নাটোরের জনসমাবেশে শাহরিয়ার কবির:৭১ ও ’৭৫ এর ঘাতকদের বাংলাদেশের মাটি থেকে নির্মূল করতে হবে’

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

নাটোর: শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নাটোর জেলা আয়োজিত শহরের দৈনিক উত্তরবঙ্গ বার্তা কার্যালয় চত্বরে এক জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নির্মূল কমিটির নাটোর জেলা শাখার সভাপতি ও নাটোরের পৌর মেয়র উমা চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শরিফুল ইসলাম রমজান, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান। এছাড়া সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও নির্মূল কমিটির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।প্রধান অতিথির বক্তব্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর খুনীরা ’৭১ এর ঘাতক দালাল য্দ্ধুাপরাধীদের এদেশে পুনর্বাসিত করেছিল। তাদের রাজনীতি বঙ্গবন্ধু সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল। ’৭১ ও ’৭৫ এর খুনীরা একজোট হয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চাইছে। যারা ইসলামী হুকুমতের নামে বাংলাদেশকে মোল্লা ওমরের আফগানিস্তান কিংবা জিয়াউল হকের পাকিস্তান বানাতে চাইছে বাংলাদেশের মাটিতে তাদের স্থান হবে না। তারা ইসলামী হুকুমত কায়েমের জন্য পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানে চলে যেতে পারে। তারা ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করলেও তার দুই কন্যাকে হত্যা করতে পারেনি। আজকে তারা ’৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার শ্লোগান দিয়ে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। ’৭১ ও ’৭৫-এর ঘাতকদের বাংলাদেশের মাটি থেকে নির্মূল করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু কন্যার সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করা। এর মধ্যে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হয়েছে, অনেকের বিচার চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছাড়াও দেশের উন্নয়ন সহ্য করতে পারছে না ’৭১ ও ’৭৫ এর হত্যাকারী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এজন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এ ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু কন্যা যদি ক্ষমতায় থাকেন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানের হাইকমান্ডেরও একদিন বিচার হবে।’
নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক শহীদজননী জাহানারা ইমামকে আমরা নাটোরে নিয়ে এসেছিলাম। তিনি সেদিন নাটোরের কাচারী মাঠে বর্তমানে যার নাম ঈদগাঁ মাঠ সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে ঘাতক-দালালদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছিলেন। এরপর নাটোর থেকে আমি সহ অনেকে ঢাকায় গণআদালতের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালীন উপস্থিত ছিলাম। এখনও তাদের ও তার বংশধরদের পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। যতদিন না বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ একাত্তরের চেতনায় একতাবদ্ধ না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই দেখে আসছি বাংলাদেশের যত অর্জন আছে সব কিছুতে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ও তাদের দোসর বিএনপি। মৌলবাদীরা ইসলামের নামে নানা অপকর্ম করছে। সেই অপকর্ম রুখে দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, ‘শহীদজননী জাহানারা ইমাম শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য এই সংগঠনটি করেননি।রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যখন এই আন্দোলনে যুক্ত হয় তখন এর নাম ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমম্বয় কমিটি’। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত ৭২টি সংগঠন মিলে এই মঞ্চটি তৈরি করেছে। আমাদের লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশ। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা অসাম্প্রদায়িকতার বাংলাদেশ, সাম্যের বাংলাদেশ, মানবিকতার বাংলাদেশে পৌঁছাতে না পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্মব্যবসায়ীরাই লাভবান হবে।

You might also like