পানি কমতে থাকলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে চার-পাঁচ দিন সময় লাগতে পারে পাউবো বন্যাঃ নগরীতে বিশুদ্ধ পানির সংকট

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেটে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, পিয়াইন নদ-নদীর পানি আগের থেকে অনেকটাই কমে গেছে। তবে এসব এলাকায় পানি কমলেও জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়ে চলছে। নগরীর বেশিরভাগ বাসা-বাড়ি থেকে এখনো পানি নামেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, অব্যাহত পানি কমতে থাকলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে কমপক্ষে ৪/৫ দিন লাগতে পারে। অন্যদিকে পানি নামার সাথে সাথে দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসিদের। নানা রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে।গত ১১ মে থেকে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এক এক করে মহানগরীর প্রায় ২০টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। নগরীর বেশকিছু লোক আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। আবার অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সিলেট নগরীর সুরমার তীরবর্তী ও নিচু এলাকা ডুবে যায় বন্যার পানিতে। শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপাড়, রামের দিঘীরপাড়, মোগলটুলা, খুলিয়াটুলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, সাধুরবাজার, টেকনিক্যাল রোড, বারখলা, কায়েস্তরাইল, মোমিনখলা, মুছারগাঁও, বরইকান্দি, লাউয়াই, পিরোজপুর, আলমপুর, খোজারখলা ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে পানি উঠে। এসব এলাকায় অনেক বাসা-বাড়িতে কোমর সমান পানি ছিল। শনিবার সন্ধ্যে থেকে পানি কমা শুরু হয়েছে। তবে এখনো বাসা-বাড়ি থেকে পুরো পানি নেমে যায়নি।

গতকাল সরেজমিনে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, যেসব এলাকার বাসা বাড়ি বা দোকানপাটে পানি প্রবেশ করেছিল, তা ধোয়ামোছা করছেন ভুক্তভোগী জনসাধারণ। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অনেক বেগ পেতে হবে বাসিন্দাদের।নগরীর মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা রিনা সিংহ জানান, গতকাল রাতেই তার ঘর থেকে পানি নেমে গেছে। তারপরও ঘরে প্রচুর পানি আটকে আছে। এসব পানি সেচে বের করছেন। বারান্দায় এখনো হাঁটুপানি। পুরোপুরি পানি নামতে আরো সময় লাগবে বলে জানান তিনি।নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল আমিন জানান, উপশহর এলাকার অনেক জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ নেই। এখন সড়কের হাঁটুপানি। সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ পানি নিয়ে সংকটে পড়েছেন। বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এসব এলাকায় কবে পুনরায় বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু হবে, তা তিনি জানেন না।ঘাসিটুলা এলাকার বাসিন্দা আলমাছ আলী জানান, আমার ঘরে যখন পানি প্রবেশ করেছিল, তখন গ্যাসের লাইনে পানি ঢুকে যাওয়ায় গ্যাস-সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় না আসা পর্যন্ত রান্না-বান্না নিয়ে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হবে।সিলেট শহরতলীর টুকেরাবজার শেখপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, পানি নামতে আরো সময় লাগবে। এই ২/৩দিন আমাদের সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হবে।অপরদিকে সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কান্দিগাও, মোগলগাঁও, খাদিমনগর, হাটখোলা ও জালালাবাদ ইউনিয়নে পানিবন্দী হয়ে রয়েছে ৯০ ভাগ মানুষ। চরম মানবেতর দিন পার করতে হচ্ছে পানিবন্দীদের।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, দিন দিন আবহাওয়ার উন্নতি হচ্ছে। ৪/৫ দিন আগেও যেখানে কয়েক শ’ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১২ মিলিলিটার। আগামীকাল সোমবার থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসবে বলে জানান তিনি।সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শুক্রবার ও শনিবার দিনভর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বন্যার্তদের তালিকা করেন। তালিকা অনুযায়ী খাদ্য সহায়তা দ্রুত পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে তিনি কাজ করছেন বলে জানান।পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, যদিও প্রধান নদ-নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপরে রয়েছে। তবে বর্তমানে বন্যার পানি কমছে। ফলে সিলেটে আপাতত আর বন্যা পরিস্থিতি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় পানি নেমে যেতে আরও ৪/৫ দিন লাগতে পারে। বন্যায় যে সব স্থানে বাঁধ ভেঙেছে; সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে আবার নতুন করে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে।

You might also like