দিরাইয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমি দাতা এক চিহ্নিত রাজাকার,মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় একটি সরকারি বিদ্যালয়ের ভূমিদাতা হিসেবে একজন চিহ্নিত রাজাকারের নাম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা অনতিবিলম্বে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজাকারের নাম বাদ দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট উধর্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের জারুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এর ভূমিদাতা হিসেবে একাধিক ব্যক্তির নাম উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু বর্তমানে একজন চিহ্নিত রাজাকারের নাম থাকায় এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। একটি বিদ্যালয়ের ভবণে একজন চিহিৃত রাজাকারের নামটি জানাজানি হলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করে। তারা জানান, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের নামে কোন মতেই একটি সরকারি বিদ্যালয়ের ভূমিদাতা হিসেবে থাকতে পারে না। অনতিবিলম্বে এই বিদ্যালয় থেকে নাম মুছে ফেলার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান। শীঘ্রই মুক্তিযোদ্ধারা লিখিতভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করবেন বলেও জানান। ‘রক্তাক্ত ৭১ সুনামগঞ্জ’ বইয়েও রাজাকার হিসেবে তার নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে।
সরেজমিন জারুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভূমিদাতা হিসেবে মৃত আছকির মিয়ার ছেলে মরহুম আলহাজ্ব আব্দুল মতলিব মিয়া একজন চিহিৃত রাজাকার হলে ও বিদ্যালয়ে তার নামটি রয়েছে। এ নিয়ে আছকির মিয়ার অন্যান্য ছেলেদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। শুরু হয় পারিবারিক দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্ধের জেরে চলতি বছরের গত ৪ সেপ্টেম্বর তারিখে একটি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। পরিবারের কয়েকজন সদস্য জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ভূমিদাতা হিসেবে মৃত আছকির মিয়ার নাম ছিল । কিন্তু সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতলিবের ছেলে মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েল ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আগের নাম পরিবর্তন করে শুধুমাত্র তার পিতার নাম লেখেন। এ নিয়ে পরিবারের সবাই নাখোশ। বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।
জারুলিয়া গ্রামের মৃত আছকির মিয়ার ছেলে হাজী আব্দুল মান্নান বলেন, মরহুম আব্দুল মতলিব মিয়া আমার ভাই । তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। বিভিন্ন কারণে দিরাইয়ে সুপরিচিত, বিশেষ করে তাকে রাজাকার হিসেবে মানুষ চিনতো জানত। ৭২ সালে তিনি জেল ও খেটেছেন। তার সাথে রাজাকার হিসেবে আরও অনেকেই ছিলেন। আর স্কুলের জায়গা আমাদের পরিবারের সবার মালিকানার জায়গা, উনি কিভাবে এই জায়গাটুকু সুকৌশলে এককভাবে জালিয়াতি করে রেজিস্ট্রি করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিরাইয়ের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নজরুল ইসলাম আজাদ জানান, সরকারি একটি বিদ্যালয়ে একজন চিহ্নিত রাজাকারের নাম ভূমিদাতা হিসেবে থাকা দুঃখজনক। বিষয়টি অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে তিনি মনে করেন। যারা এই নাম বিদ্যালয়ে ব্যবহার করেছেন, তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি শীঘ্রই এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগও সংশ্লিষ্ট দফতরে দায়ের করবেন বলেও জানান তিনি । এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা জাসদের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন মনে করেন সরকারি বিদ্যালয়ের দাতা হিসেবে কোন রাজাকারের নাম থাকতে পারে না। তারা দেশ ও জাতির শত্রু হিসেবে চিহ্নিত। তিনি এ বিদ্যালয়ের দাতার নাম পরিবর্তন করতে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পাশাপাশি একজন যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তির নাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমিদাতা থাকায় এর নিন্দা জানান।এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোঃ আতাউর রহমান জানান, কোন সরকারি বিদ্যালয়ে দাতা হিসেবে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের নাম থাকা অত্যন্ত নিন্দনীয়কাজ। এটি কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমি এখন দায়িত্বে নেই, তাই বিদ্যালয় থেকে বিতর্কিত ব্যক্তির নাম বাদ দেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজের দিরাই উপজেলা প্রতিনিধি জাকারিয়া হোসেন জোসেফ বলেন, স্কুলের জায়গা আমাদের যৌথ মালিকানার জায়গা, আব্দুল মতলিব কোন ভাবেই সবার জায়গা একক ভাবে স্কুলের নামে দিতে পারেন না। আর তিনি দিরাই উপজেলার অন্যতম রাজাকার হিসেবে স্বীকৃত এবং প্রথম স্কুল করার পর স্কুলের দাতার নাম ছিল মতলিব এন্ড ব্রাদার। তারপর আমাদের পরিবারে সবাই এবং স্কুল কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে মতলিব মিয়ার পিতা এবং আমাদের দাদা আছকির মিয়া স্কুল দাতা হিসাবে নেইম-প্লেট ব্যবহার করা হয় এবং ১৫-১৭ বছর দাতা হিসাবে আছকির মিয়ার নাম ছিল । কিন্তু বর্তমানে রাজাকার পূত্র সরমঙ্গল ইউপির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েল চেয়ারম্যান হয়েই তার প্রভাব কাটিয়ে দাদার নাম মুছে শুধু তার বাবার নাম লিখায় যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গ্রাম্য শালিশে প্রতিবাদ করলে । আমি ও আমার ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করে গুরুত্বর আহত করে। আমরা চাইনা রাজাকার স্কুলদাতা এবং পরিবারে সব সদস্যদের জায়গা চেয়ারম্যানের বাবার একার জায়গা হোক, সবার জায়গা একক ভাবে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া মৃত মতলিব মিয়া ভাইদের ঠকানোর উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন । একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে চিহিৃত রাজাকারের নাম বাদ দিতে সরকারের নিকট জোর দাবী জানান তিনি।