জামাত-বিএনপি‘র নৈরাজ্য ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে ২৯ জুলাই হাউজ অব কমন্সের সামনে সমাবেশ

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের
সংবাদ সম্মেলন

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: কোটা বিরোধী আন্দোলনকে পুঁজি করে বাংলাদশে জামাত-বিএনপি‘র দেশব্যাপী সহিংসতা ও দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, বিদেশ থেকে তারেক রহমানসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের অপপ্রচার এবং আগামী ২৯ জুলাই সোমবার যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে লন্ডনে হাউজ অব কমন্সের সামনে সর্বস্থরের ব্রিটিশ-বাঙ্গালীদের সমাবেশ সফল করতে ২৭ জুলাই শনিবার লন্ডন সময় সন্ধ্যা সাতটায় পূর্ব লন্ডনের ২৩০ কমার্শিয়াল রোডের একটি টার্কিশ রেষ্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলী। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামীলীগ-যুবলীগ,ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়মীলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি, প্রবীন রাজনীতিবিদ সুলতান মাহমুদ শরীফ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক

লিখিত বক্তব্যে ,সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে বাংলাদেশে গত প্রায় এক মাস ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আপনারা নিশ্চয়ই জানেন এবং বুঝেন। ২০১৮ সালে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এক নির্বাহী আদেশ বলে কোটা প্রথা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেন। পরবর্তীতে এই বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু সন্তান। হাইকোর্ট তাদের পক্ষে রায় দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। এই আপিলের শুনানির প্রক্রিয়া যখন চলছিলো ঠিক সেই মুহুর্তে দেশদ্রোহী কুচক্রীদের প্ররোচনায় আন্দোলনকারীরা সরকারকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলে। অথচ কোটার ব্যাপারে আন্দোলনকারী আর সরকারের অবস্থান কিন্তু সময়ে অভিন্ন ছিলো।

সৈয়দ ফারুক বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, যখনই পেছন থেকে ইন্ধন দাতারা সামনে চলে আসে তাদের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের দুরভিসন্ধি হাসিল করার জন্য, তখনই আন্দোলনের নেতৃত্ব তাদের হাতে চলে যায় কিংবা তারা নিয়ে নেয়, সরকারের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়দের সাথে আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের বৈঠকের সময় তারা নিজেরাই তা স্বীকার করেছেন।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লী সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলনের নেতৃত্ব অপশক্তির হাতে চলে যাওয়ার পর  শুরু হয় সেই ২০১৩  এবং ২০১৮ সালের কায়দায় ধ্বংসলীলা। দেশ জাতির স্বার্থে সরকারের তখন শক্ত হাতে এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা। তাদের এইপোড়ামাটিক্যাম্পেইন যখন চুড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায় তখন সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে বাধ্য হয়। প্রথমে পুলিশ, তারপর বর্ডার গার্ড, তারপর রেব এবং সর্বশেষ পর্যায়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সরকার, আপনারা নিশ্চয়ই তা খেয়াল করেছেন।

সৈয়দ ফারুক বলেন, দুষ্কৃতিকারীদের এই তান্ডব সামাল দেয় সেনাবাহিনী সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকল মৃত্যুই বেদনাদায়ক, সেটা হউক ছাত্রের, হউক রিক্সা শ্রমিকের, হউক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিংবা সাধারণ পথচারীর। যে ধ্বংসলীলা জামাতবিএনপি আর জঙ্গিরা করেছে তা যেকোনো স্বাভাবিক মানুষেকে মূঢ় করে দেবার জন্য যথেষ্ট। মানুষ হত্যা করে গাছে কিংবা ফ্লাইভারের উপর থেকে লটকে দেবার মতো পাশবিকতা তাদের ২০১৩/২০১৮ সালের কথা মনে করিয়ে দেয়। তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে যারাই মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের সকলের দায়দায়িত্ব নেবার ঘোষনা দিয়েছেন এবং ইতোমধ্যেই আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে আন্দোলনকে রক্তাক্ত করবার জন্য। আপনারা নিশ্চয়ই তাদের শ্লোগানের ভাষা শুনেছেন যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল মানুষকে বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে বিস্মিত করেছে।

তিনি বলেন, বাঙালির হাজার বছরের সবচেয়ে বড়ো অর্জন আমাদের স্বাধীনতা, তারা সেই স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করেছে। সরকারের দায়িত্ব এই দুষ্কৃতকারীদের দমন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই কাজটিই করছেন এবং তারজন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে তিনি প্রস্তুত। একটি গনতান্ত্রিক, অগ্রসর জাতি এবং দেশ গঠনে আমরা যখন অনেকটা পথ এগিয়ে গেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে, ঠিক তখনই তারা অতীতের মতো তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করেছে, এগিয়ে যাওয়ার বাংলাদেশকে ধ্বংস স্তুপে পরিনত করবার জন্য। আপনারা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন যে তাদের আক্রমণের টার্গেট ছিলো গত পনেরো বছরে আমাদের যতো অর্জন যা বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে, সেই সব স্থাপনাগুলো।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আপনারা আরেকটি ব্যাপার নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগ পূর্ব লন্ডনের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এক সভার আয়োজন করে। কিন্তু রক্তপিপাসু তারেক জিয়ার লেলিয়ে দেয়া পেটুয়া বাহিনীর হাত থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরও রেহাই পায়নি। দেশে যেমন হাজার হাজার কোটি টাকা খরছ করে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছে, বৃটেনের মতো একটি গনতান্ত্রিক দেশেও দুর্নীতির বরপুত্র তারেক একই কায়দায় কমিউনিটিকে অশান্ত করে তুলছে যা বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আপনারআমার সকলের জন্যই লজ্জার।

সৈয়দ ফারুক বলেন, আমরা, আপনাদের সাহায্য চাই, এই দেশ আমাদের সকলের। ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুলক্ষ মাবোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা কে রক্ষা করে একটি গনতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের অঙ্গীকার। আপনারা সমাজের বিবেক, আপনারাই পারেন এই ক্রান্তিলগ্নে ন্যায় এবং সত্যের পথে দাঁড়িয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার গৌরব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সাহায্য করতে। পরিশেষে, এই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে যারাই মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আপনারা আপনাদের মুল্যবান সময় আমাদেরকে দিয়েছেন, এইজন্য আবারও আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহসভাপতি জালাল উদ্দিন, সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, হরমুজ আলী, যুগ্মসম্পাদক নইমুদ্দিন রিয়াজ, মারুফ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আ.স. ম. মিসবাহ, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক সারব আলী, তথ্যও গণসংযোগ সম্পাদক রবিন পাল, প্রচার সম্পাদক মাসুক ইবনে আনিস, দপ্তর সম্পাদক শাহ শামীম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ছুরুক আলী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কাওছার চৌধুরী, খসরুজ্জামান ষকরু, আনসারুল হক, মোহাম্মদ হাসান, যুক্তরাজ্য রাজ্য মহিলা আওয়ামীলগের সিনিয়র সহসভাপতি আঞ্জু মান আরা অঞ্জু, যুবলীগের সেক্রেটারী সেলিম আহমদ, খান, ছাত্র লীগের সভাপতি তারেক আহমদ, সেক্রেটারী সজীব ভূইয়া সহ আরো অনেকে।

এসময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন একই দিন এবং একই সময়ে ১০ নং ডাউনিং ষ্ট্রীটের সামনে সমাবেশ ডেকেছে জামাত-বিএনপি, দূরত্ব মাত্র ৪০০গজ, যদি কোন হাঙ্গামা হয়? এর উত্তরে আওয়ামীলীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ বলেন, আওয়ামীলীগ শান্তিতে বিশ্বাসী কেউ হামলা করলে ব্রিটিশ পুলিশ দেখবে।

লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারী বাংলাদেশে হামলার জন্য সরকারকে দায়ি করে যে বিবৃতি দিয়েছে এব্যাপারে ভোরের কাগজের প্রতিনিধি আজিজুল আম্মিয়া প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সেক্রেটারী সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন তা আমরা দেখিনি, কেন দেখবেননা আরেকজন সিনিয়র সাংবাদিক প্রশ্ন করলে এর উত্তরে যু্ক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহসভাপতি হরমুজ আলী বলেন, জানি এবং দেখেছি –তবে তাদের উচিত ছিল আমাদের সাথে যোগাযোগ করা বা পুরো বিষয় অবগত হয়ে এজাতীয় বিবৃতি দেয়া, ব্রিটেন একটি গণতান্ত্রিক দেশ তারা দিতেই পারেন।

You might also like