জলবায়ু মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়: যুক্তরাজ্য
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
বাংলাদেশঃ বাংলাদেশের জলবায়ুু অভিযোজন প্রচেষ্টাকে বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক পরিবেশমন্ত্রী লর্ড গোল্ডস্মিথ জলবায়ুু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাথে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ জলবায়ুু পরিবর্তনের দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ুর প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং সহিষ্ণুতা তৈরি করতে এখানে (বাংলাদেশ) যে কাজ হচ্ছে তা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।শনিবার (২৯ আগস্ট) ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়েছে, জলবায়ুু পরিবর্তন মোকাবেলায় অভিযোজন ও সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্যের সাহায্য করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার জন্য গত ২৫ আগস্ট তিনি বাংলাদেশে ভার্চুয়াল সফর করেন।যুক্তরাজ্য আগামী বছর তার অংশীদার ইতালির সাথে গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ুু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৬ আয়োজন করবে। এদিকে, বাংলাদেশ ২০২০-২০২২ মেয়াদে ক্লাইমেট ভালনেরেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং অর্থমন্ত্রীদের ভালনেরেবল টোয়েন্টি (ভি ২০) গ্রুপের সভাপতিত্ব করছে।যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী বলেন, কপ-২৬ এর সভাপতি হিসাবে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে জলবায়ুু পরিবর্তন মোকাবেলার পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান উপস্থাপনের জন্য উচ্চাকাঙ্খী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করছি।
তিনি উল্লেখ করেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের অভিযোজন প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে পেরে যুক্তরাজ্য গর্বিত। লর্ড গোল্ডস্মিথ ক্লাইমেট ভালনেরেবল ফোরামের (সিভিএফ) নবনিযুক্ত থিম্যাটিক এম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ করেন।বৈঠকে তারা কপ-২৬ অনুষ্ঠান চলাকালে অভিযোজন ও সহিষ্ণুতার বিষয়ে বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্খা বাড়াতে ফোরামের ভূমিকা পালনের সুযোগ কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং একজন দক্ষ বক্তা ও লেখক।লর্ড গোল্ডস্মিথ এ সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সাথেও বৈঠক এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানির জন্য বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মধ্য দিয়ে কয়লা প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী বাংলাদেশের সিভিএফ প্রেসিডেন্সির বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান সংহতকরণ উৎসাহিত করতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কর্মরত জলবায়ুু পরিবর্তন ও উন্নয়ন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সালীমুল হকের সাথেও বৈঠক করেন।বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন আলোচনা সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ুু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমরা কীভাবে যৌথশক্তি হিসাবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একসাথে কাজ করতে পারি, এবং বিশ্বকে মহামারী থেকে আবার আরো সবুজতর করতে সহায়তা করতে পারি সে সম্পর্কে তারা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, কপ-২৬ ও সিভিএফ চেয়ার হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।বন্যার কারণে বাংলাদেশের গ্রাম ও শহর অঞ্চলে লোকজন যখন বাস্তুচ্যুত হয়েছে এমন সময় এ ভার্চুয়াল সফরকালে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী বাংলাদেশের কৃষি, স্বাস্থ্য ও জীবিকার ওপর জলবায়ুু পরিবর্তনের প্রভাব অবলোকন করেন।লর্ড গোল্ডস্মিথ এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে প্রকৃতির বিরুদ্ধে নয় বরং প্রকৃতির সাথে কাজ করে কিভাবে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান বের করা যায় তার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনটি প্রধান নদীর বদ্বীপে গড়ে ওঠা ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ জলবায়ুু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। জনসংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশি ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকির মুখে রয়েছে এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ।সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থার সুবিধা প্রদান এবং বর্ষাকালীন বন্যা থেকে ৪০,০০০ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রক্ষাসহ জলবায়ুু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশকে জলবায়ু অভিযোজন ও সহিষ্ণুতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় সহায়তা প্রদান করেছে।