দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন:জামালগঞ্জে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও তার সহকারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী মোঃ রেজাউল কবির ও তার সহকারি রবিন হাসানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিময় ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরের ১৫ নং প্রকল্প নির্মাণকারী (পিআইসি) সভাপতি জাহিদ হাসান পিন্টু গত ১১ই আগষ্ট জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং এর অনুলিপি প্রেরণ করা হয় নির্বাহী প্রকৌশলী পাউবো সুনামগঞ্জে ও উপজেলা চেয়ারম্যান জামালগঞ্জ। হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সুনামগঞ্জ ও সাংবাদিকবৃন্দের কাছে।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার হরিনা কান্দি গ্রামের মৃত রুহুল আমিন তালুকদার এর পুত্র জাহিদ হাসান পিন্টু হালির হাওরের উপ-প্রকল্পের ১৫ নং পিআইসির সভাপতি হয়ে একটি প্রকল্প নেন। পাউবোর চার্ট অনুযায়ী মাটির কাজ যথাযথভাবে তিনি সম্পন্ন করেন। এরপর আগাম বন্যা আসায় জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে হাওরে তার বাঁধকে আরো মজবুত করার লক্ষ্যে বাঁধে তিনি আরো কাজ করেন। ওই সময় উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল কবির এর নির্দেশমতে তারই সহযোগী রবিন হাসান পিআইসির সভাপতিকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ রেখে অথবা লোক মারফতে তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে সমন্বয় করার জন্য ঘুষের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি মাটির পরিমাণ কমিয়ে দেবে এতে করে কাজের পরিপূর্ণ বিল পাবনা বলেন এবং পরবর্তীতে পিআইসির সভাপতির কাছে বারবার কান্নাকাটি করলেও কোন কাজ হবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন। মিটমাট করেন না হয় কোন কাজ হবেনা এমনটি বলেন। যার ফোন রেকর্ড তিনি সংরক্ষণে রেখে স্থানীয় সিনিয়র কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী হাওর-বাঁচাও আন্দোলনের নেত্রী সহ অনেকেই শুনান। রবিন হাসানের অকথ্য ভাষায় হুমকির বিষয়টি জামালগঞ্জ অংশের পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল কবিরকে জানালে তিনি কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কোনরকম পাশ কাটিয়ে যান। এই অবস্থায় ভাটি এলাকার একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় হাওরের বেরিবাঁধ কাজ করায় তারা হয়রানি ও অভিশাপ এর মধ্যে পরিণত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। অভিযোগ আরো উল্লেখ করেন, কিছু দিন পূর্বে আমি আমার কাজের মাস্টার রুল জমা দিতে গেলে রেজাউল কবির আমার সাথে রাগারাগি হয় এবং আমার কাজের বিল ভাল হবে না বলে আমাকে বিদায় করে দেন । এ ব্যাপারে আমি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়েরের কথা তিনি শুনতে পারলে আমাকে কোন বিল না দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েক জন পিআইসির লোকজন জানান রেজাউল কবির বেশ কয়েক বছর এখানে থেকে প্রকল্প নির্মানকারী অনেককেই বিল তোলার সময় বিভিন্ন অনিয়ম দেখিয়ে উৎকোচ হাতিয়ে নিয়েছেন। অতীতেও এইপদে থাকা নেহার রঞ্জন দেবনাথের অনিয়মের পথ ধরে রেজাউল কবির খুব সংগোপনে জামালগঞ্জ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে যাচ্ছেন।এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জামালগঞ্জ অংশের পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল কবির বলেন, আমার সহকারী রবিন হাসানের একটি রেকর্ডিং শুনেছি এটা হয়তো এডিটিং ও হতে পারে, কোন ঘুষ বা উৎকোচ চাইনি। ৩ বছর ধরে আমি জামালগঞ্জ আছি বিল তোলার ক্ষেত্রে কোনো না কোনো কারণে অনেকের সাথে অনেক ভাবেই সমন্বয় করে চলতে হয়। আমি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব বলেন, পাউবোর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে পাউবোর কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাদের তদন্ত কাজে সহায়তা করবো। আমরা চাই কাজে স্বচ্চতা থাকুক। মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। অভিযোগ প্রমানিত হলে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট ব্যবস্থা নেবেন।জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, অভিযোগের অনুলিপি আমি পেযেছি। তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্তের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করবো।এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লিখিত অভিযোগের কপি আমি পেয়েছি। দুই জন প্রকৌশলীর সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি যাচাই-বাছাই করে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।