দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

বাংলাদেশঃ কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়ে দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।এতে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন,দেশে যে বন্যার পরিস্থিতি তাতে মৌসুমের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে।বর্তমানে বন্যায় আক্রান্ত ২১টি জেলা।এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৯ লাখেরও বেশি মানুষ।গতকাল মঙ্গলবার থেকে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে।পানির এই প্রবাহকে বন্যার তৃতীয় ঢল বলা হচ্ছে।এবারের বন্যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় রূপ নিতে পারে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ১৭টি নদীর পানি ২৮টি পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।আগামী ২৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল,উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, তিস্তা ও মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদনদীগুলোয় পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।এছাড়া ঢাকার আশপাশের নদনদীর পানি বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।

এদিকে বন্যার পানি আবার বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো পানিবন্দি মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় তলিয়ে গেছে স্কুল, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা। অনেকে কলাগাছের ভেলা ব্যবহার করছেন। অধিকাংশ জায়গায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। বাড়ছে রোগ-ব্যাধি। দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের তীব্র সংকট। সরকারের পক্ষ থেকে কোথাও কোথাও ত্রাণ দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

সিলেট অফিস জানায়,সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে সিলেটের বিভিন্ন পয়েন্টে।বিশেষ করে ছাতক ও সুনামগঞ্জে আবার নতুন করে পানি বৃদ্ধি বানভাসি মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। সিলেটের পাঁচ উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলাসহ ১৬ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন,তার বাসভবনের আঙিনায়ও পানি ঢুকেছে।

কুড়িগ্রামের রাজার হাটের বুড়ির হাট এলাকায় তিস্তা নদীর স্পার বাঁধের স্যাঙ্কের প্রায় ৫০ মিটারেরও বেশি অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বুড়ির হাট ও ঘড়িয়ালডাঙ্গার কয়েক শ’ পরিবার।এদিকে রংপুর অঞ্চলে তিস্তা নদীর পানি বিপত্সীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে এই দুই উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দি হাজারো মানুষ।দোহার-নবাবগঞ্জ-মানিকগঞ্জ রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন ২৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

নাটোর জেলার চলনবিল এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।পানিবন্দি পরিবারের অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে।ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সিংড়া-কলম সড়কের বলিয়াবাড়ী এলাকার রাস্তা। যে কোনো মুহূর্তে এটি ধসে যেতে পারে।

গাইবান্ধা, তিস্তা এবং করতোয়া নদীর পানি বেড়েই চলেছে।জেলায় এখনো প্রায় দেড় লাখ পানিবন্দি মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত।তারা এখনো ঘরে ফিরতে পারছে না। উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ১১টি পয়েন্টে ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।

জামালপুর , যমুনার পানি কিছুটা কমলেও বেড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপত্সীমার ৭১ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি রয়েছে জেলার সাত উপজেলার ১০ লাখ মানুষ। বৃষ্টির কারণে তাদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। ইসলামপুর-দেওয়ানগঞ্জ বাজার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জ, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় নদনদী অববাহিকার ছয় উপজেলার বানভাসি সোয়া ২ লাখ অসহায় মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, শিশু খাদ্য, ওষুধপাতির সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা।

সদরপুর (ফরিদপুর), পদ্মা-আড়িয়াল খাঁয় বন্যার পানি বিপত্সীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে চরাঞ্চলের পাঁচটি ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

রাণীনগর (নওগাঁ), জেলা পাউবোর তত্পরতায় রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার নদী সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ বালির বস্তা ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে মেরামত করায় বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে প্রায় ২০০ গ্রাম।

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল), মির্জাপুরে পৌরসভা ও আট ইউনিয়নে বন্যার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বংশাই-লৌহজং নদীর আশপাশে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় ত্রাণ না পেয়ে হাজার হাজার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।

You might also like