ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে পারাপারে দুর্ভোগে জগন্নাথপুর উপজেলাবাসী

সিলেট অফিস 
সত্যবাণী
দেবে যাওয়া ভাঙাচুরা একটি সেতুই এখন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার লাখো মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। সেতুটি হচ্ছে উপজেলা সদরের ডাকবাংলো সেতু। ছোট এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে প্রতিনিয়ত শ’-শ’ যানবাহন চলাচল করছে। যানবাহনের চাপে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে এটি। যে কোন সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা। এরই মধ্যে পারাপার হতে গিয়ে, এক শিশুসহ ২ পথচারি সেতু থেকে নিচে পড়ে আহত হন।
সরেজমিন পরিদর্শন করে জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নলজুর নদীর ডাকবাংলোর সামনের সেতুর দু’পাড়ে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। সেতুর সংযোগ সড়কের দু’পাশে যানবাহন আটকে থাকে। একপাশের যান পারাপার শেষ হলে পর্যায়ক্রমে অপর পাশের যান চলাচল করছে। এ কারণে দু’পাড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সেতুটি ছোট হওয়ায় একসঙ্গে যানবাহন আসা-যাওয়া করতে পারে না। যানবাহনের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ পথচারিরা পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছেন। ভয়ংকর ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে সকলকেই।
সেতু পারাপারের সময় হাসিনা বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, সেতু পারাপারের সময় বুকটা ধড়পড় করে। কখন গাড়ি ওঠে যায়, কিংবা পা পিছলে যদি নিচে পড়ে যাই। এই ভয়ে বুকটা কাঁপতে থাকে।
আরেক পথচারী হারুন রাশিদ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু এলাকায় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করলে জনদুর্ভোগ অনেকটা কমবে। সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান বিষয়টি নজরে নেয়ার জন্য।
এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান জানান, নদীর দু’পাড়ের কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন এখন ডাকবাংলোর সেতু। সদরের খাদ্য গুদামের পুরোনো সেতু ভেঙে দিয়ে নতুন সেতুর কাজ চলছে। এ সেতুর পাশে ইতিপূর্বে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। এটির অবস্থায়ও ভালো নয়। বৃষ্টির দিনে চলাফেরা দুরূহ। সদরের আরেকটি বিকল্প সেতু প্রায় একমাস থেকে পানিতে নিচে। তিনি বললেন, সব মিলে ‘ভাঙাগড়ার’ জীবনে আমরা অতীষ্ঠ।
এলাকাবাসী ও এলজিইডি সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খাদ্য গুদামের সামনে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি টেকসই থাকলেও একসঙ্গে বড় দু’টি যান চলাচল করতে না পারায় পুরোনো এ সেতু ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগে নেয়া হয়। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের প্রচেষ্টায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালের ২৬ মার্চ দৃষ্টিনন্দন আর্চ সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বর্তমান এমপি এমএ মান্নান এটি উদ্বোধনের পরপরই নতুন সেতুর কাজ শুরু হয়। কাজটি পান কিশোরগঞ্জের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও শেষ হয়নি ৫০ ভাগ কাজও। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণে কাজ চলছে ধীরগতিতে।
নির্মাণাধীণ সেতুর পাশে ওই সময় বিকল্প হিসেবে হেলিপ্যাড এলাকায় একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি তৈরির সময় এলাকার লোকজন বর্ষায় এটা ডুবে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আরও উঁচু করার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে না নেয়ায় ভারী বর্ষণ ও ঢলের পানিতে সেতুটি তলিয়ে যায়।
অপরদিকে ১৯৮৮ সালে এলাকাবাসী ও বাজার ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চাঁদা তুলে নলজুর নদীর ওপর ডাকবাংলোর সামনে সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সেতুর কাজ শেষ হয়। ২০২১ সালে নলজুর নদী খননকালে সেতুর পিলারের কাছ থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটিকাটার সময় সেতুর দু’টি অংশ দেবে যায়। এক বছর যান চলাচল বন্ধ থাকার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জগন্নাথপুর পৌরসভা সেতুর দেবে যাওয়া অংশে স্টিলের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি চালু করা হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোহবার হোসেন বললেন, ঝুঁকিপূর্ণ ডাকবাংলো সেতুর চাপ কমাতে ট্রাফিক পুলিশ ও অতিরিক্ত আনসার সদস্য নিয়োগ করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। সদরের অপর নতুন সেতুটির কাজ পুরোদমে এখন চলছে। আগামী ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শেষ হবে।
এছাড়াও বন্যার পানি কমে গেলে শহরের বিকল্প বেইলি সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। তাতে দুর্ভোগ অনেকটা কমে যাবে।

You might also like