় উৎসমুখও বন্ধ ও ভরাট করে দিচ্ছে। ভারতের মণিপুর রাজ্যের মাও সাংসাং থেকে উৎপন্ন বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জের আমলসীদ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা দুই শাখায় প্রবাহিত হয়েছে। এই মোহনায় দীর্ঘদিন ধরে সুরমার প্রবেশ মুখে ভরাট হচ্ছে। যার ফলে শুষ্ক মৌসুমে বরাকের পানির ৮৫ শতাংশ কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সুরমা নদী। সুরমার বুকে ওখানেই চর জেগে উঠেছে।

সিলেটের অধিকাংশ নদীই আন্ত:সীমান্ত নদী, তার মধ্যে সুরমা কুশিয়ারা অন্যতম এবং প্রধান। তাই ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে সুরমার উৎসমুখে খননের প্রয়োজনীয়তা যৌথ নদী কমিশনে সরকারকে জরুরীভাবে উত্থাপন করা উচিৎ ছিল। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন।উজানে ভারতীয় অংশেও নদীগুলোর সাথে বৈরি আচরণ চলছে। আমাদের দেশেও নদীর সাথে চলছে উন্মাদনা। বালু ব্যবসায়ী, পাথরখেকোরা ও প্রভাবশালীরা ইচ্ছেমতো খননের ফলে ডাউকি নদীসহ অনেক নদী ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে।সর্বশেষ খবর সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎসস্থল সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার আমলসীতে বরাক নদীর মোহনার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের শেষভাগে এই বাঁধ ভাঙনের ফলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি হবে সন্দেহ নেই। যথাসময়ে ভরাট হয়ে যাওয়া সুরমা নদীর উৎসে ড্রেজিং না করার ফলে আজ পানির চাপে প্রতিরক্ষা বাঁধটি ভেঙ্গে গেল। এখন মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে আর নেতারা প্রমোদ ভ্রমণ করবেন, দুর্গত মানুষকে রিলিফ বন্টনের নামে…! পর্যায়ক্রমে সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যার পরিণতি দেশের অধিকাংশ এলাকায় গড়াবে।

You might also like