দেশ ও জনগণ প্রশ্নে আওয়ামী লীগ অবিচল : তথ্যমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশ ও জনগণের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ অবিচল। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে অকুতোভয়ে কাজ করে আসছে। আমরা আপোষ করি না, আপোষ জানি না। দেশের প্রশ্নে, জনগণের প্রশ্নে, রাষ্ট্রের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সবসময় অবিচল।’ মন্ত্রী আজ দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) নতুন কমিটির অভিষেক ও গুণীজন সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতাদের মন্তব্য ‘আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাবে’ এর জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘পালানোর ইতিহাস তো বিএনপির। তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এই বলে মুচলেকা দিয়ে বিদেশ চলে গেছেন যে, তিনি আর রাজনীতি করবেন না এবং তার সাথে আরো অনেকেই পালিয়ে গেছেন।’ হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজ শুধু সরকারে নয়, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকসহ দেশের সবপেশার মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আগের তুলনায় অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে। সে কারণেই বিএনপির গাত্রদাহ, কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। যে দলের মহাসচিব বলে পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল, তারা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে, তা সহজেই অনুমেয়। তারা আসলে পাকিস্তানের পক্ষে।’ বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সরকার ও জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করা থেকে বিএনপি যদি বিরত থাকে, তাহলে তাদের সভা-সমাবেশ নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। সরকার এক্ষেত্রে তাদেরকে সহযোগিতা করছে এবং সেই কারণেই তারা সমাবেশ করতে পারছে। ‘আর আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুঁড়ে হামলা করা হয়েছিল, ২৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল’ উল্লেখ করেন মন্ত্রী হাছান। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন আওয়ামী লীগ অফিসের দু’পাশে কাঁটাতারের স্থায়ী বেড়া ছিল, তার বাইরে আমাদের যেতে দেওয়া হতো না। তখন শেখ হেলাল এমপিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার জনসভায় হামলা করে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছিল। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভায় হামলা করা হয়েছিল, এস এম কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারের জনসভায় হামলা করে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।’ ‘এভাবে আমরা বিরোধী দলে থাকতে আমাদের শতশত নেতকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপির সমাবেশে তো বোমা বা গ্রেনেড দূরে থাক, একটি পটকাও তো ফোটে নি’ দৃষ্টান্ত দেন হাছান।
এর আগে বক্তৃতায় বাচসাসের নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে তারা তাদের লেখনী ও চিত্রের মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। ড. হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ। বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রায় ২০০ সিনেমা হল আবার চালু হয়েছে শুনে তিনি অত্যন্ত উৎসাহিত হয়েছেন ও আমাকে বলেছেন সবাইকে আরও সিনেমা হল নির্মাণের জন্য বলতে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নতুন সিনেপ্লেক্স, সিনেমা হল নির্মাণ ও পুরনো হল সংস্কারের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার সহজ ঋণ তহবিল গঠিত হয়েছে। কেউ যদি মার্কেটে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে চায়, তাহলে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে।ব্যাংকগুলোকেও আমরা ঋণ দিতে উদ্বুদ্ধ করবো। আমাদের সিনেমা শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, খুব সহসাই বিশ্ব অংগনে আরো ভালো জায়গা করে নেবে, আশাপ্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী।বাচসাস সভাপতি রাজু আলীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মোল্লা জালাল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী পাভেল রহমান, চিত্রনায়ক ওমর সানী ও বাচসাস সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ।
এ দিন বাচসাস সম্মাননা-২০২২ প্রাপ্ত হন- সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাবেয়া খাতুন (মরণোত্তর), সাহিত্য নির্ভর ্র চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক (মরণোত্তর), একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার (মরণোত্তর), বরেণ্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী (মরণোত্তর), সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সাংস্কৃতিক জাগরণে অনবদ্য অবদানের জন্য লিয়াকত আলী লাকী, সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আনিসুল হক, নাটক ও চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য মাসুম রেজা, একুশে পদকপ্রাপ্ত ফটো সাংবাদিক ও বাচসাস সদস্য পাভেল রহমান, চলচ্চিত্র শিল্প ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের জন্য চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, টিভি সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য মোজাম্মেল বাবু, চলচ্চিত্র প্রযোজনায় বিশেষ অবদানে হাবিবুর রহমান খান, হাসিনা- এ ডটার’স টেল চলচ্চিত্রের জন্য পিপলু আর খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, বরেণ্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান, চারুশিল্পী, অভিনয় ও নির্দেশনায় আফজাল হোসেন, চলচ্চিত্র শিল্পে অবদান রাখার জন্য চিত্রনায়ক শাকিব খান ও সঙ্গীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী কোনাল ও ইমরান মাহমুদুল।
এদিকে নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, হল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, নির্মাতা সাজ্জাদ হোসেন দোদুল,পরিচালক এস এ হক অলিক, অপূর্ব রানা, শাহ মোহাম্মদ সংগ্রাম, গাজী মাহবুব, খিজির হায়াত, চিত্রনায়িকা অরুনা বিশ্বাস,অঞ্জনা রহমান, শাহ হুমায়রা সুবহা, চিত্রনায়ক ওমর সানী, সঙ্গীতশিল্পী দিঠি চৌধুরী, অভিনেতা শাহেদ শরীফ খান, চিত্রনায়ক তানভীর তনু, অভিনেতা রাশেদ সীমান্ত ,অভিনয় শিল্পী সংঘের নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রাণ রায়, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর প্রমুখ।