নদীভাঙ্গনের কবলে জুড়ী এলাকার বাড়িঘর

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা জুড়ীনদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বেশ কিছু বাড়ীঘর। নদীগর্ভে নিজেদের পৈতৃক ভিটেমাটি, ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় লোকজন অন্যত্র আশ্রয় নেন। আবার ভাঙে, আবার স্থানান্তর হন। এভাবে বারবার স্থানান্তর প্রক্রিয়া চলতে থাকে। লোকজন হারাতে থাকেন স্থায়ী ঠিকানা।
১৮ অক্টোবর বুধবার জুড়ী থেকে সংবাদদাতা জানান, সম্প্রতি আবারও শুরু হয়েছে ভাঙন। আবারও জনমনে দেখা দিয়েছে হতাশা। স্থানীয় বাসিন্দারা এ ভাঙন থেকে মুক্তি চান। বেড়ীবাঁধ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধ করে অবশিষ্ট বাড়িঘর ও ক্ষেতের জমি রক্ষার দাবী জানান তারা।
উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের জুড়ীরপার গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী জনগণ একই ইউনিয়নের বাসিন্দা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনকে বিষয়টি অবগত করেন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজারের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে নিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে নদীভাঙন কবলিত এলাকাটি পরিদর্শন করেন।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা জুড়ী নদী এ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়ে হাকালুকি হাওর হয়ে কুশিয়ারা নদীতে মিশেছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নদীতে স্রোত বেড়ে যায়। এখানে নদীতে বড় একটি বাঁক রয়েছে। এই স্থানে পানির স্রোতে দীর্ঘদিন যাবত ভাঙন চলতে থাকে। বর্তমান নদীতে এক সময় ৭০-৮০টি বাড়িঘর ছিল। নদীর ভাঙনে পর্যায়ক্রমে বাড়িঘর সরতে থাকে। বর্তমানে পুরো এলাকাটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট এলাকাতেও বর্তমানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে।
বিভিন্ন সময় নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এ এলাকার বাসিন্দা মখলিছ মিয়া, আয়াজুল ইসলাম, এবাদুল্লাহ, সুলতান মিয়া, সুলেমান আহমদ, হাইবুন বেগম, ময়না মিয়া, দুলা মিয়ার বাড়ি নদীতে হারিয়ে বর্তমানে নদী তীরে অস্থায়ী ঘরে বসবাস করলেও নতুন করে আশংকায় ভূগছেন।
এছাড়া ওই এলাকার একটি রাস্তা নদীতে বিলীন হয় অনেক আগে। লোকজন পার্শ্ববর্তী বাড়ির ভিতর দিয়ে যাতায়াত করতেন। প্রতি বছর স্থানীয়রা ৪০/৫০ হাজার টাকা খরচ করে নিজেরা বাঁশ দিয়ে রাস্তাটি মেরামত করতেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় ২ শ’ ফুট জায়গা বাঁশ দিয়ে সেতুর মত তৈরি করে তার উপর মাটি দিয়ে রাস্তা তৈরি করা। স্থানীয় বাসিন্দা জালাল উদ্দিন (লালা মিয়া) জানান, তার ভাতিজার বিয়ে উপলক্ষে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে এ সেতু তৈরি করা হয়েছে। এ সেতু দিয়ে ১০/১২টি বাড়ির লোকজন যাতায়াত করেন, এদের বিকল্প আর কোন রাস্তা নেই।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন বলেন, স্থানীয়দের মুখে কথাটি শুনে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে নিয়ে এলাকাটি ঘুরে দেখি। বাড়িঘর হারিয়ে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। এখনও মানুষ হতাশা ও আতংকে ভূগছে। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজারের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, বর্ষায় নদীতে পানির স্রোত বেশী থাকে। তাই নদীর গতিপথ বদলে যায়। পাশে থাকা ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

You might also like