প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মজুমদার আলীর ইন্তেকাল, বিভিন্ন মহলের শোক

নিউজ ডেস্ক                             সত্যবাণী

লন্ডনঃ না ফেরার দেশে চলে গেলেন প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রিয় মুখ মজুমদার আলী। (ইন্না… লিল্লা..হি.রাজিউন।)  সোমবার ১১ জানি য়ারী রাত দশটায় রয়েল লন্ডন হাসপাতালে কোভিড আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৪এপ্রিল ব্রিটেনের কভেন্ট্রি শহরে প্রবাসী বাঙ্গালীদের নিয়ে গঠিত হয় অ্যাকশন কমিটি। পরবর্তিতে বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর নেতৃত্বে এই অ্যাকশন কমিটি ষ্টিয়ারিং কমিটি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ব্রিটেনের প্রতিটি শহরে গঠিত হয় ষ্টিয়ারিং কমিটির শাখা। এই ষ্টিয়ারিং কমিটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসব্যাপী প্রবাসী বাঙ্গালীরা মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে অর্থ সরবরাহ ও আন্তর্জাতিক জনমত আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেন। বড় বড় কয়েকটি সভাসাবেশ হয় ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের ট্রাফলগার স্কয়ার ও হাইডপার্ক কর্ণারে। ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে যেসব প্রবাসী বাঙ্গালীরা ব্যানার ফেষ্টুন নিয়ে নিয়মিত এসব সমাবেশে অংশ নিতেন, তাদেরই অন্যতম ছিলেন সদ্য প্রয়াত  মজুমদার আলী। তখন তার বয়স ১৩/১৪ বছর। তখনকার সমাবেশের বেশ কয়েকটি ছবি ছিল তার কাছে তিনি এসব ছবি দেখিয়ে গর্বের সাথে বলতেন আমরা প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা। সত্যিই সেদিনকার মজুমদার আলীরা ছিলেন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা। মজুমদার আলী লন্ডনে একটি টিভি টকশোতে জানান, তখন তিনি বসবাস করতেন ওল্ডহ্যাম শহরে। সপ্তাহে বেতন পেতেন ১৫ পাউন্ড। নিজের খরছের পাঁচ পাউন্ড রেখে বাকী দশ পাউন্ড দিয়ে দিতেন যুদ্ধ ফান্ডে। এমনটি করেছেন সে সময়কার সকল ব্রিটেন প্রবাসী। তখন লন্ডনে প্রবাসী বাঙ্গালী বলতে ৯৫%ই ছিলেন বৃহত্তর সিলেটের মানুষ। মজুমদার আলী ছিলেন একজন নিখাদ বঙ্গবন্ধু প্রেমিক। আজীবন জাতির জনকের আদর্শের অনুসারী মজুমদার আলীকে দেখা যেত লন্ডনের আওয়ামীলীগের প্রতিটি সভা সমাবেশে। তিনি স্বাধীনতা বিরোধী ও ধর্মব্যবসায়ীদের মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটি, যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ ও লন্ডন আওয়ামীলীগের সদস্য হিসেবে প্রতিটি সভা সমাবেশে তার উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। তিনি বলতেন, আমি নেতা নই, তবে জাতির জনকের আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে নবপ্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাসটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। লন্ডনে স্বাধাধীনতা বিরোধীরা আমাদের সন্তানদের বিভ্রান্ত করছে এদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

মজুমদার আলীর দেশের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের পাটলী গ্রামে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক সন্তান রেখে গেছেন। প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা মজুমদার আলীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজ যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আনসার আহমেদ উল্লা, যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি নুরউদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক জামাল খান, যুগ্ম সম্পাদক স্মৃতি আজাদ, যুবলীগের সভাপতি শফিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমদ খান এবং যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী ও সেক্রেটারী রুমি হক।

পৃথক পৃথক শোক বার্তায় তারা বলেন, মজুমদার আলী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে ছিলেন উচ্চকন্ঠ।  মজুমদার আলীর মৃত্যুতে আরও  শোক প্রকাশ করেছেন,  লন্ডন মহানগর আওয়ামীলীগের  ড. আনিছুর রহমান আনিছ, শায়েক আহমদ, যুক্তরাজ্য মহিলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি হোসনে য়ারা মতিন, আঞ্জুমান আরা আঞ্জু, আওয়ামীলীগ নেতা এডভোটেক শাহ ফারুক আহমদ, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পীকার কাউন্সিলার আহবাব হোসেন প্রমুখ। শোক বার্তায় তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

You might also like