প্রিন্স ফিলিপের জীবনের ১০টি চমকপ্রদ তথ্য

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডনঃ প্রিন্স ফিলিপ ছিলেন গ্রিসের এক রাজপরিবারের সন্তান। অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তার পরিবারকে। আশ্রয় মেলে ইংল্যান্ডে। নৌবাহিনীর ক্যাডেট হিসেবে মন জয় করেন ইংল্যান্ডের ভবিষ্যত রানি প্রিন্সেস এলিজাবেথের।

তার জীবনের ১০টি চমকপ্রদ তথ্য-

১.প্রিন্স ফিলিপের জন্ম গ্রিসের এক রাজপরিবারে। তার বাবা ছিলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু। হেলেনস এর রাজা প্রথম জর্জের ছেলে। আর মা ছিলেন ব্যাটেনবার্গের প্রিন্সেস অ্যালিস। ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের মাউন্টব্যাটেনরা ছিলেন তার মায়ের দিকের আত্মীয়।
২. প্রিন্স ফিলিপের জন্ম সনদে লেখা জন্ম তারিখ আর প্রকৃত জন্ম তারিখ এক নয়। জন্ম সনদে প্রিন্স ফিলিপের জন্ম তারিখ লেখা আছে ১৯২১ সালের ২৮ মে। যদিও তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ১৯২১ সালের ১০ জুন। এই গরমিলের কারণ গ্রিসে তখনো পর্যন্ত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হতো না।

৩. ১৯২২ সালে গ্রিসে এক অভ্যুত্থানের পর রাজপরিবার তাদের ক্ষমতা হারায়। বিপ্লবীরা তাদের সেখান থেকে নির্বাসনে পাঠায়। ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে পুরো পরিবারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন ফ্রান্সে।

৪. প্রিন্স ফিলিপের মা পরবর্তী জীবনে স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাকে একটি মানসিক রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। মায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল খুবই ক্ষীণ।

৫. প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে প্রিন্সেস এলিজাবেথের প্রথম দেখা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে। তখন প্রিন্সেস এলিজাবেথের বয়স মাত্র ১৩। রাজা ষষ্ঠ জর্জ এসেছিলেন ডার্টমুথ কলেজ সফরে। সঙ্গে প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং প্রিন্সেস মার্গারেট। তখন প্রিন্স ফিলিপ সেখানে নৌবাহিনীর এক তরুণ ক্যাডেট। এই দুজনকে দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয় প্রিন্স ফিলিপের ওপর। সুদর্শন প্রিন্স ফিলিপ এই সময় প্রিন্সেস এলিজাবেথের মনে গভীর ছাপ রাখতে সক্ষম হন। এরপর দুজনের মধ্যে প্রেম এবং চিঠি চালাচালি শুরু হয়। প্রিন্স ফিলিপ বেশ কয়েকবার রাজপরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য আমন্ত্রিত হন। সেসময় প্রিন্সেস এলিজাবেথের ড্রেসিং টেবিলে শোভা পেত প্রিন্স ফিলিপের ছবি।

৬. ১৯৪৩ সালে প্রিন্স ফিলিপ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিন্সেস এলিজাবেথকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাদের বিয়েতে রাজপরিবারের কেউ কেউ আপত্তি তুলেছিলেন। প্রিন্স ফিলিপকে ‘রুক্ষ এবং অভদ্র’ বলেও বর্ণনা করেছিলেন এরা। গোল বেধেছিল জাতীয়তা নিয়েও। তাদের এনগেজমেন্টের আগে প্রিন্স ফিলিপকে তার গ্রিসের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হয় এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণের পর তিনি তার নাম পাল্টে মাউন্টব্যাটেন রাখেন। এটি ছিল তার মামাদের দিকের পদবি।

৭. প্রিন্স ফিলিপ এবং প্রিন্সেস এলিজাবেথের বিয়ে হয় ২০ নভেম্বর ১৯৪৭ সালে। তাদের বিয়ের পর অভিনন্দন জানিয়ে বাকিংহাম প্রাসাদে এসেছিল দশ হাজারের বেশি টেলিগ্রাম। সারা দুনিয়া থেকে পাঠানো হয় প্রায় আড়াই হাজার উপহার। ভারত থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর হাতে বোনা সুতা দিয়ে তৈরি এক লেস, যার উপর লেখা ছিল ‘জয় হিন্দ’।

৮. প্রিন্স ফিলিপ প্রকৃতি এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণে তার কাজের জন্য পরিচিত। কিন্তু ১৯৬১ সালে ভারত সফরে গিয়ে তিনি একটি বাঘ শিকার করেন এবং তারপর আবার সেই বাঘের সঙ্গে ছবিও তুলেছিলেন। এ নিয়ে সেসময় তীব্র বিতর্ক হয়েছিল।

৯. প্রিন্স ফিলিপ নানা সময়ে মুখ ফসকে এমন সব মন্তব্য করেছেন, যার জন্য তাকে এবং রাজপরিবারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ১৯৮৬ সালে রানির সঙ্গে এক সরকারি সফরে চীন গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে চীনা মেয়েদের ‘কুতকুতে চোখওয়ালা’ বলে মন্তব্য করেন। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে এক আদিবাসী ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা কি এখনো একজন আরেকজনের দিকে বর্শা নিক্ষেপ করো?’

১০. বাবা হিসেবে প্রিন্স ফিলিপ নাকি ছিলেন বেশ কড়া মেজাজের। বাবার ধমক খেয়ে ছোটবেলায় প্রিন্স চার্লসকে প্রকাশ্যে কাঁদতেও নাকি দেখা গেছে। পুত্রবধূ প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তার ব্যবহার নিয়েও অনেক রকম কথা চালু ছিল। ডায়ানার প্রেমিক ডোডি আল ফায়েদের বাবা মোহাম্মদ আল ফায়েদ অভিযোগ করেছিলেন ডায়ানাকে প্রিন্স ফিলিপের নির্দেশে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই অভিযোগের কোনো সত্যতাই পাওয়া যায়নি সরকারি তদন্তে। বরং পরবর্তীকালে রাজপরিবারের তরফে প্রকাশ করা প্রিন্সেস ডায়ানার কিছু চিঠিতে বরং দুজনের মধ্যে চমৎকার সম্পর্কেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব চিঠিতে প্রিন্সেস ডায়ানা প্রিন্স ফিলিপকে ‘ডিয়ার পা’বলে সম্বোধন করেন।

You might also like