জন্মদিনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর আলোচনা অনুষ্ঠান: বঙ্গমাতা ইতিহাসের সাহসী মানুষ
ঢাকা করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী
ঢাকা: ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর জন্মদিন উপলক্ষে সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা অনুষ্ঠান। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সকাল ১১টায় আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান এম.পি। সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর আহবায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এর সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবনের নানান দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন, ইতিহাসবিদ ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. বিমান বড়ুয়া ও সাবেক ছাত্রনেতা মিহির কান্তি ঘোষাল প্রমূখ।
আলোচনায় বক্তাগণ বঙ্গমাতাকে বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রেরণাদায়ী হিসেবে অভিহিত করেন। রাজনীতির কারনে অধিকাংশ সময় বঙ্গবন্ধু জেল অথবা বাড়ির বাইরে থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে পরিবারের সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতেন বঙ্গমাতা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনৈতিক জীবনের অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বঙ্গমাতা রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বঙ্গবন্ধুর জীবনের অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেপথ্যে থেকে প্রেরণাদান করতেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। মাত্র ৩ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর সাথে গাঁটছড়া বেঁধে আমৃত্য বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন এই সাহসী মানুষটি।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মাননীয় মন্ত্রী এম. এ. মান্নান তাঁর বক্তব্যে বলেন, বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী। তিনি বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছেন, আমার দুটি শক্তি একটি আত্মবিশ্বাস আর একটি রেনু। তিনি আরও বলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, তাঁর সহধর্মীনি বঙ্গমাতা ও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনজনই চেতনায় বাংলার মাটি ও মানুষের কাছাকাছি অবস্থান করেন। তাই তাদের নেতৃত্বগুনে আজকের বাংলাদেশ। এখানে বিপদ যতই আসুক না কেন বাংলাদেশ কখনও পথ হারাবে না। এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য মাননীয় মন্ত্রী সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও তার আহবায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান।
আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের কঠিন কিছু মুহুর্তে বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে গুরুত্বপূর্ন পরামর্শ প্রদান করেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ৭ মার্চ এর ভাষণ দেয়ার দিনের কথা। গায়ে প্রচন্ড জর নিয়ে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্সে যাওয়ার আগ মুহুর্তে বঙ্গমাতা ঘরের দরজা বন্ধ করে জাতির পিতাকে বলেছিলেন, ‘‘আপনি আন্দোলন করেছেন জেল খেটেছেন। আপনার মন জানে কোনটা মঙ্গল। তাই মঞ্চে দাড়িয়ে আপনার মন যা বলতে বলবে ভাষনে আপনি তাই বলবেন।’’ তাছাড়া আগরতলা মামলায় পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দিলে বঙ্গমাতা দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাক্ষান করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দেন। জাতির ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তনের কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বঙ্গবন্ধুকে ছায়াসঙ্গী হিসেবে সাথে থেকেছেন বঙ্গমাতা।আলোচকদেও ব্যক্তিগত স্মৃতিচারনেও উঠে আসে বঙ্গমাতা ও ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ির অনেক সহজিয়া ঘটনা।
অধ্যাপক বঙ্গবন্ধু চেয়ার ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন তার বক্তৃতায় বঙ্গমাতাকে একজন মহিয়সী নারী হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছায়াবৃক্ষ ছিলেন বঙ্গমাতা। বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে চিরদিন বিরাজ করতেন এই মহিয়সী নারী। বঙ্গবন্ধুর যাই করতেন তার পেছনে শক্তি হিসেবে কাজ করতেন বঙ্গমাতা।
আলোচনায় শহীদ জায়া শ্যামলী নাসিরন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ৩২ নাম্বার এর বাড়ি ও সেই বাড়িতে বঙ্গমাতার সাথে তার ব্যক্তিগত স্মৃতিকথা আলোচনায় তুলে আনেন। শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী আরও বলেন, বঙ্গমাতা প্রকৃত পক্ষে বঙ্গবন্ধুর সবকাজের সহযোদ্ধা ছিলেন। বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পরম নির্ভরতা ও আশ্রয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি মাহফুজা খানমও আবেগঘন কন্ঠে বঙ্গমাতার সাথে তার ব্যক্তিগত স্মৃতিকথা তুলে ধরেন। বঙ্গমাতা মুক্তিযুদ্ধের পরে বীরঙ্গনা নারীদের নিজের সন্তানের মর্জাদা দিয়েছেন। নিজে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং সন্তানদের দত্তক দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। মাহফুজা খানম উল্লেখ করেন এসব ঘটনার তিনি প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী।