জগন্নাথপুর শেষ হয়নি নলজুর নদী খনন চলছে বিল তুলে নেয়ার পাঁয়তারা
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ জগন্নাথপুরে দ্বিতীয় পর্যায়েও নলজুর নদী খনন কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে, নদীতে পানি চলে আসায় নলজুর নদী খনন শেষ করতে না পারলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি কাজ শেষ হয়ে গেছে। কাজ শেষ না করেই চলছে এখন বিল তুলে নেয়ার পাঁয়তারা।পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেশন টেক লিমিটেড সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীখনন কাজ শুরু করে। কাজ চলাকালে অপরিকল্পিত খনন ও খনন কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ওই বছরের ১৩ এপ্রিল কাজ বন্ধ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন পালিয়ে যায়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি বিল তুলে নেয় ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।পরবর্তীতে চলতি বছরের ৫ মার্চ থেকে আবারও কাজ শুরু করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নতুন করে ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দে ১ হাজার ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩৩ ফুট প্রস্থে খনন ও মাটি সরানোর কাজ শুরু করে। গত ২ এপ্রিল আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে নলজুর নদীতে পানি চলে আসায় খনন কাজ শেষ হওয়ার আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে খনন যন্ত্র নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে যায়।
জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের আহবায়ক নুরুল হক বলেন, প্রথম পর্যায়ে যৎসামান্য কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাউবোর সাথে যোগসাজশে আড়াই কোটি টাকা বিল তুলে নেয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ৩০০ মিটারের মধ্যে সর্বোচ্চ তিন থেকে চারশত মিটার কাজ করে নদীতে পানি চলে আসায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমবারের মত এবারও চলছে বিল তুলে নেয়ার পাঁয়তারা।হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, নলজুর নদী অপরিকল্পিতভাবে খননের নামে লুটপাট করা হচ্ছে। আমাদের দাবি উচ্চপর্যায়ে তদন্ত না করে বিল পরিশোধ না করতে। এছাড়া, অপরিকল্পিত খননে নদীর পাড়ে থাকা বেশ কয়েকটি বিদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে। ফলে যেকোন সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।জগন্নাথপুর নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক যুক্তরাজ্য প্রবাসী এম এ কাদির বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অপরিকল্পিতভাবে খনন করতে গিয়ে নলজুর নদীতে ডাকবাংলো সেতুর দু’টি পিলারের ৬০ ফুট অংশ দেবে গেছে। ফলে, সেতুটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর দায়ভার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পাউবো এড়াতে পারে না। তদন্তপূর্বক বলিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব বলেন, বিলম্বে কাজ শুরু করা ও আগাম বন্যার কারণে খনন কাজ শেষ না হওয়ায় নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। নদী খননে অনিয়ম ও লুটপাট তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি।ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেশন টেক এর প্রকল্প প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, নলজুর নদীতে পানি আসলেও পানি আটকিয়ে বাঁধ দিয়ে আমরা ডিজাইন অনুযায়ী কাজ শেষ করেছি।পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইসরানুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খনন কাজ শেষ করছে বলে দাবি করছে। পাউবো’র টাস্কফোর্স জরিপ করে কী পরিমাণ খনন কাজ হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার পর বিল দেয়া হবে।তিনি বলেন, নলজুর নদীর ডাকবাংলো সেতু এলাকায় খনন কাজ করা হয়নি। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ওই অংশে খনন না করতে বলেছি।