জনগণের ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ না খেলে: প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার আলোক বর্তিকাবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে অতন্ত্র প্রহরীর মত বাংলার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে বলেছেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনও কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে জন্য অতন্ত্র প্রহরীর মত বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতা-কর্মী-সেটাই আমি চাই।তিনি আওয়ামী লীগকে মূল্যবান হীরক খন্ডের সঙ্গে তুলনা করে বলেন,‘আওয়ামী লীগকে বলবো হীরার টুকরা। যতবার কেটেছে ততবার আরো জ¦ল জ¦ল হয়েছে এবং আরো নতুন ভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ বিশে^ একটা মর্যাদা পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে আওয়ামী লীগের ৭২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রিয় সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভার সভাপতিত্বকালে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যাভেনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভার প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই আওয়ামী লীগ অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছে, অনেক চড়াই উৎড়াই, বন্ধুর পথ পার হয়েছে। আজকে আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই মানুষের ভাগ্য পরিবতর্’ন হচ্ছে। এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনও কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে জন্য অতন্ত্র প্রহরীর মত বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতা-কর্মী-সেটাই আমি চাই।আওয়ামী লীগকে একটা প্রবীণ ও ঐতিহ্যবাহী দল আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশের মানুষের অন্ন,বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন মৌলিক চাহিদাগুলোর সংস্থানের সুযোগ আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে জনগণ আবার বঞ্চিত হবে। কাজেই তাঁরা যেন আর বঞ্চনার স্বীকার না হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এবং তিনি ’৮১ সালে দেশে আসার পরও বেশ কয়েকবার আওয়ামী লীগ ভাঙ্গার নানা প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগকে বলবো হীরার টুকরা। যতবার কেটেছে আরো জ¦ল জ¦ল হয়েছে এবং আরো নতুন ভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে। কাজেই এই সংগঠনকে ধ্বংস করার যে যতই চেষ্টা করুক পারেনি, পারবেনা। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ আজকে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে গিয়ে বিশে^ একটা মর্যাদা পেয়েছে।’ তিনি এই সময় আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি তাঁকে এবং আওয়ামী লীগ বারবার ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ায় দেশের জনগণকেও কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেন। জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাঁরা ভরসা করেছিল বলেই আমরা টানা তৃতীয় বারের মত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় দীর্ঘ সময় হাতে পেয়েছি। দেশকে সুন্দরভাবে সাজানোর যেমন সুযোগ পেয়েছি তেমনি দেশের দু:খী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার একটা সুযোগ পেয়েছি। আজকে করোনাভাইরাস আমাদের কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে সত্য কিন্তু এই অবস্থা থেকেও ইনশাল্লাহ আমরা উত্তোরণ ঘটাতে পারবো। তিনি এ সময় কোভিড-১৯ টিকা প্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ মাস্ক ব্যবহার করা, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়গুলোও পুণরায় দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন এবং অবশ্যই পালনের আহবান পূনর্ব্যক্ত করেন।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন। আলোচনা সভায় আরো বক্তৃতা করেন দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি এবং এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর এবং দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের ৭২ বছর পূর্তিতে ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চার দশক: সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক’ শীর্ষক আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি প্রকাশিত এবং দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ সম্পাদিত একটি বইয়ের মোড়কও অনুষ্ঠানে উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরআগে অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবসহ ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
করোনার মধ্যেও বাজেটের আকার না কমিয়ে তাঁর সরকার ৬ লাখ কোটি টাকারও বেশি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন,‘জাতির পিতা এদেশটাকে সাজাতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেন নাই। তাঁর সেই অসমান্ত কাজকে আমাদের সমাপ্ত করতে হবে। তারজন্য আওয়ামী লীগকে সবসময় সচেতন থাকতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে, সুখে দু:খে সাথী হতে হবে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।এজন্য আওয়ামী লীগের মুলশক্তি তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন সংগঠনের সভাপতি। তিনি বলেন, তৃণমূল থেকেই সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। করোনার কারণে আমাদের কাউন্সিলগুলো আমরা করতে পারছিনা তারপরেও সংগঠন যাতে শক্তিশালী হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কেননা এদলই পারবে এদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ও চিন্তা, সেটা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। সেটাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নাম মুছতে চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন সৃষ্টি হয়, তখন থেকেই মুসলিম লীগ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এবং খালেদা জিয়া প্রত্যেকে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। কত মানুষকে হত্যা করেছে, সামরিক বাহিনীর সদস্য আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। লক্ষ্য একটাই আওয়ামী লীগকে শেষ করা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেনো? আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছে বলে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে গরিব দুঃখী মানুষের পেটের ভাত হয়, মাথাগোজার ঠাঁই পায়, চিকিৎসা পায়, লেখাপড়ার সুযোগ পায়- এটা বোধহয় কিছু শ্রেণির পছন্দ নয়। শেখ হাসিনা বলেন, এই সংগঠন মাটি ও মানুষ থেকে উঠে এসেছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে মুসলিম লীগ সরকারের বিরোধিতা করে এ সংগঠন গড়ে উঠেছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেই সংগঠনকে এতো সহজে শেষ করে দেয়া যায় না। সাময়িক আঘাত আসে, এটা ঠিক।
ভ্যাকসিন নিয়ে যারা সমালোচনা করেন, তাদের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সবার আগে টিকা নিয়েছেন, তারাই এখন সমালোচনা করছেন। তিনি বলেন, সমালোচনার আগে বিশ্বের পরিস্থিতি বুঝতে হবে। যে টিকা চার ডলারে সরকার কিনেছিল, সেটা ১৫ ডলারে কিনতে হচ্ছে। সামনে আরো দাম বাড়ার ও আশংকা ব্যক্ত করেন তিনি। তাঁর সরকার টিকা সংগ্রহের বিষয়ে আগেই সব ঠিক করে রাখলেও এটা আন্তর্জাতিক বিষয় এবং সরকারের হাতে সবকিছু নেই বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে গবেষণা করে টিকা তৈরির জন্য সব প্রস্তুতি তাঁর সরকার নিচ্ছে। ইনস্টিটিউট তৈরি করার ব্যবস্থা নিচ্ছে। কাজেই যারা সমালোচনা করছেন, তারা যেন আগে দেখেন যে তাঁর সরকার কি করতে পারে।ভারত থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে টিকা নিয়ে আসছি। ভারতের যখন মহামারি ব্যাপকহারে শুরু হলো, তখন তারা রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় আমরা কিছুটা বিপাকে পড়েছিলাম। এখন আবার ক্রয় শুরু করেছি। প্রতিটি মানুষ যেন ভ্যাকসিন পায় তার ব্যবস্থা আমরা পর্যায়ক্রমে নিচ্ছি এবং সেটা আমরা করবো।
করোনা সবচেয়ে বেশি তাঁকেই বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মর্মে আক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সফল হওয়ায় ভার্চুয়ালি কিছু অনুষ্ঠান করতে পারছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার করোনা সত্বেও অর্থনীতির গতিকে ধরে রাখার চেষ্টায় কিছুটা হলেও সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। তিনি বলেন, লক্ষ্য হয়তো পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু আমার সব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভালো আছে, থাকবে।প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নের বিষয়ে বহি:বিশে^ শুভানুধ্যায়ীদের এটাকে ম্যাজিক বলে প্রশংসা করার প্রসংগ টেনে বলেন, উন্নয়নে কোনো ম্যাজিক নেই। এটা একটা দর্শন, আদর্শ। আমরা গ্রামকে গুরুত্ব দিয়ে সেখান থেকে শুরু করেছি, যেটা জাতির পিতা চেয়েছেন। সেইভাবে কাজ করছি বলে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, শুধুমাত্র সরকার দিয়ে সব হয় না। পাশে শক্তিশালী সংগঠন লাগে। আজকে যতোটুকু অর্জন সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ সঙ্গে ছিল বলেই আমরা করতে পেরেছি।