দ্বিতীয় টেস্টঃ স্পিনস্বর্গ মিরপুরে প্রথম দিনে ১৫ উইকেট

নিউজ ডেক্স
সত্যবাণীঃ রাজধানীর মিরপুর শেরেবাংলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে লাটিমের মতো ঘুরছে বল। এই ঘূর্ণি-ফাঁদে পড়ে ১৭২ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।
জবাব দিতে নেমে স্বস্তিতে নেই নিউজিল্যান্ডও। ৫ উইকেটে ৫৫ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে সফরকারী দল। আলোকস্বল্পতায় আধ ঘণ্টার মতো বাকি থাকতেই দিনের খেলা শেষ করেছেন আম্পায়াররা। ব্যাটিংয়ে আছেন নিউজিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপস ৫ আর ড্যারেল মিচেল ১২ রানে। বাংলাদেশ এখনও ১১৭ রানে এগিয়ে। অর্থাৎ প্রথম দিনেই চালকের আসনে স্বাগতিকরা।
মিরপুরের পিচ প্রথম দিন থেকেই স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনে দুই দলের যে ১৫ উইকেট পড়েছে, এরমধ্যে ১৩টিই নিয়েছেন স্পিনাররা। সফরকারীদের শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ডানহাতি এই স্পিনারের বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হয়েছেন ওপেনার ডেভন কনওয়ে। নিজেদের প্রথম ইনিংসে খেলতে নেমে ২০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় কিউইরা।
কনওয়েকে ফেরানের পরের ওভারেই টম ল্যাথামকে সাজঘরে ফেরত পাঠান তাইজুল ইসলাম। নিচু হয়ে আসা বলে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ল্যাথাম। পরের উইকেটটি পেতেও বেশি সময় লাগেনি বাংলাদেশের। তাইজুলকে ডাউন দ্য উইকেটে হাঁকাতে গিয়ে মিডঅনে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন হেনরি নিকোলস (১)।
কেন উইলিয়ামসনকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু ইনিংসের ১২তম ওভারে মিরাজের বলে শর্ট লেগে শাহাদাত হোসেন দিপু যে ক্যাচটা ধরলেন, উইলিয়ামসনও হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন। ১৩ রান করে উইলিয়ামসন সাজঘরে ফেরেন দিপুর প্রায় মাটিতে লেগে যাওয়া ক্যাচে। ওই ওভারেই মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হন টম ব্লান্ডেল। তিনি রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ৪৬ রানে ৫টি উইকেট হারায় কিউইরা।
এরআগে টস জিতে প্রথম ইনিংসের শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশও। স্যান্টনার-অ্যাজাজের ঘূর্ণিতে প্রথম সেশনে ৪৭ রান তুলতেই চলে যায় ৪ উইকেট।
দ্বিতীয় সেশনে ৪০ রান করতে গেছে আরও ৪ উইকেট। শেষপর্যন্ত একদিন শেষ করার আগেই (৬৬.২ ওভার) প্রথম ইনিংস শেষ করেছে বাংলাদেশ, গুটিয়ে গেছে ১৭২ রানে।
ব্যাট করতে নেমে শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ৪৭ রানে ছিল না ৪ উইকেট। তখন মনে হয়েছিল, নতুন কোনো হতাশার রেকর্ড গড়বে বাংলাদেশ। তবে সেটি হয়নি। চরম বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে বলার মতো একটা জায়গায় এনে দিয়েছিলেন মুশফিক ও শাহাদাত। এটি যে টেস্ট ফরম্যাটের খেলা, তা যেন ভুলেই গিয়েছিলেন ওপেনার জাকির হাসান। দিনের শুরুতেই বাজে ক্যাচে সাজঘরে ফিরে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের মুখে হাসি ফোটালেন জাকির। ২৪ বলে ৮ রান করে মিচেল স্যান্টনারকে আকাশে তুলে মিড-অন অঞ্চলে কেন উইলিয়ামসনের হাতে সহজ হন তিনি।
২৯ রানের মাথায় জাকিরের উইকেট হারানো যেন দিশা হারিয়ে ফেললেন পরবর্তী ব্যাটাররা। এরপরের ১৮ রান তুলতেই আরও ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। বাজেভাবে আউট হয়ে ফিরেছেন মাহমুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
জাকিরের দেখানো পথে হাঁটলেন আগের ম্যাচে ৮৬ করা ওপেনার জয়ও। অ্যাজাজ প্যাটেলের বল ঠেকাতে গিয়ে শর্টলেগে টম ল্যাথামের হাতে ধরা পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার। ৪০ বলে ১৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান আগের টেস্টের প্রথম ইনিংসের সেরা ব্যাটার।
জয়কে ফেরানোর পর ব্যাক টু ব্যাক বল করতে এসে মুমিনুলকেও সাজঘরের পথ দেখান প্যাটেল। এটি তার দ্বিতীয় শিকার। বাঁহাতি কিউই স্পিনারের করা বল মুমিনুলের ব্যাটে চুমু দিয়ে উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ হয়।
আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো অধিনায়ক শান্ত এই ম্যাচে দলের হাল ধরতে পারলেন না। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে শান্তকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান স্যান্টনার। ১৪ বলে ৯ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
৪৭ রানে ৪ টপ অর্ডারকে হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে বাংলাদেশকে কিছুটা এগিয়ে মুশফিক ও শাহাদাত। লাঞ্চ-বিরতিতে যাওয়ার আগে স্বাগতিকদের স্কোরকার্ডে ৩৩ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটার।
বিরতির পর এসে সমর্থকদের হতাশ করেন মুশফিক। প্রথম কোনো বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে ফিল্ডিংয়ে বাঁধা দেয়ার অপরাধে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউটের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরত যান এই ডানহাতি ব্যাটার।
ইনিংসের ৪১তম ওভারে কাইল জেমিসনকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ঠেকিয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু ডানহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে বল পিচে পড়ে উইকেটের পেছন দিকে যাচ্ছিল। মুশফিক ভেবেছেন, বলটি হয়তো স্টাম্পে আঘাত করতে পারে। যে কারণে তিনি হাত দিয়ে বলটি ঠেকিয়ে দেন। এতে কিউই ফিল্ডাররা আম্পায়ারের কাছে আউটের আবেদন জানান।
ফলে রিভিউ দেখে টিভি আম্পায়ার মুশফিককে ইতিহাসের ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট ঘোষণা দেন। ফলে দেখেশুনে খেলে ৮৩ বলে ৩৫ রান করে ফিরলেন এই ডানহাতি। অপ্রত্যাশিত এই আউটে মুশফিক-শাহাদাতের করা ১৫১ বলে ৫৭ রানের জুটিটি ভেঙে যায়।
মুশফিকের ফেরার পর তার সঙ্গে ৫৭ রানের জুটি গড়া শাহাদাত বেশিক্ষণ টিকলেন না। দলীয় স্কোরকার্ডে ১৯ রান যোগ করতেই ফিরলেন এই ডানহাতি ব্যাটার। নিজের নামের পাশে ৩১ রান লিখিয়ে গ্লেন ফিলিপসের বলে উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ হন শাহাদাত।
এরপর মাঠে নেমে শুধু হতাশাই বাড়িয়েছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান। ১৬ বলে ৭ রান করে ফিলিপসের বলে স্যান্টনারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। আগের ম্যাচে ফিফটি করা মেহেদী হাসান মিরাজ করেন ২০ রান।
লোয়ারঅর্ডারে ৬ রান করেছেন তাইজুল ইসলাম। ১০ রান করেন শরিফুল ইসলাম। অপরাজিত থেকে ১১ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন নাঈম হাসান।

You might also like