তরুণ হত্যার দায়ে সিলেটের আদালতে ৫ জনের যাবজ্জীবন

সিলেট অফিস 
সত্যবাণী
এক যুগ পর সিলেটের কানাইঘাটে তরুণ শাহনেওয়াজ (১৯) হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রমে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
২০ মার্চ বুধবার দুপুরে সিলেটের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. শাহাদৎ হোসেন প্রামাণিক চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের পেশকার (বেঞ্চ সহকারী) মো. আহম্মদ আলী।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার পাত্তন গ্রামের নুরুল হক ওরফে কুটি মাস্টারের ছেলে আবুল কাশেম উরফে মারুফ (২৯), একই গ্রামের নুরুল হকের ছেলে বাবুল আহমেদ (২১), ইরফান আলীর ছেলে লোকমান (২২), কানাইঘাট উপজেলার মালিগ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে খলিল উদ্দিন (৪৮) ও একই এলাকার মৃত মাহমুদ আলীর ছেলে দর্জি হেলাল (৪০)।
এরমধ্যে বুধবার রায় ঘোষণার সময় সাজাপ্রাপ্ত আসামী আবুল কাশেম ওরফে মারুফ ও দর্জি হেলাল আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত থাকলেও অপর সাজাপ্রাপ্ত আসামী বাবুল আহমেদ, লোকমান ও খলিল উদ্দিন পলাতক ছিলেন।
মামলা সুত্রে জানা যায়, আসামীদের সাথে কানাইঘাট উপজেলার মালিগ্রামের ফখরুল ইসলামের ছেলে শাহনেওয়াজের (১৯) প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে পূর্ববিরোধ চলে আসছিলো। এর জের ধরে ২০১১ সালের ২৬ জুন রাত ৯টার দিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাড়ি থেকে শাহনেওয়াজকে ডেকে নেয় আসামীরা।
পরে তারা শাহনেওয়াজের পরণের গেঞ্জি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরুদ্ধে হত্যা করে এবং কানাইঘাট উপজেলার পর্বতপুর গ্রামের লাইন নদীতে তার লাশ ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় আসামীরা। এদিকে ২ দিন শাহনেওয়াজ বাড়ি ফিরতে না দেখে তার পরিবার তাকে বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুজি করতে থাকেন। একপর্যায়ে ২৯ জুন সকাল ৯ টার দিকে পর্বতপুর লাইন নদীর সাকোঁতে শাহনেওয়াজের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন তার পরিবারকে খবর দেন।
পরে পরিবারের লোকজন গিয়ে শাহনেওয়াজের লাশ শনাক্ত করেন এবং খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহত শাহনেওয়াজের পিতা ফখরুল ইসলাম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে কানাইঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (নং-১২/২৯/০৬-২০১১)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর কানাইঘাট থানার এসআই এনাম উদ্দিন আহমেদ উক্ত ৫ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগ পত্র নং-১৮১) দাখিল করেন এবং ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালতে মামলার বিচারকার্য শুরু করেন।
দীর্ঘ শুনানী ও ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার আদালত আসামী আবুল কাশেম ওরফে মারুফ, দর্জি হেলাল, বাবুল আহমেদ, লোকমান ও খলিল উদ্দিনকে ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ড এবং প্রত্যেক আসামীকে ২০১ ধারায় আরো ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ২ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুল ইসলাম ও আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট মো. ছয়ফুল আলম, এএসএম এ গফুর ও রমাচন্দ্র নাথ মামলাটি পরিচালনা করেন।

You might also like