ঢাবি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের ষষ্ঠ বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত

 

মারুফ আহমেদ চৌধুরী সভাপতি, মেসবাহ উদ্দীন ইকো সাধারণ সম্পাদক এবং সৈয়দ জাফর কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত”

নিলুফা ইয়াসমীন হাসান ও খালিদ ইয়াহহিয়া
সত্যবাণী

লন্ডন: ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ সমবেত জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের ষষ্ঠ বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠান।

গত ১২ই নভেম্বর বিপুল সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে আনন্দঘন পরিবেশে পূর্ব লন্ডনের ক্রিস্টাল ব্যাংকুয়েটিং হলে দিনব্যাপী এ বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ডাকসুর সাবেক সদস্য দেওয়ান গৌস সুলতানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনের পরিচালনায় বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মান্যবর সাইদা মুনা তাসনীম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সাথে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতার পর যেমন দেশে একটি ধর্মনিরপেক্ষ জ্ঞানভিত্তিক উন্নত সমাজের রূপরেখা প্রতিষ্ঠার প্রধান রচয়িতা বঙ্গবন্ধু; তেমনি উন্নয়ন, গবেষণা ও দেশ গঠনের নিমিত্তে দক্ষ জনশক্তি গড়ায় প্রধান ভূমিকা পালন করছে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ঘটনা উল্লেখ করেন। চল্লিশের দশকে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, কিন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে অংশ নিয়ে ছাত্রত্ব হারান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু করায় হাইকমিশনার অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

ষষ্ঠ বার্ষিক সাধারণ সভায় তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ২০২৩-২৫ সালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন হাবিব রহমান এবং অপর দুই নির্বাচন কমিশনার ছিলেন শাহগীর বখত ফারুক এবং ড. মোহাম্মদ আবদুল হান্নান।

সভায় মারুফ আহমেদ চৌধুরীকে সভাপতি ও মেসবাহ উদ্দীন ইকোকে সাধারণ সম্পাদক করে আগামী দুই বছরের জন্য ৩২ সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রশান্ত পুরাকায়স্থ বিইএম। এবং সহ সভাপতি পদে যথাক্রমে সহুল আহমেদ মকু, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান ও সিরাজুল বাসিত চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ জাফর।

যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সলিসিটার সৈয়দ আবু আকবর আহমেদ ইকবাল, ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও ব্যারিস্টার মাহারুন আহম্মেদ মালা।
যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন ফাইজুল হক রিপন ও খোকন কান্তি ঘোষ। দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ব্যারিস্টার মিজানুর রহমান।
ড. মোহাম্মাদ কামরুল হাসান, ব্যারিস্টার কামরুল হাসান ও বেলাল রশীদ চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক।
এছাড়া, রীপা সুলতানা রাকীব সাংস্কৃতিক সম্পাদক, খালিদ ইয়াহইয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিসিটি সম্পাদক ও এ্যারিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

কার্যকরি কমিটির নির্বাচিত সদস্যরা হলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান, ইসমাইল হোসেন, মাহফুজা রহমান, সৈয়দ সাইদুর রহমান ফারুক, সৈয়দ এনামুল ইসলাম, মির্জা আসাব বেগ, ফখরুল মোহাম্মদ ইসলাম, মোহাম্মদ রফিক আহমেদ, ব্যারিস্টার

মোহাম্মদ আবুল কালাম, শারমিন চৌধুরী, সৈয়দ হামিদুল হক, মিসেস কল্পনা কাজী ও সৈয়দ ফারহানা সুবর্ণা।

বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।

সভার শুরুতে সগঠনের সদস্য মাওলানা মোবারক আলী দোয়া পরিচালনা করেন। এ পর্যায়ে সৈয়দ আবু আকবর ইকবাল কর্তৃক সংগঠনের জ্যেষ্ঠতম সদস্য ‘একুশের গান’ খ্যাত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও আরো তিনজন অ্যালামনাইর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। এছাড়া ইসরাইল কতৃর্ক ফিলিস্তিনবাসীদের উপর নৃশংস আক্রমন করার প্রতিবাদে ও অনতিবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবীতে একটি বিশেষ প্রস্তাব পাশ করা হয় এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে। পরলোকগত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত ও যুদ্ধ বন্ধের কামনায় দোয়া পড়া হয়েছে।
সভায় গত দুই বছরের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ও আর্থিক রিপোর্ট পেশ করেন বিদায়ী কমিটির কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ হামিদুল হক। শেষ দুই কার্যকরি কমিটির মিনিটস উপস্থাপন করেন ব্যারিষ্টার মিজানুর রহমান।

সভাপতির ভাষণে বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ও ত্যাগ অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক গুণ বেশি।

সিনিয়র অ্যালামনাইদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, প্রশান্ত পুরকায়স্থ, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান , মেহেরুন আহমেদ মালা, মুস্তাফিজুর রহমান, ফয়জুল হক রিপন, ড. অজিত কুমার ঘোষ, কাজী কল্পনা, ব্যারিষ্টার আবুল কালাম, মতিন চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এমদাদ তালুকদার এম বি ই, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউ কের সভাপতি এ কে এম ইয়াহিয়া এবং বাংলাদেশ টিচার্স এসোসিয়েশন ইউ কের সভাপতি আবু হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দিনব্যাপী আনন্দ উল্লাসের মিলনমেলার শেষ পর্বে ছিল র‍্যাফেল ড্র। এতে অনেক আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার শিকার অগণিত অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া রেফেল ড্র এর মাধ্যমে সংগৃহিত সমুদয় অৰ্থ গাজার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের ত্রাণকাজে ব্যবহার করা হবে।

অনুষ্ঠানে সংগঠনের গত দুই বছরের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে তৈরী একটি স্লাইড শো প্রদর্শন করা হয়। এই স্লাইড শো এর মাধ্যমে নিজেদের ছবি দেখে অনেক সদস্য আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। স্লাইড শো টি তৈরী করেছেন এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সম্পাদক এরিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা।

মধ্যাহ্নভোজের পর সাংস্কৃতিক সম্পাদক রীপা সুলতানা রাকীবের পরিচালনায় এবং মিজানুর রহমান, এরিনা সিদ্দিকী ও সামিনা দেওয়ান এর সঞ্চালনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী লুসি রহমান, স্যামুয়েল চৌধুরী, কাজী কল্পনা, রীপা সুলতানা, এরিনা সিদ্দিকী, সামিনা দেওয়ান, সৈয়দা তামান্না, সাঈদা চৌধুরী, নীলা নিকি খান, মনসুর পিয়াস ও ফারহানা সুবর্ণা। নৃত্য পরিবেশন করেন শর্মিষ্ঠা এবং তার সঙ্গী। আবৃত্তি করেন এম কিউ হাসান ও মিজানুর রহমান।

সাংস্কৃতিক পর্বে অ্যালামনাই মাহফুজা তালুকদারের রচনায় “আমরাই পারি” নামে পরিবেশ রক্ষার্থে সচেতনতামূূলক একটি নাটক পরিবেশিত হয়েছে। নাটকে অভিনয় করেছেন মতিন চৌধুরী, গৌস সুলতান, এমদাদ তালুকদার, মাহফুজা তালুকদার রহমান ও কবির গজনভীসহ আরও অনেকে।

এছাড়াও বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন উপলক্ষে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়।

 

 

 

 

 

You might also like