প্রাণহীন মাকে জাগাতে শিশুর আপ্রাণ চেষ্টা

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

কলকাতা: মায়ের মরদেহ কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় পড়ে আছে স্টেশনে। আর ছোট্ট শিশুটি তার চারপাশে ঘুরঘুর করছে। মাকে জাগাতে খেলাচ্ছলে কখনও সে মৃত মায়ের মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিচ্ছে আবার কখনও বা ঢেকে দিচ্ছে। ভাবছে এই বুঝি মা উঠে তাকে জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু দেড় বছরের শিশুটি বুঝতেই পারছে না মা তাকে ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। বুঝবার কথাও নয় তার। সম্প্রতি এমনই এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে ভারতের পাটনার বিহার স্টেশনে। খবর এনডিটিভির

লকডাউনের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার এ চিত্র এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই শিশুটির প্রতি নিজেদের সহমর্মিতার কথা জানিয়েছেন। মৃত ওই নারীর পরিবার জানায়, শনিবার আহমেদাবাদে ফেরার জন্যে গুজরাট থেকে বিশেষ ট্রেনে উঠেছিলেন ২৩ বছরের ওই তরুণী। কিন্তু ট্রেনের মধ্যেই প্রচণ্ড গরম, ক্ষুধা আর পানিশূন্যতায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই নারী। সোমবার বিহারের মুজফফরপুরের একটি স্টেশনে ট্রেনটি ঢোকার আগেই তিনি মারা যান।

এরপর মৃত ওই নারীর মরদেহ স্টেশনের প্লাটফর্মেই শুইয়ে রাখা হয়। আর তার ছোট্ট ছেলেটি মাকে জাগাতে তার  চারাপাশে খেলা করতে থাকে। পরে বড় ভাই শিশুটিকে সরিয়ে নিয়ে যায়।

একই স্টেশনে কয়েকদিন আগে প্রচণ্ড গরম আর খাবরের অভাবে দুই বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। শিশুটির পরিবার বিশেষ ট্রেনে দিল্লী থেকে আসছিল।

দেশটির রেলওয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ট্রেনে উঠার সময় ওই নারী অসুস্থ ছিলেন । মারা যাওয়ার পরে পরিবারটি মুজাফফরপুর স্টেশনে নেমেছিল। মৃত ওই নারী তার বোন, বোনের স্বামী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে কাটিহার যাচ্ছিলেন বলেও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে ওই নারীর মৃত্যু নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গুজব না ছড়ানোর অনুরোধে জানিয়ে টুইট করেছে। সেখানে তারা লিখেছে, ‘মৃত নারীর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন তিনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন।’

ভারতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ২৫ মার্চ থেকে টানা চতুর্থ দফায় লকডাউন চলছে। এই লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজের খোঁজে বা অন্য প্রয়োজনে গিয়ে আটকে পড়া মানুষজন। যদিও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজেদের রাজ্যে ফেরাতে ১ মে থেকে ‘শ্রমিক স্পেশাল’নামে বিশেষ ট্রেন চালাচ্ছে ভারতীয় রেল। তবু নানা সমস্যায় এখনও ঘর থেকে দূরে অন্য রাজ্যে চরম দুরবস্থার মধ্যে কাটাচ্ছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক।

এর আগেও দেশটিতে লকডাউনের মধ্যে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ফিরতে গিয়ে বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিক। বহু শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন বিভিন্ন দুর্ঘটনায়। কেউ কাজ হারিয়ে, খাবারের অভাবে আত্মহত্যা করেছেন। কেউ বা পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে পথের মধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন।

You might also like