নতুন দল গঠনের ঘোষণা মাহাথিরের

আন্তজার্তিক ডেস্ক
সত্যবাণী

মালয়েশিয়া: আবারও নতুন দল গঠনের ঘোষণা দিলেন মাহাথির মোহাম্মদ।এক সংবাদ সম্মেলনে ৯৬ বছর বয়সে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন মাহাথির।তবে এখনও দলটির নাম প্রকাশ করা না হলেও দলটি মালয় ভিত্তিক হবে বলে জানান তিনি।খবর মালয় নিউজ’র।বর্তমানে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন তারই ছেলে দাতুক সেরি মুখরিজ বিন মাহাথির।দীর্ঘদিন রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে দূরে সরে ২০১৮ সালে নতুন দল গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা মাহাথির মোহাম্মদ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়ে চমক দেখিয়ে দেন তিনি।এরপর রাজনৈতিক ধরাশায়ী হয়ে তার দলের মন্ত্রী মহিউদ্দীন ইয়াসিন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের আগে তার গঠন করা রাজনৈতিক দল বেরসাতু থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।পদত্যাগ পত্র চ্যালেঞ্জ করলেও আর ফিরে যেতে পারেননি দলের চেয়ারম্যানের পদে।

দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকের করা দুর্নীতির অভিযোগে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা মাহথির মোহাম্মদের সাবেক দল বারিশান ন্যাশনাল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় আসার পরপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়।মালয়েশিয়ার রাজনীতির গুরু বলে স্বীকার করেন সেদেশের রাজনৈতিক নেতারা। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা মাহাথির মোহাম্মদের সাবেক দল বারিশান ন্যাশনাল থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের দুর্নীতির অভিযোগে।এর পর মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় আসার পরপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়।১৯৪৬ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে রাজনীতিতে আসেন মাহাথির মোহাম্মদ। তখন ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে উত্তাল মালয়েশিয়া।ওই সময়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেন তিনি।দলের মূল আদর্শ ছিল জাতীয়তাবাদ। ইউনিভার্সিটি অব মালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেছেন মাহাথির। এরপর জন্মভূমি কেদাহ রাজ্যে ৭ বছর চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।মাহাথির ধীরে ধীরে ‘ডক্টর এম’ নামে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ইউএমএনও দলের হয়ে ১৯৬৪ সালে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।তবে ১৯৬৯ সালে ঘটে ছন্দপতন। দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পার্লামেন্টে

আসন হারান তিনি।মালয় সম্প্রদায়কে অবহেলার অভিযোগ তুলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেংকু আবদুল রহমানের কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন মাহাথির। এতেই ক্ষমতাসীন দলের রোষের মুখে পড়েন তিনি।১৯৯৮ সালে প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।২০০৩ সালে মাহাথির পদত্যাগ করেন।২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাশনাল সরকারকে বিদায়ের জন্য ডা. মাহাথির মোহাম্মদ সব বিরোধী দলকে নিয়ে এক মহা ঐক্যজোট গঠন করেছিলেন।নাম দেয়া হয় পাকাতান হারপান।এর নেতৃত্ব দেন মাহাথির মোহাম্মদ। তার নেতৃত্বে জোট জয় পায়।জোট গঠনের আগে মাহাথিরের সঙ্গে আনোয়ারের চুক্তি হয় যে পাকাতান জয়ী হলে পরবর্তী সরকারের দুই বছরের জন্য নেতৃত্ব দেবেন মাহাথির মোহাম্মদ।আর এরপর আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব হস্তান্তর করবেন।

মাহাথিরের সঙ্গে আনোয়ারের চুক্তি হয় যে পাকাতান জয়ী হলে পরবর্তী সরকারের দুই বছরের জন্য নেতৃত্ব দেবেন মাহাথির মোহাম্মদ। আর এরপর আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব হস্তান্তর করবেন। জোট গঠনে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আনোয়ার ইব্রাহিমের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে আগ্রহী নন মাহাথির। বরং বিজয়ী হয়ে তিনি সেরি ডা. ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইলকে উপপ্রধানমন্ত্রী করেন। মাহাথিরের দল সরকার থেকে পদত্যাগ করেছে।পাকাতান হারপান জোটের প্রধান দল পিকেআরের প্রধান আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে মালয়েশিয়ায়।

এক সময়কার নিজের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী, সহকর্মী আনোয়ার ইব্রাহিমকে জেলে দিয়ে আবার তারই দলের একজন হয়ে পাকাতান হারপান নামক জোট বেঁধে মাহাথির মোহাম্মদের নির্বাচনে বিজয় লাভ ও সরকার গঠন রাজনৈতিক অঙ্গনের এক বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।২০১৮ সালের শেষের দিকের সে ঘটনায় বিশ্বব্যাপী রাজনীতিতে সৌহার্দ্য, সহনশীলতা এবং গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিল। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আচমকা পদত্যাগের মাধ্যমে সরকার পতন ঘটিয়ে আলোড়ন তুলেছেন মালয়েশিয়ার বয়োবৃদ্ধ প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ইতোমধ্যে কয়েকটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক ১২ বছরের জেল প্রদান করেন দেশটির আদালত। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকও ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদের শিষ্য।এদিকে মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক টানাপোড়েনে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে নির্বাচন দিতে পারে বলে আলোচনা চলছে দেশটিতে।মাহথির মোহাম্মদের নতুন দল আগামী নির্বাচনে সরকার গঠন করতে পারে কিনা,তা নিয়ে দেশটিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

You might also like