নগরজুড়ে শহীদের অপরাধ নেটওয়ার্ক
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ ডাকাত শহীদ। কেউ চেনেন চোর নামে। কেউবা ছিনতাইকারী। সিলেটের অপরাধ জগতে বিচরণ করা এই শহীদ এখন ছিনতাই ও ডাকাত নেটওয়ার্কের গডফাদার। নিজে এক সময় ছিনতাই করতো। এখন নিজে অপারেশনে নামে না। অপারেশন করে তার সহযোগীরা। নিয়ন্ত্রণ করে শহীদ নিজে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন চিহ্নিত ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পারে শহীদের নাম। দীর্ঘদিন ধরে তার নামটি আড়ালে ছিল। নতুন করে অপরাধের গডফাদারের নাম আসায় পুলিশ শহীদকে খুঁজছিল। কিন্তু তার হদিস পাচ্ছিল না।কোতয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে নগরির বন্দরবাজার রংমহল টাওয়ারের কাছ থেকে ডাকাতদের আটক করে পুলিশ। এরপর থানায় জিজ্ঞাসাবাদে তারা গডফাদার হিসেবে জানায় শহীদের নাম। শুক্রবার ওসি আলী মাহমুদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম অভিযান শুরু করে।অভিযানের সময় নগরির ৩০নং ওয়ার্ডের জৈনপুর এলাকার একটি বাসা থেকে শহীদকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে পুলিশ শহীদকে তার অপরাধ নেটওয়ার্ক এবং সহযোগীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শহীদ তার ৩ সহযোগীর নাম প্রকাশ করে। পুলিশ তাদেরকেও গ্রেপ্তার করেছে।কোতয়ালি থানার ওসি আলী মোহাম্মদ মাহমুদ জানান, এক সময় নিজেই ছিনতাই করতো আব্দুস শহীদ। কয়েক বছর ধরে সে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করে। তার নেটওয়ার্কের কে কোথায় যাবে, কী করবে এসব বিষয়ে তদারকি করে সে। পাশাপাশি কোনো সদস্য গ্রেপ্তার হলে তাকে ছাড়িয়ে আনার কাজও করতো। ফলে তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের বেশিদিন জেলে থাকতে হতো না। ওসি জানান, ভয়ঙ্কর অপরাধী শহীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সিলেটের কোতয়ালিসহ বিভিন্ন থানায় ৯টি মামলা রয়েছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়।
গ্রেফতার এড়াতে শহীদ দক্ষিণ সুরমার শহরতলীতে অবস্থান করে পুরো নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করতো। আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, মৌলভীবাজার সনকাঁপন গ্রামের বাসিন্দা মৃত নীল মিয়ার ছেলে শহীদ। প্রায় ১৫ বছর ধরে সে সিলেট নগরির দক্ষিণ সুরমা, টুকেরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেছে। প্রথমে বন্দরবাজার এলাকার ছিঁচকে অপরাধী ছিল শহীদ। মোবাইলসহ পথচারীদের পকেটমারের ধান্ধায় ব্যস্ত থাকতো। এসব অপরাধ করতে গিয়ে এরই মধ্যে কয়েকবার ধরাও পড়ে। এক সময় বন্দরবাজার এলাকা নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বিভিন্ন রুটে সিএনজি অটোরিকশায় ছিনতাই করতে তার নেতৃত্বে একটি টিম গড়ে ওঠে। ওই টিমের সদস্যরা দিনের বেলা চুরি, ছিনতাই ও রাতে ডাকাতি করতো। ওই সময় মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে, নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পর শহীদ দক্ষিণ সুরমায় চলে যায়। ওখানে সে তার বাহিনীতে আরও সদস্য বাড়ায়। এখন তার নেতৃত্বে ১৫/১৬ জনের ছিনতাইকারী দল নগরিতে নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। এসব অপরাধ করতে গিয়ে গত একমাসে কোতয়ালি পুলিশ ৭/৮ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।কোতয়ালি থানার এসআই মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, বন্দরবাজার থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাত দলের সদস্যরা তাদের গডফাদার হিসেবে শহীদের নাম জানায়। পরে ওই ডাকাতদের ভাষ্যমতে শহীদকে তার দক্ষিণ সুরমার ভাড়াটিয়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শহীদকে আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চায়। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার অপরাধের পুরো তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এসআই মিজান।
এদিকে, গত শুক্রবার গ্রেপ্তার হওয়া শহীদের মুখ থেকে তার অপরাধ সিন্ডিকেটের আরও ৩ সদস্যের নাম জানতে পারে পুলিশ। এরপর বিকেলে ও রাতে অভিযান চালিয়ে তার সহযোগী ৩ জনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। ওরাও নগরির পরিচিত মোবাইল চোর ও ছিনতাইকারী। নগরির শেখঘাট, বন্দরবাজার, টুকেরবাজারসহ কয়েকটি এলাকায় তারা ছিনতাই করে বেড়ায়। পুলিশ জানায়, শফিকের দেয়া তথ্যমতে আটক করা হয় ভয়ঙ্কর অপরাধী সুনামগঞ্জের ছাতক থানার ঝিগলী রাইতলা গ্রামের নুর উদ্দিনের ছেলে শফিক মিয়াকে। সে বর্তমানে দক্ষিণ সুরমা ও জালালাবাদ থানার বাদেয়ালী এলাকায় বসবাস করছিল। পরে নগরির থানার খুলিয়াপাড়া নীলিমা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা গেদন মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া ও দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার কুটি মিয়ার ছেলে পাবেল ওরফে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা নগরির বিভিন্ন এলাকায় সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে মোবাইল, মহিলাদের ভ্যানেটি ব্যাগ, পকেটের টাকা ছিনতাই করে থাকে।ওসি জানান, শফিকের নেতৃত্বে থাকা ছিনতাইকারীরা যেসব মোবাইল ছিনতাই করতো সেগুলোর আইএমআই নম্বর তারা প্রযুক্তিগত কৌশলে পরিবর্তন করে ফেলে। এরপর ছিনতাই করা এসব মোবাইল তারা সিলেটের বাজারে বিক্রি করে।তিনি জানান, গডফাদার গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।