প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আসছেন সিলেটের লক্ষাধিক বিদ্যুৎগ্রাহক

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সিলেট নগরিসহ ও আশপাশের আরো ১ লাখ ১৬ হাজার ২৪৯ জন বিদ্যুৎগ্রাহক প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আসছেন। আগামী মাসের শেষদিকে এসব মিটার স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হবে। স্মার্ট প্রিপেইড মিটারিং প্রজেক্ট ইন ডিস্ট্রিবিউশন অব বিপিডিবি এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। চলতি বছরের মধ্যে বিনামূল্যে গ্রাহকদের মিটার পরিবর্তনের কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্প পরিচালক মো. মোজাহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির জানান, প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সিলেটে বিদ্যুতের সামগ্রিক চাহিদা পাল্টে যাবে। এতে অতিরিক্ত বিল আসার সম্ভাবনা থেকেও গ্রাহক রেহাই পাবেন। সাশ্রয়ী এ মিটারের কারণে লোকজন অনেক বেশী উপকৃত হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিদ্যুতের অপচয় রোধ এবং এর শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা। সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বিদ্যুৎ গ্রাহককে প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ধারাবাহিকতায় ২০০৫ এবং ২০০৯ সালে সিলেট নগরির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর গ্রাহকদের প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আনা হয়। তবে, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১, ৩ এবং ৪ এর বাইরে ছিল।
এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে বিদ্যুতের ওই ৩টি বিতরণ বিভাগকে সামনে আনা হয়। সে অনুযায়ী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর ৬৩ হাজার ৩১৩, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩ এর ৩৫ হাজার ৯৭৫ এবং বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪ এর ১৬ হাজার ৯৬১ জন গ্রাহকের মিটার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্প পরিচালক মো. মোজাহারুল ইসলাম জানান, পরবর্তী ধাপে এ প্রক্রিয়া আরো সম্প্রসারিত করা হবে।
বিউবো সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে সিলেট অঞ্চলের আরো কয়েকটি ইলেকট্রিক সাপ্লাই (বিদ্যুৎ সঞ্চালন) লাইন প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আনার সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুর, সুনামগঞ্জ, দিরাই, জগন্নাথপুর, ছাতক, হবিগঞ্জ, কুলাউড়া এবং মৌলভীবাজার। এরমধ্যে কয়েকটিতে প্রি-পেমেন্ট মিটার সংযোজন হয়েছে।
প্রি-পেমেন্ট মিটারের সুফল তুলে ধরে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রি-পেমেন্ট মিটারের গ্রাহকরা নির্ধারিত ভেন্ডিং সেন্টার ছাড়াও মোবাইলের মাধ্যমেও রিচার্জ করার সুযোগ পাচ্ছেন। নতুন প্রযুক্তির এ মিটারে ইউনিটের অবস্থা, মিটারের তথ্য দেখার শর্ট কোড লিস্ট, রিলে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ এবং ডিসপ্লেতে কোড দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। মিটার ব্যবহারকারীদের কার্ডের রিচার্জের মেয়াদ সরকারি বন্ধের দিন শেষ হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে না। তাছাড়া, বিকেল ৫টার পর কার্ডের মেয়াদ শেষ হলেও পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে গ্রাহক মোবাইলের মতো ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স আনার সুযোগ পাবেন। মিটারের দাম গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তিতে এবং দীর্ঘসময়ে আদায় করা হয়ে থাকে। প্রি-পেমেন্ট মিটারের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকা স্বত্বেও কিছু গ্রাহক বকেয়া পরিশোধের ভয়ে প্রি পেমেন্ট মিটার স্থাপনে অনীহা প্রকাশ করছেন বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
বিউবো বিতরণ বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর হায়দার জানান, সবচেয়ে বেশী গ্রাহক তার আওতাধীন এলাকায় প্রি-পেমেন্ট মিটারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। এতে গ্রাহক সেবার বিষয়টি আরো গতিশীল হবে বলে মনে করেন তিনি।
বিউবো বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই আরেফিন জানান, বিতরণ বিভাগ-২ এর আওতাভুক্ত প্রায় ৯৫ ভাগ গ্রাহক প্রি-পেমেন্ট মিটারে বিদ্যুৎসেবা গ্রহণ করছেন।
বিউবো বিতরণ বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র সরকার জানান, প্রি-পেমেন্ট মিটার ব্যবহার নিয়ে মানুষের মাঝে আগ্রহ রয়েছে। বিতরণ বিভাগ-৩-এর আওতাধীন জগন্নাথপুরের অধিকাংশ গ্রাহক ইতোমধ্যে প্রি-পেমেন্ট মিটার ব্যবহার করছেন বলেও জানান তিনি।
বিউবো বিতরণ বিভাগ-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিতরণ বিভাগ-৪-এর আওতায় প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। অর্ধেকাংশ প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় এলে সেবার পরিধি আরো বিস্তৃত হবে বলে জানান তিনি।

You might also like