মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক কুলসুমা উল্লাহ’র ইন্তেকাল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট                   সত্যবাণী 

লন্ডন: যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নারী সংগঠক কুলসুমা উল্লাহ আর নেই। ২১শে জানুয়ারী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লন্ডনের প্রিন্সেস রয়েল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহ ই ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন যাবত তিনি বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিলো আনুমানিক ৮৩ বছর। মৃত্যুকালে এক ছেলে ও চার মেয়ে রেখে যান তিনি। তাঁর দ্বিতীয় মেয়ে আলমা হক মরহুম সাংবাদিক, বঙ্গবন্ধুর প্রেস সেক্রেটারী আমিনুল হক বাদশা’র বিধবা স্ত্রী। হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বামী মুক্তিযুদ্ধের আরেক সংগঠক মরহুম নজিব উল্লার পাশে গ্রেটার লন্ডনের ব্রমলিতে কুলসুমা উল্লাহকে সমাহিত করা হবে বলে তাঁর মেয়ে আলমা হক সত্যবাণীকে জানিয়েছেন। তিনি জানান তাঁর বাবা নজিব উল্লাহর মৃত্যুর পরই তাঁর পাশে তাদের মায়ের কবরের জায়গা তারা ক্রয় করে রেখেছিলেন।

সদ্য প্রয়াত কুলসুমা উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে বসবাস করে আসছিলেন। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে লন্ডনে বসবাসকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার জন্য ত্যাগী নারী হিসাবে তিনি কমিউনিটিতে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেকে  সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে  জড়িত রেখেছিলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অর্থ ও জনমত সংগ্রহের জন্য একাত্তরে স্বামী ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম নজিব উল্লাহর সাথে  বৃটেনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ড্রাইভ করে বেড়িয়েছেন কুলসুমা উল্লাহ। ঐসময় মহিলা সমিতির পক্ষে রাস্তায় রাস্তায় নানা ধরনের দ্রব্য বিক্রি করেছেন অর্থ সংগ্রহের জন্য, মহিলাদের সাথে নিয়ে মিটিং মিছিলে হয়েছেন উপস্থিত। সে সময় যে গুটিকয়েক মহিলা গাড়ী চালাতেন তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন  কুলসুমা উল্লাহ।

ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের আরেক নারী সংগঠক লুলু বিলকিস বানু এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘কুলসুমা উল্লাহ আমাদের সাথে ছিলেন বলেই মহিলাদের নিয়ে মিটিং মিছিল করা আমাদের জন্য সফল হয়েছিল৷ কমিউনিটির মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করতেন, তার কথায় নিজেদের বাড়ির মহিলাদের মিটিং মিছিলে অংশ গ্রহনে বাধা দিতেন না। মহিলারা তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে মিছিলে অংশ নিয়েছেন। নজিব উল্লাহ সাহেবের সাথে কমিউনিটির প্রতিটি মিটিংয়ে তিনি উপস্থিত থাকতেন। মহিলা সমিতির একজন কর্মঠ সদস্য ছিলেন তিনি। সমিতির মিটিংয়ে তার ছিল সরব উপস্থিতি।’

২০১৬ সালে লন্ডনে আরও কজনের সাথে জয়বাংলা মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয়া হয় কুলসুমা উল্লাহকে। ঐসময় আবেগে তেমন কিছুই বলতে পারেননি বয়সের ভারে নুজ্য কুলসুমা উল্লাহ।  অনেক স্মৃতি ভুলে যাওয়ার কথা স্বীকার করেই বলেছিলেন, ‘আমাদের স্মৃতি প্রজন্মান্তরে বাঁচিয়ে রাখার এই উদ্যোগের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

 

You might also like