ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব
মোস্তফা কামাল মিলন
সত্যবাণী
লন্ডন: বৃটেনস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের সাংস্কৃতিক শাখা, গত ৫ই মার্চ রোববার ১৪২৯ বঙ্গাব্দের বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছিল। জায়গাটা ছিল রেডব্রিজ কাউন্সিলের, দ্য ড্রাইভ, IG1 3PS এ অবস্থিত ক্র্যানব্রুক চিলড্রেন সেন্টার। এ দিন বেলা একটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত চলা এ অনুষ্ঠানে প্রধানতঃ সংগঠনের সদস্য, তাদের পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধব এবং এর শুভানুধ্যায়ীসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিগণ অংশ নেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে একত্রিত করে বাংলা বছরের রঙিন ঋতু, ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করার মাধ্যমে প্রকৃতির অপার দানের মহিমাকে উৎফুল্লচিত্তে প্রশংসা করা ও সবাই মিলে এ দানকে উপভোগ করা।
উপস্থিত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই ফাগুনকে ফুটিয়ে তোলে এমন নানা রঙিন পোষাকে ও সাজে সজ্জিত হয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দানের মাধ্যমে এ আয়োজনকে প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য এক বসন্তের মিলন মেলায় পরিণত করেন। সংগঠন কর্তৃক বিরানীসহ অন্যান্য খাবারের ব্যাপক আয়োজন থাকলেও, বর্ষবরণ ও পিঠা উৎসবে ভাই-ভাবী, বোন-ভগ্নিপতিগনসহ সংগঠনের সদস্যবৃন্দ স্বেচ্ছায়, স্বতস্ফূর্তভাবে পর্যাপ্ত পরিমান পিঠা, ভর্তা, মিষ্টিসহ হরেক রকমের চিত্তাকর্ষক মুখরোচক খাদ্য উপকরণ প্রস্তুত করে নিয়ে আসেন।
আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানস্থলের নির্মল আবহে অভ্যাগতদের উপচে পড়া ভীড়ের মধ্যেও সবাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের খাবার ও অবিরত প্রধানতঃ বসন্ত ঋতু ভিত্তিক ও প্রাসঙ্গিক গান, আবৃত্তি ইত্যাদির মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকেন। অ্যালানাইয়ের সদস্য ও অন্যান্য অতিথিগণ যখনই চেয়েছেন, পরস্পর কুশলাদি বিনিময় করেছেন, ভাবের আদান-প্রদান করেছেন। প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে তারা বিন্দুমাত্র কুন্ঠা বোধ করেননি এবং এমনকি একটা গানের জন্যেও তাদের অনুরোধ করতে হয়নি। যে বা যিনিই গেয়েছেন বা আবৃত্তি করেছেন আর যে গানই গাওয়া হয়েছে বা আবৃত্তি করা হয়েছে, স্রোতাগন নিস্তব্ধ পরিবেশে নিশ্চুপ থেকে সে সব মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনেছেন আর করতালির মাধ্যমে এ সবের প্রশংসা করেছেন এবং সেই সঙ্গে সবাই নিয়মিতভাবে অনুরূপ আয়োজনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। শাড়ীর স্টল থেকে বেশ কয়েকজন একাধিক শাড়ী কিনেছেন। কতিপয় দায়িত্বশীল সদস্য ও ভাবী কর্তৃক বারংবার খাবার পরিবেশনে ও সুধীবৃন্দের খাবার গ্রহনে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়টা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন শিশু শিল্পী প্রিয়ম পুরকায়স্থ এবং জয়তি দাস, মিসবাহ উদ্দিন ইকো, শারমিন শরীফ, তামান্না ইকবাল, মোস্তফা কামাল মিলন, সামিনা দেওয়ান, সৈয়দা ফারহানা সুবর্ণা, মিলন বিশ্বাস ও রীপা রাকিব। আবৃত্তিতে অংশ নিয়েছেন মিজানুর রহমান, মাহফুজা তালুকদার, সৈয়দ ইকবাল, এম কিউ হাসান এবং অতিথি সাহাব উদ্দিন বাচ্চু।
সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানকারী অ্যালামনাইয়ের সভাপতি বীর মুক্তিযাদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতানের পাঠানো শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনবার্তা পড়ে শোনান।
রেডব্রীজ কাউন্সিলের কাউন্সিলর জোৎস্না ইসলাম, কাউন্সিলর শামস ইসলাম এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশার উপস্থিতি অনুষ্ঠানটাকে সমৃদ্ধ ও অলংকৃত করেছে। রেডব্রীজ বাবার মেয়র-ইলেক্ট জোৎস্না ইসলামকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়।
এতে যোগদানকারীদের সবাই উদ্যোগ, উপস্থাপনা, খাবার-দাবার, বিভিন্ন পরিবেশনা, একটি মিলন মেলার ক্ষেত্র তৈরী করা এবং আতিথেয়তাসহ সার্বিক আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং এ সবের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
একেবারে অল্প সময়ে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মেহেরুন আহাম্মেদ মালা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রীপা রাকীবের ভাবনাপ্রসূত বর্ষবরণ ও পিঠা উৎসবের উদ্যোগ, প্রয়াস ও বাস্তবায়নে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন স্বয়ং মেহেরুন মালা এবং রীপা রাকীব, শারমিন চৌধুরী, সামিনা দেওয়ান, মিজানুর রহমান, সৈয়দ হামিদুল হক ও বেলাল চৌধুরী। তাদের বদান্যতায় ও অন্যান্য সদস্যের ঐকান্তিক ও আন্তরিক সহায়তা ও অ্যালামনি মাহফুজা তালুকদারসমেত অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকগনের মূল্যবান সমর্থন, এ আয়োজনকে সার্থকতায় পর্যবসিত করেছে। এ ছাড়া, কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কার্যসমূহ সুচারুরূপে সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন, যেমন: আগের দিন যারা অনুষ্ঠানস্থল পরিপাটি করে তৈরী করা ও সাজানো, অনুষ্ঠানের দিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত রাখা আর বিশেষ করে অনুষ্ঠান শেষে মূহুর্তের মধ্যে সদস্যগনের অনুষ্ঠানস্থলকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার কাজে সংশ্লিষ্ট অ্যালামনাই সদস্যগন ও তাদের কয়েকজনের পরিবার যে আস্থা, সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, তা ছিল অনন্য, অনবদ্য এবং যারপর নাই প্রশংসনীয়। অভ্যর্থনা ডেস্কে মেহেরুন মালার কন্যা রিমঝিমের ঠায় বসে থেকে নিরলস সেবা দান অনস্বীকার্য।
অ্যালামনাইয়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্থ বিইএম ও ইসমাইল হোসেন, পরিকল্পনামাফিক সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাই আর আগত সদস্যগন, তাদের পরিবার, পৃষ্ঠপোষকগন, অন্যান্য অতিথিগন ও বিশেষ করে তড়িৎ অনুষ্ঠানস্থলটির ব্যবস্থা করে দেবার জন্য ডক্টর হাসনীন চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানান।