তাহিরপুর সীমান্তে চোরাচালান বাণিজ্য জমজমাট
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী, চোর চুরি করলে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়ে সাঁজা দিলেও জেল থেকে বের হয়ে সেই তার পূর্বের চরিত্রে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্যে করা গেছে। আবার কিছু কিছু চোরেরা সীমান্ত বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁিক দিয়ে কিংবা ম্যানেজ করে দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে বোংগার মালামালের অবাদ ব্যবসা। আইন শৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁিক দিয়ে হোক আর ম্যানেজ করেই হোক তারা চালাচ্ছে এ কর্মকান্ড। তেমন একটি চোরাচালানীর কাহিনী ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে সীমান্তবর্তী মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্তের অপার ভারত থেকে চোরাই পথে দেশের ভেতরে নিয়ে আসা ভারতীয় চোরাই কয়লার পাশাপাশি মদ গাঁজা হিরোইন, ইয়াবার মতো মরণনাশক ট্যাবলেট। অভিযোগ উঠেছে, পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত তাহিরপুরের যাদুটাকার অপার লীলাভূমি ঘেষা উপজেলার সীমান্তবর্তী কথিত বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী মো. শফিকুল ইসলাম ভৈরব, মো. খোকন মিয়া ও শহীদুল্লাহ’র নেতৃত্বে এই চোরা কারবারীচক্র এবং এই চক্রের মূল হোতা তারা।
চোরাকারবারীরা সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সোর্সরা প্রতি রাতের আধাঁরে ভারত থেকে অবৈধভাবে কয়লা পাচাঁরের পাশাপাশি বিদেশী মদ, গাঁজা, হিরোইন ও ইয়াবার মতো মরণ নাশক ট্যাবলেট দেশের ভেতরে নিয়ে এসে তাদের চোরাচক্রের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি অন্যান্য জেলাগুলোতে তারা বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে গলাগাছ বনে গেলেও দেখার যেন কেউ নেই।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, চোরা কারবারীর মূল হোতা শফিকুল ইসলাম ভৈরব (৩৮) তাহিরপুর উপজেলার ১নং উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের চারাগাঁও (সংসারপাড়) গ্রামের মৃত. মকবুল হোসেনের ছেলে। সে দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্ত এলাকায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে প্রতিরিাতে ভারত থেকে নিয়ে আসছেন চোরাই কয়লা আর মরণ নাশক ইয়াবা ও হিরোইনের চালান। অপর চোরা কারবারী হলেন মো. খোকন মিয়া।
তিনিও একই ইউনিয়নের লালঘাট গুচ্ছ গ্রামের মো. লাল হোসেনের ছেলে ও শহীদুল্লাহ লালঘাটের বাসিন্দা। তাদের বাড়ি সীমান্ত এলাকায় হওয়ার কারণে ক্ষমতার দাপটে স্থানীয় নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ ব্যবসা। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ অনেকেই। এই অবৈধ ব্যবসার ফলে এলাকার যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে বিপদগামি হচ্ছেন। এসব পাচারকৃত কয়লা থেকে সোর্স পরিচয়ধারীরা নামে-বেনামে চাঁদা উত্তোলন করছে এমন অভিযোগ নিয়ে পত্রপত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হয়। বিজিবির নিয়মিত টহল ও অভিযানে প্রায় সময়েই পাচারকৃত মালামাল জব্দ করা হচ্ছে। কিন্তু অনেক সময়েই ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে এসব চোরাকারবারি ও কথিত সোর্স পরিচয়ধারী শফিকুল, খোকন ও শহীদুল্লাহসহ তাদের সহযোগিরা। যার কারণেই চোরাকারবারি ও সোর্সদের দাপট দিনদিন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীরা জানায়, উপজেলা সীমান্তের চোরাচালানের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত উপজেলার চারাগাঁও সীমান্ত। এই সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে ভারত থেকে প্রতিরাতেই আসছে লক্ষ লক্ষ টাকার চোরাই কয়লা, বিদেশী মদ, গাঁজা, হিরোইন ও ইয়াবার মতো মরণ নাশক ট্যাবলেট। আর এসব রাতের আধাঁরে পাচাঁর করছে উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের লালঘাট গ্রামের লাল হোসেন এর ছেলে খোকন, একই গ্রামের আলীনুর মিয়ার ছেলে হারুন, মৃত. আব্দুল মুতালিব মিয়ার ছেলে শহিদুল, কালা ফকির এর ছেলে রমজান, একই এলাকার বাঁশতলা গ্রামের মৃত. আব্দুল হেলিম মিয়ার ছেলে কুদ্দুস মিয়া। তারা প্রতিদিন সকালে অর্ধশতাধিক শ্রমিক দিয়ে ভারত সীমান্তের ভেতর থেকে কয়লা উত্তোলন করে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি কাটা তারের বেড়ার পাশে জঙ্গলে ভিতরে মজুত করে রাতে এবং সন্ধ্যা হলেই কয়লা জঙ্গল থেকে বাহির করে সীমান্ত পারাপার করে। সংসার হাওরে রাখা স্টীলবডি নৌকা বুঝাই করে পাটলাই নদী দিয়ে কলমাকান্দা, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। এতে চোরাচালানিদের প্রতিটন কয়লা পাচাঁর করতে চোরাচালানের নেপথ্যের কারিগর কথিত সোর্স পরিচয়ধারী উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের চারাগাঁও (সংসার পাড়) গ্রামের মৃত. মকবুল হোসের এর ছেলে শফিকুল ইসলাম ওরফে (ভৈরব) কে দিতে হয় দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা।এ ব্যাপারে স্থানীয় একাধিক লোক জানান, প্রতি রাতেই চোরাই কয়লা পাচার করা হচ্ছে। শফিকুল ইসলাম (ভৈরব) বিজিবি ও সাংবাদিককে টাকা দিতে হয় বলে তিনি টাকা নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে চোরাকারবারি গ্যাং লিডার উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের লালঘাট গ্রামের লাল হোসেন এর ছেলে খোকন মিয়া জানান, আমরা সুযোগ বুঝে ভারত হতে কয়লা আনি এতে শফিকুল ইসলাম ভৈরব কে টাকা দেই।কিভাবে কত করে দেন এবং তিনি কার কথা বলে টাকা নেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তিনি অনেকের কথা বলেন আমরা এতো কিছু জানতে চাইনা।তবে এ বিষয়ে শফিকুল ইসলাম ওরফে (ভৈরব) এর সাথে মোঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, একসময় আমি বিজিবি ও সাংবাদিকদের সোর্স হয়ে কাজ করতাম এখন করিনা, কিছু ছুটকা সাংবাদিক আছে তাদের টাকা দেই না এ জন্য এসব বলে, এছাড়াও তিনি আর বলেন, বর্ডার দিয়ে এখন আর আগের মতো চোরাই পথে মালামাল নামে না মাঝেমধ্যে নামলেও বিজিবির অজান্তেই নামে।এ ব্যাপারে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মো. সাইফুল ইসলাম জানান এই চোরাকারবারী শফিকুল ইসলাম ভৈরব ও তার সহযোগিদের ধরতে বিজির সদস্যরা সার্বক্ষনিক বর্ডারে দায়িত্ব পালন করছে। কোন সন্ধান ফেলে তাদের জানালে তারা ওদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ২৮বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহসান পিএসসি বলেন, সীমান্তে চোরাচালান হলে সুনির্দিষ্ট তথ্যদিন, এর সাথে জড়িতদের হাতেনাতে ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।