পরিবানু
হামিদ মোহাম্মদ
‘পরিবানু’ উপন্যাস। লিখেছেন হামিদ মোহাম্মদ। সাম্প্রতিক লেখা গ্রন্থখানা বাংলাদেশের সমাজপ্রেক্ষিত, অপ্রাকৃতিক শক্তি, জাদুটোনায় বিশ্বাস ও শঠতায় আচ্ছন্ন সমাজচিত্র এবং দাম্ভিকতার জাল ছিন্ন করার নারীর লড়াই। চলচ্চিত্রশিল্পী সাহসিকা ‘পরিমনি’র জীবনের আংশিক উপাদান রয়েছে কাহিনির নানা পর্বে। উপন্যাসটি ধারাবাহিক প্রকাশ করছে ‘সত্যবাণী’। আমাদের ভরসা পাঠকদের ভাল লাগবে। –সম্পাদক, সত্যবাণী।
॥৭॥
আমার সেলাইয়ের কাজ ভালই চলছিল। সেলাইয়ের কাজে যাওয়ার-আসার পথে পরিচয় হয় এক তরুণীর সাথে। সে সাঁই সাঁই করে, অনেকটা মার মার করে হাঁটে। হাঁটতে পা ফেলে এমনভাবে, মনে হয় মেয়ে মানুষ নয়, এক ঘোড়া ছুটেছে। তার চলার সময় মানুষ চোখ সামলাতে পারে না, উল্টে উল্টে তাকায় সকলেই। মানুষ কমেন্টও করে ‘এ ঘোড়াখাং দেও নাকি!’ সে সকালে যায়, বিকেলে ফেরে। কেউ কেউ মনে মনে অপেক্ষা করে, ফেরার পথ চেয়ে থাকে। কিন্তু মুখে কেউ কিছু বলে না। এই মেয়েটি বা তরুণীর নাম বাবলি। বাবলি কাজ করে ‘পার্লার’ এ। এই প্রথম সিলেট শহরে বেশ কয়েকটি এমন ‘পার্লার’ শপ হয়েছে। পশ্চিমা বাতাস লেগেছে নিস্তরঙ্গ এই মফস্বল সিলেট শহরেও। অনেকের ধারণা এসব শপে আড়ালে অসামাজিক কায়-কারবার চলে, দেহ ব্যবসা হয়। তবে, মুখ ফুটে এসব কেউ উচ্চারণ করে না। কিন্তু মাথায় ঘুরে অমুক তমুক সকলের। মনের মাঝে ঘুরপাক খায় ভেতরে যাওয়ার, কী ঘটে, এসব দেখার জন্যও কেউ কেউ আকুপাকু কম করেন না। মাঝে মাঝে সাহস করে বেকুব কেউ উঁকিও দেন। যে যা-ই বলুন না কেন, কোন পুরুষ লোক এশপগুলোতে প্রবেশ করতে কেউ দেখেনি। কিন্তু পুরুষ মানুষ জড়িয়ে গল্প বানানো থামে না। এসব শপে নারীরাই তথা অল্পবয়সী তরুণীরা ঢুকে আবার সেজেগুজে বেরিয়ে যেতে দেখেছে লোকজন।
এই বেধড়ক চালচলনের বাবলির সাথে চলার পথেই পরিচয় হয় আমার। ‘পার্লার’ পেরিয়েই যেতে হয় আমাকে। কৌতুহল বশত একদিন বাবলির পার্লারের ভেতরে গিয়ে চমকে ওঠি। কী ভীষণ রকম জমঁকালো সাজ ভেতরের। পুরো শপের ভেতরটা ঝলসাচ্ছে রঙিন লাইটের ঝিলমিল আভায়, চোখ ধরানো যায় না, চোখ বুজে যায়। সেন্টের ঝাঁঝে চোখে জল নামে, নাকে তেজ এমন লাগে, মনে হয় এই হাঁচি ওঠে।
বাবলি একদৃষ্টে চেয়ে থাকে আমার দিকে। একটু পর আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, আপা একদিন সেজে দেখুন কী সুন্দর লাগবে আপনাকে।
বিয়ের দিন এমনি রকমই সেজেছিলাম। তবে বান্ধবীরা সাজিয়েছিল। এখন বিয়ের কনেকে পার্লারের মেয়েরা সাজায়, আগে পার্লার ছিল না। দিন বদলেছে। তবে বিয়ের দিনের সাজকে আমি অন্যভাবে, যেন একটা উপলক্ষ মনে হয়েছে, এটা যে মনের সাথে সম্পর্কিত, কোন দিন ভেবে দেখিনি আমি। (চলবে)