পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ফল রোববার : কে জিতলে কী হবে
আন্তজার্তিক ডেস্ক
সত্যবাণী
ভারতঃ রাজ্যরাজনীতিতে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ কী হাত বদল করতে যাচ্ছে,না-কি মমতার ছত্রছায়ায়ই থাকছে,সেই প্রশ্ন আর বেশি দূরে নয়।রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে এর প্রক্রিয়া। রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনা।একইসঙ্গে ভারতের চার রাজ্য ও এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোট হলেও লড়াইটা বেশ জমেছিল পশ্চিমবঙ্গে।আবার সেখানকার বুথফেরত কোনো জরিপই স্পষ্ট আভাস দিতে পারেনি। কাজেই এই রাজ্যের ভোটের ফলাফলের দিকে নজর সবার।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৯২টিতে ভোট হয়েছে এ আট দফায়।প্রার্থী মারা যাওয়ায় দুটি আসনে ভোট স্থগিত রয়েছে।রোববার মোট ১০৮টি কেন্দ্রে ভোট গণনা হবে।আর এর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য।পাশাপাশি গণনাকেন্দ্রে রাজ্য পুলিশও থাকবে।করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণনা শুরু হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।বিভিন্ন দলের যেসব রাজনৈতিক কর্মী ভোটগণনা কেন্দ্রে ঢুকবেন,তাদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এসবের কারণে এবারের ভোটগণনা অন্যবারের তুলনায় কিছুটা ধীরে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।তবে প্রথম তিন থেকে পাঁচ রাউন্ডের মধ্যেই ধারণা পাওয়া যাবে, কে কোথায় এগিয়ে।সাধারণত একেকটি রাউন্ডে ১৪টি করে বৈদ্যুতিক ভোটযন্ত্র গোনা হয়। তবে এবারে একেক রাউন্ডে গোনা হবে সাতটি করে ভোটযন্ত্র। এদিকে ভোটগণনা কেন্দ্রে গণনাকক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হতে পারে।করোনা ঠেকাতেই এসব পদক্ষেপ।
গত ২৭ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছিল। শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার। আট দফায় ভোট পড়ার অন্তর্বর্তী গড় ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ। নির্বাচন কমিশন অবশ্য এখনও জানায়নি, ভোট পড়ার চূড়ান্ত হার কত। তবে ভোটের হারের অন্তর্বর্তী যে হিসাব পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বলা যায়, অন্য কোনো রাজ্যে এত ভোট পড়েনি। পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতার মাত্রাও অন্যবারের তুলনায় ছিল অনেক বেশি। বিজেপি মরিয়া হয়ে লড়াই চালিয়েছে রাজ্যটিতে। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও নেমেছিল কোমর বেঁধে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় বারবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। অমিত শাহ ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১২ দফায় পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে জিততে যে টাকা খরচ করেছে, তাও অতীতের কোনো নির্বাচনে দেখা যায়নি। এ জন্য তৃণমূল নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার অভিযোগও করেছেন, বিজেপি রাজ্যে টাকা ও করোনা ছড়াচ্ছে। যদিও লাভবান হয়েছে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা।
এবার যে চার রাজ্যে ভোট হয়েছে সেগুলো হলো- পূর্ব ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম এবং দক্ষিণ ভারতে তামিলনাড়ু ও কেরালা। এছাড়া দক্ষিণ ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পদুচেরিতেও ভোট হয়েছে। এরমধ্যে বুথফেরত বেশির ভাগ জরিপের তথ্যমতে, তামিলনাড়ুতে ক্ষমতায় আসতে চলেছে এমকে স্টালিনের দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগামের (ডিএমকে) নেতৃত্বাধীন জোট। কেরালায় বামপন্থীদের এবং আসামে বিজেপি জোটের ক্ষমতায় টিকে থাকার আভাসও পাওয়া গেছে। এদিকে পদুচেরিতে বিজেপি-কংগ্রেসের লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। তবে বুথফেরত জরিপ বলছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটই সরকার গঠন করবে এখানে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে স্পষ্ট কোনো আভাস দিতে পারেনি কোনো বুথফেরত জরিপই।
এবার যেসব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোট হয়েছে, সেসব এলাকায় মোটের ওপর ভারতের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের বাস। এরমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখানে ভোটও রয়েছে সবচেয়ে বেশি। এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মোট ভোটার ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৮৩২ জন। তামিলনাড়ুতে ভোটার রয়েছেন ৬ কোটি ২৮ লাখ, কেরালায় ২ কোটি ৬৭ লাখ, আর আসামে ২ কোটি ৩২ লাখ। আশা করা হচ্ছে, এসব রাজ্যে সকাল ৮টায় ভোট গণনা শুরুর পর মোটামুটিভাবে দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যে বোঝা যাবে, ফলাফল কী হতে চলেছে; কার দখলে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।