নির্যাতনের পর ভারসাম্য হারিয়ে শিকলবন্দি মারুফ

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ চুরির অভিযোগে গাছে বেঁধে মাদ্রাসা ছাত্রকে নির্মম নির্যাতনের কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলবন্দী জীবন কাটছে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের চাইরগাঁও গ্রামের দিনমজুর সফিক মিয়ার বড় ছেলে শিশু মারুফের।ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি নির্যাতনের ঘটনার পর শিশুটির অস্বাভাবিক আচরণের কারণে সারাদিন শিকল দিয়ে রাখতে হয় তাকে। সন্তানের এমন অবস্থায় নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি শিশু মারুফকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েছেন অসহায় পরিবারটি।দোয়ারাবাজার থেকে সংবাদদাতা জানান, ভূক্তভোগী পরিবারটি জানিয়েছে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই মানবেতর দিন কাটছে শিশুটির। চুরির অভিযোগে প্রতিবেশীর পাশবিক নির্যাতনের পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিরূপায় হয়ে শিকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে তাকে। ঘুমানোর সময় স্টীলের খাটে একপাশে লোহার শিকল দিয়ে হাতপায়ে বেড়ি পরানো হয়। বাইরে বের করলে লোহার শিকল ধরে রাখতে হয়। ২৪ ঘন্টা থাকতে হচ্ছে শিকলবন্ধী অবস্থায়। মারুফের বাবা একজন দিনমজুর। সে গ্রামের দিনেরটুক দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, গত ৭ ডিসেম্বর গাছের সাথে বেঁধে পাশবিক নির্যাতন করা হয় মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মারুফকে। মিষ্টি আলুর ডাঁটা চুরির অপবাদে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুল্লাহ ও তাঁর আত্মীয়রা। নির্মম নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসে ঘটনাটি। নির্যাতিত মারুফের পরিবারের দাবি ওইদিন সকালের ঘটে যাওয়া তুচ্ছ ঘটনার জেরে আধিপত্য দেখাতে তাদের সন্তানকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের পর থেকে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে তাদের সন্তান। চেনাজানা সবার সাথেই অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো সে। অনেক চিকিৎসা করেও সুস্থ হচ্ছে না শিশুটি। এই অবস্থায় মারুফের ভবিষৎ নিয়ে শঙ্কিত তারা। নির্যাতনকারীর বিচারের পাশাপাশি ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা চেয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
নির্যাতনের স্বীকার মারুফের মা রাবেয়া বেগম বলেন, আমার ছেলের কাছে আব্দুল্লাহর স্ত্রী আলুর ডাঁটা বিক্রি করেছিল। তাই সে ক্ষেত থেকে ডাঁটা তুলে এনেছিল। এই ঘটনায় আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে খুব মারধোর করে আব্দুল্লাহ ও তার আত্মীয়রা। নির্যাতনের পর থেকে আমার ছেলের মাথায় সমস্যা এসেছে। সে কাউকে ঠিক মতো চিনতে পারে না। আমি গরীব মানুষ। নিজেরাই চলতে পারি না। ছেলের চিকিৎসা নিয়ে বড় দুঃশ্চিন্তায় আছি। ছেলেকে ভালো না করলে তার ভবিষ্যত অন্ধকার।মারুফের পিতা সফিক মিয়া বলেন, অমানবিক নির্যাতনের কারণে আমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে। অনেক চিকিৎসা করেও তাকে সুস্থ করে তুলতে পারছি না। নির্যাতনের পর গ্রামের মানুষের কাছে বিচারের জন্য গিয়েছি। কেউ আমার বিচার করে দেয়নি। আমি নিরূপায় হয়ে আদালতে গিয়েছি। প্রতিপক্ষ ক্ষমতাধর, টাকাওয়ালা। নির্যাতনের ন্যায়বিচারের পাশাপাশি ছেলের সুচিকিৎসায সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চান তিনি।নির্যাতনের ঘটনায় একটি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আব্দুল্লাহসহ অন্য আসামিরা জামিনে রয়েছে। তবে নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হচ্ছে বলে জানান দোয়ারাবাজার থানার ওসি নন্দলাল ধর।

You might also like