প্রকল্পের মেয়াদ শেষের পথে থাকলেও ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ এগিয়েছে মাত্র ২২ ভাগ

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ ২ হাজার ৩ শ’ ৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে চলছে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। তবে এখনও পর্যন্ত মাত্র ২২ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমে নকশায় ভুল ছিলো। সেটি ঠিক করে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। তাই শেষ হতেও দেরি হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়ানোর আবেদন করবেন তারা।গত ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এমপি’র উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রকল্প পরিচালক এসব তথ্য জানান।সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও পেশাজীবী ব্যক্তিদের সঙ্গে ঢাকায় মতবিনিময় করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এমপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি নিজে।

এ সময় তিনি সিলেটজুড়ে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে অসন্তোষ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর তাগিদ দেন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব এনামুল হাবিবের পরিচালনায় এ মতবিনিময় সভায় সিলেটের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, স্বাস্থ্য প্রকৌশল এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলীরা।তাদের বক্তব্য উপস্থাপন শেষে সভাপতির বক্তব্য প্রদানকালে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেটের জন্য বড় বড় প্রকল্প দ্রুত পাশ হয়, অর্থও যথাসময়ে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ হয় না। এটা খুবই দুঃখ ও হতাশাজনক। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা তা চেপে রেখে সময় ক্ষেপন করেন। অথচ তাদের বদলি বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে তারা ঠিকই যোগাযোগ করেন।মন্ত্রী আরও বলেন, জনস্বার্থ বিবেচনা করে সিলেটজুড়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। বর্তমান সরকারের করা সব উন্নয়ন জনগণের মাঝে প্রচার করতে হবে। যাতে মানুষ সহজেই সেবা গ্রহণ করতে পারে।ড. মোমেন বলেন, এক সময় সিলেট-শিলচর বাস চলাচল করতো, কিন্তু এখন বন্ধ। এই যোগাযোগ ব্যবস্থা আবারও স্থাপন করা গেলে দু’দেশের জনগণ ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত উদ্যোগ নিন।

মতবিনিময় সভায় সিলেট-ঢাকা ৬ লেন ও সিলেট-তামাবিল ৬ লেন সড়কের কাজের অগ্রগতি, কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ওসমানী বিমানবন্দর থেকে চৌকিদিঘী রাস্তা ৪ লেনে উন্নীতকরণ, সিলেট শহরকে যানজটমুক্ত করতে রিং রোড স্থাপন পরিকল্পনা, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প, সুরমা নদীর ভাঙন রক্ষাপ্রকল্প, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পসহ সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং সিলেট জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসম্বের শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ২ হাজার ৩ শ’ ৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত মাত্র ২২ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটির পরিচালক জানান, নকশায় ভুল থাকায় তা সংশোধন করে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। পুরো কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২ বছর সময় বাড়াতে হবে। এছাড়া ৪০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের ওসমানী বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ের টেক্সিওয়ে শক্তিবৃদ্ধিকরণ কাজ এখনো শুরুই হয়নি। এই ২ প্রকল্পের অবস্থা জেনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত কাজ শেষ করতে তাগিদ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট নগর আ’লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, নগর আ’লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল-কবির, নগর আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ এবং সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী নবেল প্রমুখ।

You might also like