পরলোকে গাফ্ফার চৌধুরী তনয়া বিনীতা চৌধুরী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: কিংবদন্তী সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মেয়ে বিনীতা চৌধুরী বিনু মৃত্যুবরণ করেছেন। বুধবার ১৩ই এপ্রিল স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় ইউসিএল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহ ই ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৪ বছর। ১৯৬৬ সালে জন্ম নেয়া বিনীতা চৌধুরীর শরীরে গত জানুয়ারী মাসে দুরারোগ্য ক্যানসার ধরা পড়ে। ডাক্তার বলছিলেন আগ্রাসী এই ক্যানসারের ধরণই হলো রোগিকে মৃত্যুর কাছে নিয়ে যাওয়া। এজাতীয় ক্যানসার নিয়ে রোগি বড়জোড় এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, এমনটাও ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্তু না এক বছর নয়, রোগ ধরা পড়ার চার মাসের মধ্যেই এ ধরাধাম ত্যাগ করতে হয় বিনীতাকে। সম্প্রতি শারিরীক অবস্থার অবণতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই সপ্তাহ হাসপাতালে অবস্থানের পর পরপারে পাড়ি জমান তিনি।

আইন অঙ্গনে কর্মরত উচ্চ শিক্ষিতা বিনীতা চৌধুরী ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর চতুর্থ সন্তান। মেয়ের মৃত্যুর সময় চার মেয়ে ও এক ছেলের পিতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীও কোভিড আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত এখনও চিকিৎসাধীন আছেন। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতাল শয্যায় হাউমাউ করে কেঁদেছেন বয়োবৃদ্ধ কিংবদন্তী সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরী।তাঁর সাথে ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায় অবিরত চোখের পানি ছেড়ে গাফফার চৌধুরী বলছেন, ‘পৃথিবী ছেড়ে যেখানে যাওয়ার কথা আমার, সেখানে আমার মেয়ে চলে গেলো আমাকে ফেলে। সন্তানের এই লাশের ভার আমি সহ্য করি কিভাবে?’

সেই ছোটবেলা থেকেই বিনীতা মাকে দেখে এসেছেন হুইল চেয়ারে। বয়স বাড়ার পর বাবা গাফ্ফার চৌধুরীও আক্রান্ত হন বিভিন্ন জটিল রোগে। বিনীতা নিজের জীবনের অনেক চাহিদা ত্যাগ করে মা-বাবার সেবায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন।  এরমধ্যেই কয়েক বছর আগে ১৯৭৪ সাল থেকে হুইল চেয়ারের স্থায়ী বাসিন্দা বিনীতার মা সেলিমা আফরোজ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। বিনীতার ধ্যান জ্ঞান হয়ে উঠেন তখন অসুস্থ বাবা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। কিংবদন্তী বাবার চিকিৎসা, লেখালেখি, সামাজিক যোগাযোগ, কমিউনিটি সম্পৃক্ততা সবকিছুই নিজে ম্যানেজ করতেন তিনি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর এতবড় গুরু দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখনও বিরক্ত হননি বিনীতা।

বিনীতার বড়বোন তানিমা চৌধুরী সত্যবাণীকে বলেন, ‘শরীরে দুরারোগ্য ক্যানসার ধরা পড়ার পরও বিনীতা মনোবল হারায়নি। তার ডাক্তার নিজেও অনেকটা আশ্চর্য হয়েছেন বিনীতার সাহস ও মনোবল দেখে’। তানিমা জানান, মৃত ঘোষণা করার পর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিনীতার শয্যাপাশে এসে তাঁকে শেষ বিদায় জানান।

তানিমা বলেন, ‘অসুস্থ মা-বাবার প্রতি খুবই কেয়ারিং ছিলো বিনীতা’। তিনি জানান, ১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর তাদের অসুস্থ মাকে নিয়ে বাবা গাফ্ফার চৌধুরী যখন লন্ডনে আসেন তখন বিনীতার বয়স ৮বছর। তাকে দেশে রেখেই গাফ্ফার চৌধুরী দম্পতি লন্ডনে আসেন। এর কয়েক মাস পড়েই ঘটে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনায় শিশু বিনীতা মানষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৯৭৫ এর শেষ দিকে বা ৭৬ এর প্রথম দিকে ব্রিটিশ সরকারের সহায়তায় বিনীতাকে লন্ডন নিয়ে আসা হয়।

ছোটবোন বিনীতার সাহসের প্রশংসা করে তানিমা বলেন, ‘মা-বাবার শারিরীক অসুস্থতায় সে কখনও ভেঙ্গে পড়তো না। মনোবল শক্ত রেখে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আব্বার সেবা করে গেছে সে।’

এদিকে, সদ্য প্রয়াত বিনিতা চৌধুরী বিনুর নামাজে জানাজার সময় এখনও ঠিক করা হয়নি। সময় ও স্থান নির্ধারনের পর সবাইকে জানানো হবে বলে সত্যবাণীকে নিশ্চিত করেছেন শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের লোকমান হোসেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব উর্মী মাজহার সত্যবাণীকে বলেন, হাসপাতালে কোভিড আক্রান্ত গাফফার ভাই সন্তানের এই মৃত্যুশোক কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন এটি নিয়েই এখন আমাদের দুঃচিন্তা। এই শোক যাতে কাটিয়ে উঠতে পারেন তার জন্য সবার প্রার্থনা কামনা করেছেন উর্মী মাজহার।

 

You might also like