প্রতিবেশীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে ‘সামুদ্রিক সম্পদ’ আহরণ করুন: প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশের বিশাল সামুদ্রিক এলাকা থেকে ‘সামুদ্রিক সম্পদ’ আহরণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।তিনি বলেন, ‘আমরা যে সামুদ্রিক এলাকাগুলো অর্জন করেছি সেখান থেকে আমাদের সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি ব্লু ইকোনমির ঘোষণা বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমাদের বিশাল সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করতে হবে।শেখ হাসিনা আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ আইন প্রণয়নের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।তিনি বলেন: ‘আমাদের সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক থাকব এবং আমাদের পররাষ্ট্র নীতি ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ অনুসরণ করে সমুদ্রপথে ব্যবসা ও বাণিজ্য চালিয়ে যাব।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা ২০১২ এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি করেছি। ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট ১৯৭৪’ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই ক্রমধারা বজায় থাকবে বলে আমি মনে করি।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমুদ্র বিজয় করে এবং আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হই।শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সমুদ্রে যে সম্ভাবনাময় সুবিশাল একটি অর্থনৈতিক এলাকা পেলাম তা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখবে। কাজেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শিতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ জাতীয় উন্নয়নের সূচকে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আজকের এই দিনে যে সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সেমিনার সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং সমুদ্রকে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট ১৯৭৪’ এর মূলনীতি দেশের সমুদ্র কেন্দ্রিক সকল সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগর হচ্ছে ভারত মহাসাগরের একটা অংশ। প্রাচীনকাল থেকে এই অঞ্চল দিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান।
তিনি বলেন, ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল দেশগুলো বাংলাদেশ এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ -একটা কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে এই অঞ্চলটা কিন্তু খুব নিরাপদ। এখানে কারো সঙ্গে কোন দ্বন্দ্ব নেই এবং সেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এ অঞ্চলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ। এই সামুদ্রিক পথ আমাদের সকল দেশ সমানভাবে ব্যবহার করছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলছে। কোন রকম দ্বন্দ্ব এই অঞ্চলে তৈরি হয়নি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা সব সময় এটাই চাইবো যে আমাদের এই অঞ্চলকে ঘিরে যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে সেটা যেন কখনো সংঘাতপূর্ণ না হয় বা এখানে কোন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না হয়। এটা যেভাবে শান্তিপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ হিসেবে চলমান রয়েছে সেভাবেই যেন সামনের দিনগুলোতেও চলমান থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অঞ্চল যেটুকু আমরা অর্জন করেছি সেখানে সমুদ্র সম্পদ আহরণ করা এবং আমাদের অর্থনীতিতে অর্থাৎ যে ‘ব্লু ইকোনমি’ আমরা ঘোষণা দিয়েছি সেখানে তা অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ইতোমধ্যে আমরা একটি ইনস্টিটিউশনও তৈরি করেছি গবেষণার জন্য। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। কাজেই ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, এবং কারো সঙ্গে যে বৈরিতা নয়’ এই নীতিই আমরা মেনে চলবো। এই পররাষ্ট্র নীতি ধারণ করেই সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমাদের সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যেন সব সময় চলমান থাকে সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সজাগ থাকবো।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সব সময় শান্তিতে বিশ্বাসী। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।’ শান্তি উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথ দেখায় এবং দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কখনো যুদ্ধে জড়াবো না। কিন্তু, আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সক্ষমতা রয়েছে।তিনি বলেন, আমরা ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট ১৯৭৪’ এর সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি। কাজেই এই সময়ে এই আইনটি তাৎপর্য বিশেষভাবে উপলব্ধি করার সময় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী পরে বিআইসিসিতে মেরিটাইম স্টেকহোল্ডারদের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম. নাজমুল হাসান স্বাগত বক্তব্য দেন।অনুষ্ঠানে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়নের বার্ষিকীর সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু আমাদের একটি রাষ্ট্রই দিয়ে যাননি। তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেই সাথে নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্যিক যোগাযোগ এবং সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব নিশ্চিত করার জন্য ১৯৭৪ সালে টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট ১৯৭৪ প্রণয়ন করে দিয়ে যান। তখনো জাতিসংঘ কিন্তু এ ধরনের কোন আইন বা নীতিমালা গ্রহণ করেনি। এর আট বছর পর অর্থাৎ ১৯৮২ সালে জাতিসংঘ আনক্লজ থ্রী প্রণয়ন করে। কিন্তু আনক্লজ থ্রী প্রণয়নের পরে বাংলাদেশে ’৭৫ সাল পরবর্তী সরকারগুলো যারা সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতায় এসেছিল তারা আর কোন উদ্যোগই নেয়নি। জাতির পিতা যেখানে রেখে গিয়েছিলেন সেখানেই পড়েছিল। বাংলাদেশের যে বিশাল সমুদ্রসীমা ছিল সেখানে আমাদের কোন অধিকারই ছিল না।প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু সমুদ্রে সীমানা নয়, আমাদের যে স্থল সীমানা রয়েছে, সেটা নির্দিষ্ট করার চুক্তিটাও জাতির পিতা করে দিয়ে যান। তিনি ভারতের সাথে চুক্তি করেন এবং সেই সাথে আমাদের সংবিধান সংশোধন করেও সেই চুক্তি বাস্তবায়ন করে দিয়ে যান। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা আর কার্যকর করা হয়নি।তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার এগুলো নিয়ে আবার কাজ শুরু করে কিন্তু সময় কম থাকায় সম্পূর্ণ করে দিয়ে যেতে পারেনি।শেখ হাসিনা এই কাজগুলো করেছিলেন খুব গোপনীয়তার সঙ্গে এবং জাতিসংঘের আনক্লজে সই করে আসেন বলে উল্লেখ করেন। যাতে আমাদের সমুদ্রসীমার যে অধিকার আছে সেটা যেন নিশ্চিত হয়।তিনি বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা রেখে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতি-‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ সে নীতি মেনেই চলেছে। পাশাপাশি আমাদের অধিকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয় সেজন্য তাঁর সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু আয়োজন ও তথ্য উপাত্ত জোগাড় করার মধ্য দিয়েই সময় চলে যায়। আর ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। কাজেই আওয়ামী লীগের সব উদ্যোগ সেখানেই থেমে যায়। কারণ, পরবর্তীতে যারা সরকারে এসেছিল তারা এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে উদ্যোগ নিয়ে সুষ্ঠুভাবে তা করতে সক্ষম হয়।তিনি এ সময় ২০৪১ সাল নাগাদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁর সরকারের দেওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশীদেরও এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহবানও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।