ফখর জামানের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখলো পাাকিস্তান
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
বেঙ্গালুরু: ফখর জামানের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখলো পাকিস্তান।আজ নিজেদের অষ্টম ম্যাচে পাকিস্তান বৃষ্টি আইনে ২১ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। এই জয়ে ৮ খেলায় ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে উঠলো পাকিস্তান। সমানসংখ্যক ম্যাচে পাকিস্তানের সমান ৮ পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে এগিয়ে চতুর্থস্থানে আছে নিউজিল্যান্ড। ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে ষষ্ঠস্থানে আছে আফগানিস্তান। এই তিন দলেরই সেমিতে যাবার সুযোগ থাকছে।এ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড হেরে যাওয়ায় স্বাগতিক ভারতের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ৭ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে আছে প্রোটিয়ারা। ৭ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৪০১ রানের পাহাড় গড়ে নিউজিল্যান্ড। রবীন্দ্র ৯৪ বলে ১০৮ রান করেন। জবাবে ফখররের ৮১ বলে অনবদ্য ১২৬ রানে বৃষ্টি আইনে জয় পায় পাকিস্তান।
বেঙ্গালুরুতে টস জিতে প্রথমে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানায় পাকিস্তান। আঙুলের ইনজুরি থেকে সুস্থ হয়ে বিশ^কাপে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামেন নিউজিল্যান্ডের নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ব্যাট হাতে নেমে নিউজিল্যান্ডকে দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র ৬৫ বল খেলে ৬৮ রানের সূচনা এনে দেন।১১তম ওভারের পঞ্চম বলে কনওয়েকে থামিয়ে নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী ভেঙ্গে ওয়ানডেতে ১শ উইকেট পূর্ণ করেন পাকিস্তানী পেসার হাসান আলি। ৬টি চারে ৩৯ বলে ৩৫ রান করেন কনওয়ে।কনওয়ের বিদায়ে উইকেটে আসেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। রবীন্দ্রকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। ২০তম ওভারে ৫১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রবীন্দ্র। বিশে^র সপ্তম ও নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক বিশ^কাপে সর্বোচ্চ পঞ্চমবারের মত অন্তত ৫০ রানের ইনিংস খেলে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিয়েছে রবীন্দ্র।২৬তম ওভারে ওয়ানডেতে ৪৪ ও এবারের বিশ^কাপে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করেন ৪৯ বল খেলা উইলিয়ামসন। রবীন্দ্র ও উইলিয়ামসনের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ২৯তম ওভারেই ২শ রান পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।উইকেটের চারপাশে নান্দনিক সব শটে ৩৪তম ওভারে ওয়ানডেতে তৃতীয় সেঞ্চুরি পূর্ন করেন ৮৭ বল খেলা রবীন্দ্র। ক্যারিয়ারের সবগুলো সেঞ্চুরিই এবারের বিশ^কাপে করেছেন তিনি। এর আগে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতক করেছিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। বিশ^কাপে তৃতীয় সেঞ্চুরিতে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেন রবীন্দ্র। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে এক বিশ^কাপে সর্বোচ্চ তিন সেঞ্চুরির মালিক এখন তিনি। ২৫ বছর বয়সের নিচে বিশ^কাপে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিতে ভারতের মাস্টার ব্লাস্টার শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে রেকর্ড গড়েছেন রবীন্দ্র। ২২ বছর বয়সে বিশ^কাপে ২টি সেঞ্চুরি করেছিলেন টেন্ডুলকার। ২৩ বয়স বয়সেই ৩টি সেঞ্চুরির মালিক হয়েছেন রবীন্দ্র।
রবীন্দ্রর সেঞ্চুরির পর উইলিয়ামসনের শতকের অপেক্ষায় ছিলো নিউজিল্যান্ড। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে তাকে। নব্বইয়ের ঘরে থাকতে ৩৫তম ওভারে স্পিনার ইফতিখার আহমেদকে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অফে ক্যাচ দিলে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৯ বলে ৯৫ রানে উইলিয়ামসনের বিদায় ঘটে । এই ইনিংস খেলার পথে বিশ^কাপে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক হন উইলিয়ামসন। ২৫ ম্যাচে উইলিয়ামসন করেছেন ১০৮৪ রান। ৩৩ ম্যাচে ১০৭৫ রান নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে নেমে গেছেন সাবেক অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং।দ্বিতীয় উইকেটে রবীন্দ্র-উইলিয়ামসন ১৪২ বলে ১৮০ রান যোগ করেন । বিশ^কাপে যেকোন উইকেটে নিউজিল্যান্ডের এটি দ্বিতীয় ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি।উইলিয়ামসন ফেরার পরের ওভারে বিদায় নেন রবীন্দ্র। পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে পুল শট খেলে সীমানার কাছে সৌদ শাকিলকে ক্যাচ দেন ১৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৪ বলে ১০৮ রান করা রবীন্দ্র। এ ইনিংসের মাধ্য এবারের আসরে এ পর্যন্ত ৮ ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫২৩ রান করলেন তিনি। এর মাধ্যমে টেন্ডুলকারের রেকর্ড স্পর্শ করলেন তিনি। ২৫ বছরের নীচে বিশ^কাপের এক আসরে কোন খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ রানে টেন্ডুলকারের ৫২৩ রান স্পর্শ করেছেন রবীন্দ্র।৩৬তম ওভারে দলীয় ২৬১ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে রবীন্দ্র ফেরার পর পরের দিকের ব্যাটাররা দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন। চার নম্বরে নামা ড্যারিল মিচেল ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৮ বলে ২৯ রান করেন। ৭টি চারে ২৭ বলে ৩৯ রান করেন মার্ক চাপম্যান। চতুর্থ উইকেটে ৩২ বলে ৫৭ রান যোগ করে দলের রান ৩শতে নেন মিচেল-চাপম্যান।ষষ্ঠ উইকেট ২৬ বলে ৪৩ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ডের রান ৪শ পার করার পথ তৈরি করেন গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনার। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৫ বলে ৪১ রান করে ফিলিপস ফিরলেও, ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে নিউজিল্যান্ডকে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৪০১ রানের বিশাল সংগ্রহ এনে দেন স্যান্টনার। এবারের বিশ^কাপে দ্বিতীয় দল হিসেবে ৪শ রান করলো নিউজিল্যান্ড। প্রথম দল হিসেবে শ্রীলংকার বিপক্ষে দিল্লিতে ৫ উইকেটে ৪২৮ রান করেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ও বিশ^কাপে এটি নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ দলীয় রান। বিশ^কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোন দলের এটিই সর্বোচ্চ ও ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান।
২টি ছক্কায় ১৭ বলে অপরাজিত ২৬ ও টম লাথাম অপরাজিত ২ রান করেন।নিউজিল্যান্ডের রান বন্যার ইনিংসে পাকিস্তানের ওয়াসিম ১০ ওভারে ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন হাসান আলি-ইফতিখার ও হারিস রউফ।১০ ওভারে ৯০ রানে উইকেট শূণ্য থাকেন আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ শিকারী শাহিন শাহ আফ্রিদি। বিশ^কাপে পাকিস্তানের পক্ষে সবচেয়ে বাজে বোলিং ফিগারের রেকর্ড গড়লেন সদ্যই আইসিসি বোলিং র্যাংকিংয়ে শীর্ষে ওঠা আফ্রিদি।৪০২ রানের টার্গেটে শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। দ্বিতীয় ওভারে পেসার টিম সাউদির বলে উইলিয়ামসনের দারুন ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ওপেনার ৪ রান করা আব্দুল্লাহ শফিক।দলীয় ৬ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর জুটি বাঁধেন ফখর জামান ও অধিনায়ক বাবর আজম। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে মারমুখী ব্যাট চালিয়ে ১৫ ওভারেই দলের রান ১শতে নেন তারা। এরমধ্যে ৩৯ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ফখর। মাত্র ২৪ বলে পরের হাফ-সেঞ্চুরি করেন ফখর। অর্থাৎ ৬৩ বলে ১১তম সেঞ্চুরি করেন ফখর। বিশ^কাপে যা পাকিস্তানের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরি ।ফখরের সেঞ্চুরিতে ২১ দশমিক ৩ ওভারে ১ উইকেটে পাকিস্তান ১৬০ রান করার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়। তখন বৃষ্টি আইনে ১০ রানে এগিয়ে ছিলো পাকিস্তান। ১ ঘন্টার বেশি সময় পর খেলা শুরু হলে বৃষ্টি আইনে ৪১ ওভারে ৩৪২ রানের নতুন টার্গেট পায় পাকিস্তান।
এরপর নতুন টার্গেটে খেলতে নেমে ২৪ বলে ৪০ রান তুলে পাকিস্তান। এতে ২৫ দশমিক ৩ ওভারে ১ উইকেট ২০০ রান করে তারা। ২৬তম ওভারে আবারও বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। ঐ সময় বৃষ্টি আইনে ২১ রানে এগিয়ে ছিলো পাকিস্তান।বৃষ্টির অব্যাহত থাকায় শেষ পর্যন্ত ৪০ মিনিট পর ম্যাচটি আর মাঠে না গড়ানোর সিদ্বান্ত নেন ম্যাচ কর্মকর্তারাা। এতে বৃষ্টি আইনে ২১ রানে জয় পায় পাকিস্তান।৮টি চার ও ১১টি ছক্কায় ৮১ বলে ১২৬ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ফখর। বিশ^কাপে পাকিস্তানের পক্ষে এক আসরে সর্বোচ্চ ১৮টি ছক্কা মালিক এখন ফখর। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৩ বলে অপরাজিত ৬৬ রান করেন বাবর। দ্বিতীয় উইকেটে ১৪১ বলে বিশ^কাপে পাকিস্তানের পক্ষে যেকোন উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ ১৯৪ রান যোগ করেন ফখর-বাবর।
নিউজিল্যান্ডের সাউদি ২৭ রানে ১ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
নিউজিল্যান্ড : ৪০১/৬, ৪৬.৩ ওভার (রবীন্দ্র ১০৮, উইলিয়ামসন ৯৫, ওয়াসিম ৩/৬০)।
পাকিস্তান : ২০০/১, ২৫.৩ ওভার (ফখর ১৩৬*, বাবর ৬৬*, সাাউদি ১/২৭)।
ফল : বৃষ্টি আইনে পাকিস্তান ২১ রানে জয়ী।