নদীর পাড় দখল করে শতাধিক দোকানঃ যানজটে দুর্ভোগ

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ হবিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা খোয়াই নদী। একটা সময় নদীর স্রোত আর পানির গতিবেগ ছিল অনেক। নদীতে ধরা পড়তো নানা প্রজাতির মাছও। কিন্তু সেই সময় এখন আর নেই। নদীর পাড় দখল করে শত শত অবৈধ স্থাপনা তৈরী করছে একটি প্রভাবশালী মহল। শুধু তাই নয়, দখল করে তৈরী করা স্থাপনাগুলো দেয়া হচ্ছে ভাড়া। আর এতে করে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা গুণছে প্রভাবশালী মহল।
এছাড়াও ক্রমাগত দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে নদীটি। নদীর বিভিন্ন অংশে ফেলা হচ্ছে বাসা-বাড়ির ময়লা। যদিও হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীর পাড়ে গড়ে উঠা দোকানপাঠসহ যাবতীয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা। ইতোমধ্যে অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরী করে পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। দ্রুত অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে।
হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, সরেজমিনে খোয়াই নদীর মাছুলিয়া থেকে কামড়াপুর অংশ পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, নদীর দু’পাশে অবৈধভাবে অন্তত সহস্রাধিক দোকানপাঠ, বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন ধরণের স্থাপনা তৈরী করেছে প্রভাবশালী মহল। যদিও প্রভাবশালী মহলের বেশিরভাগই এগুলোতে থাকেন না। দিয়ে দিচ্ছেন মাসোহারা ভাড়া। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে টং দোকান। এর একেকটি টং দোকান থেকে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হয় বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্যই সুযোগ নিচ্ছে প্রভাবশালী মহলটি। কয়েক বছর পুর্বে খোয়াই নদীর মাছুলিয়া থেকে কামড়াপুর অংশ পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড ও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন। সে সময় উচ্ছেদ করা হয়েছিল কয়েক শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু অভিযানের পরপরই সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আবারো সেই পুরোনো স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনাগুলো।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, খোয়াই নদীর চৌধুরীবাজার এলাকায়ই শুধু ১৪০টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরী করেছেন তারা। তালিকা তৈরীর পর সেগুলো পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। এছাড়াও অন্যান্য স্থানে তালিকা তৈরীরও কাজ করছে তারা। তাদের ভাষ্যমতে, পর্যায়ক্রমে নদীর পাড়ে গড়ে উঠা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মন্তর গতির কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাদের মতে, প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা থাকতে পারে কর্মকর্তাদের। যে কারণে উচ্ছেদ করা হলেও ফের একই স্থানে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনাগুলো।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, চৌধুরীবাজার এলাকায় খোয়াই নদীর উত্তর পাড়েই কয়েক শ’ অবৈধ দোকান গড়ে তুলেছে একটি সিন্ডিকেট। আর সেসব দোকান তারা মাসিক হারে দিচ্ছেন ভাড়া। নদীর জায়গায় দোকানপাঠের মধ্যে চায়ের স্টল, ভাতের হোটেল, ওয়ার্কশপ, স্টেশনারিসহ নানা জাতের ব্যবসা রয়েছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানের কারণে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ রোড ও হবিগঞ্জ-বানিয়াচং রোডে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। যে কারণে দ্রুত অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা জরুরি হয়ে পড়ছে। একই সাথে নদীকে তার নিজের অবস্থানেও ফিরিয়ে দিতে হবে। তারা বলেন, প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, নদীর জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনার বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। ইতোমধ্যে খোয়াই নদীর চৌধুরীবাজার এলাকায় ১৪০টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরী করা হয়েছে। তালিকাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ পাওয়ার পর তালিকা অনুযায়ী অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে। তিনি বলেন, ১৪০টি উচ্ছেদের পর পরবর্তীতে আবারো তালিকা তৈরী করা হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এবার উচ্ছেদের পর উচ্ছেদকৃত জায়গা তারকাঁটার বেড়া দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

You might also like