জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নাসিম: চলছে সিঙ্গাপুর নেয়ার প্রস্তুতি
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর ব্রেন স্ট্রোক করা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।গত এক সপ্তাহ ধরে তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।ডিপ কোমায় থাকা নাসিমকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে।তার সেরে উঠা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছেন ডাক্তাররা।তিন তিনটি নমুনা পরীক্ষায় নাসিমের দেহে করোনার জীবানু ধরা পড়েনি।তিনি এখন পুরোপুরি করোনামুক্ত নাসিম।করোনামুক্ত হলেও নাসিমের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।অস্ত্রোপচারের পর প্রথম ৭২ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে নাসিমের জ্ঞান ফেরেনি। পরে তাকে আরও ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তাররা। তবুও তার স্বাস্থ্যের ন্যূনতম উন্নতি হয়নি।প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অচেতন নাসিম, কোনো সাড়া নেই।
জানা গেছে ম্যাসিভ ব্রেন স্টোকের পর সফল অস্ত্রোপচার হলেও এখনও তার মাথার ভেতরে বেশ কিছু রক্ত জমাট বেঁধে আছে।স্ট্রোকের পর থেকেই তিনি অচেতন অবস্থায় আছেন।সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশে সর্বোচ্চ ট্রিটমেন্ট দেয়া হচ্ছে।দুই দফায় গঠন করা হয়েছে মেডিকেল বোর্ড। সেখানে রয়েছেন দেশসেরা ডাক্তাররা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত তার স্বাস্থ্যের খোজ নিচ্ছেন।আইসিইউতে তাকে সবচেয়ে নিরাপদ সেবা দেয়া হচ্ছে।এতকিছুর পরও গত এক সপ্তাহে তার স্বাস্থ্যের কোনো পরিবর্তন নেই।এক বারের জন্যও জ্ঞান ফেরেনি। তাকে লাইফসাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে।এমতাবস্থায় তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে চিকিৱসা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।নাসিমের পরিবার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মোহাম্মদ নাসিমের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বুধবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের অবস্থা স্থিতিশীল। পরিবার চাইলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে বিদেশে নিতে পারে।এরই মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হলেও কোনো ফলাফল আসেনি। দেশের চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করে পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এখানকার চিকিৎসকরা ছাড়পত্র দিলে তবেই তারা সিঙ্গাপুর নেয়ার চিন্তা করবেন।নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টা তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রেখে শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তা শুক্রবার শেষ হবে।
মোহাম্মদ নাসিমের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, আব্বার অবস্থা এখনও অপরিবর্তিতই আছে।আগের চেয়ে খারাপ হয়নি কিন্তু ভালোও হয়নি।মেডিকেল বোর্ড আরও ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখবে। সেই সময় পরশু (শুক্রবার) শেষ হবে। এরপর হয়তো আবার বোর্ড মিটিং করবে। সব কিছু দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের বাইরে নেয়ার একটা চিন্তা তো আছেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও ছিল।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। কিন্তু এটার এখনও কোনো ফলাফল আসেনি বলেও জানান তিনি।
দেশের চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করে জয় আরও বলেন, এখানে যে চিকিৎসা হচ্ছে, তা আব্বাকে স্থিতিশীল রাখতে পেরেছে। তাই চিকিৎকরা যদি ছাড়পত্র দেন, আর তারা যদি মনে করেন দেশের বাইরে নেয়া যাবে তাহলে আমরা সেটা চিন্তা করব। তার আগে সেই চিন্তা করছি না। কারণ আব্বার যে অবস্থা, এর মধ্যে আম্বুলেন্সে তুলতে হবে, সেখান থেকে এয়ার আম্বুলেন্সে তুলতে হবে। আবার সাড়ে ৪ ঘণ্টার ফ্লাইট। তাছাড়া এখানকার চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।
মোহাম্মদ নাসিমের চিকিৎসায় গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, উনার অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন, অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। উনাকে দেশের বাইরে নেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে আমি এখনও কিছুই জানি না। বর্তমান শারীরিক অবস্থায় তাকে দেশের বাইরে নেয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাইলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেয়া সম্ভব।
প্রসঙ্গত, রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে ১ জুন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। ওই দিনই তার করোনা শনাক্ত হয়। ৪ জুন তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও ৫ জুন ভোরে তিনি ব্রেণ স্ট্রোক করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। এরপর দুই দফায় ৭২ ঘণ্টায় করে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত দেয় মেডিকেল বোর্ড।এর মধ্যে গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হলে মোহাম্মদ নাসিমের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।মোহাম্মদ নাসিম বর্তমান সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রও তিনি।২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।