নগর বিএনপির কাউন্সিল ঘিরে সরব নগর নেতারা
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে সিলেট বিএনপি’তে নানা হিসেব-নিকেশ। পর্দার আড়ালে থাকা নেতারাও সক্রিয় হয়ে ওঠছেন কাউন্সিলকে ঘিরে। জেলা বিএনপি’র কাউন্সিলের পর ঢাকঢোল পিটিয়ে জেলা ও নগর যুবদলের কাউন্সিল শেষ হয়েছে। এখন পালা নগর বিএনপি’র। আর সম্মেলন ও কাউন্সিল শেষ করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন দলীয় নেতারা।নগর বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে তারা ২৭টি ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিল শুরু করতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তারা অন্তত ৬টি ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিল করতে প্রস্তুতিও শেষ করে রেখেছেন। ওয়ার্ডের নেতৃত্ব কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে। চাপিয়ে দেয়া কোনো নেতৃত্ব এখন আর কেউ মানে না। এ নিয়ে আছে প্রতিযোগিতাও। ওয়ার্ডপর্যায়ের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
নগর বিএনপি’র পুরাতন কমিটি ভেঙে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে আহ্বায়ক করা হয় বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকীকে। আর সদস্য সচিব হন মিফতাহ্ সিদ্দিকী। ৩৫ সদস্যের কমিটিতে ১৩ জন যুগ্ম-আহ্বায়ক। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর অনেকটা সরবে কাজ শুরু করা হয়।
এরই মধ্যে পরপর দু’দফা বন্যার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্তও হয়। মাঝখানে ওয়ার্ড কমিটি গঠনে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। এর কারণ ছিল নিজেদের মধ্যে বিরোধ। দু’মাস আগে এই বিরোধ প্রকাশ্যেও আসে। পরবর্তীতে এতে হস্তক্ষেপ করেন দলের হাইকমান্ড। নগর নেতাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে বৈঠক করা হয়। দেয়া হয় কমিটি গঠনের সময়সীমাও। হাইকমান্ডের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিলেটে ফিরে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেন নগর বিএনপি নেতারা। ঐক্যবদ্ধভাবে তারা নগর কমিটিকে ঢেলে সাজাতে সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ দেন। আর এই কাজের ফলাফল আসতে শুরু করেছে।
নগর বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন নগরির ২৭টি ওয়ার্ডের সবক’টি পাড়া কমিটি প্রস্তুত। প্রতিটি পাড়ায় ১১ জনকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এই পাড়া কমিটির নেতারা হবেন ওয়ার্ডের ভোটার। পাড়া কমিটি শেষ হওয়ার পর এবার ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিলে হাত দেয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিল করা হবে।
নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী জানিয়েছেন সিলেটে বিএনপিকে তৃণমূল থেকে সাজানো হচ্ছে। এটি আগে তেমন ছিল না। এখন পাড়া কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে প্রতিযোগিতা চলছে। আর ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে পাড়াভিত্তিক নেতারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি জানান নগর বিএনপি এখন অনেক শক্তিশালী। দলীয় কর্মসূচিতে এখন প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল সহকারে এসে যোগদান করেন। আর এসব মিছিলে কর্মী সমাগমও বেশি থাকে। দিনে দিনে আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে বিএনপি সিলেটের রাজপথ কাঁপাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে নগর বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী তাদের চলতি মাসের মধ্যেই ওয়ার্ড কাউন্সিল শেষ করার কথা। কিন্তু বাস্তবতায় এ মাসে ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করা যাবে না। আগামী মাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। এক্ষেত্রে তারা নগর বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিল অক্টোবরের শেষদিকে আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা করছেন। সময় একটু বেশি নিলেও মাঠপর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ নগর বিএনপি সাজাতে নেতারা কাজ করছেন।তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে নগর বিএনপি’র অধিভুক্ত ২৫নং ওয়ার্ড, ১৮নং ওয়ার্ড, ৭নং ওয়ার্ড, ১২নং ওয়ার্ড, ২৭নং ওয়ার্ড সম্মেলন ও কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুত। প্রতিদিন আরও নতুন নতুন ওয়ার্ডের প্রস্তুরিত তালিকাও আসছে। নগর বিএনপি গঠিত ৯টি সাংগঠনিক টিমের নেতারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।নগর বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকী জানান, আমরা প্রস্তুত। ওয়ার্ড শেষ হলে আগামী মাসের মধ্যে নগর সম্মেলন করতে পারবো। সে লক্ষ্যেই আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির সকল সদস্য হাইকমান্ডের নির্দেশ পালনে দলীয় কার্যক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
এদিকে নগরে বর্ধিত ওয়ার্ডসমুহ বিএনপি’র সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে আসবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নগরে আরও ১৫টি ওয়ার্ড বাড়ানো হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু দলীয়ভাবে বিএনপিসহ কোনো রাজনৈতিক দলই এসব ওয়ার্ডকে কাছে টানেনি। ফলে এরা এখন ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।বর্ধিত ওয়ার্ডসমুহের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আগে তারা কেউ সদর, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার অধীনে ছিলেন। এখন এসব উপজেলার সঙ্গে নগরের বর্ধিত ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক স্থানে তারা নিজেরা নিজ উদ্যোগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক কর্মকা- চালাচ্ছেন। ভোটের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব ওয়ার্ডে গেলে সাংগঠনিকভাবে যাওয়া নেতাকর্মীদের সংখ্যা খুবই কম।নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, আমরা ২৭টি ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিলের আয়োজন করতে যাচ্ছি। পরবর্তীতে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা পেলে বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডে কাজ শুরু করা হতে পারে। সেটি সময়ই বলে দেবে।