ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করলো সিলেটবাসী

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ
 ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছেন সিলেটের বিভিন্ন অঙ্গন। ২১ ফেব্রুয়ারি বুধবার প্রথম প্রহর থেকে সিলেটের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কৃতজ্ঞচিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে। শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। প্রভাবফেরি করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় অকাতরে রক্ত ঝরিয়ে জাতির স্বাধিকারের পথ সুগম করেছিলেন যারা, সেসব শহীদ ও সংগ্রামীরা স্মরণে উঠে এসেছেন রাতের প্রথম প্রহরেই; শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে অবনতচিত্তে।
বাঙালির গৌরবময় স্মৃতি, সেই সঙ্গে বেদনা আর বিদীর্ণ শোকের রক্তঝরা দিন অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এখন পালন হয় বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও। বিশ্বের সব ভাষাভাষীর অধিকার রক্ষার দিনও এটি। বছর ঘুরে সেই দিন স্মরণ করছে মাতৃভাষা প্রেমীরা।
সিলেটসহ দেশের সব শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন আর নানা আয়োজনে মহান এদিন উদযাপনের সূচনা হয়েছে বুধবার প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে।
৭২ বছর আগের এদিনে মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতির মিনারে উপস্থিত হয়েছে অগণিত মানুষ। প্রথম প্রহরেই ফুল হাতে ভাষা শহীদদের স্মরণ করতে জড়ো হন তারা।
গৌরবময় সেই অতীত স্মরণ রাতেই শুধু শেষ হয়নি। ভোরের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে প্রভাতফেরির মিছিল হল পথে পথে। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই সেই মিছিল গিয়ে শেষ হবে একই জায়গায়। ফুলে ফুলে ভরে উঠল শহীদ মিনারের বেদী।
কবি আল মাহমুদের ভাষায়, ‘“প্রভাতফেরির মিছিল যাবে/ছড়াও ফুলের বন্যা/বিষাদগীতি গাইছে পথে/ তিতুমীরের কন্যা।’’ এ যেন প্রতিফলতি হল আজ। ফুলের গুচ্ছ, স্তবক আর মালা ছিল হাতে হাতে। কণ্ঠে মর্মস্পর্শী গান, ‘‘আমার ‌ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…’।
রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস প্রতিবারের মতো এবারও সিলেটে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে।
একুশে প্রথম প্রহরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ও মহানগর ইউনিটের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। রাতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বুধবার ভোর থেকে সকল-শ্রেণী পেশার লোকজন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
দুপুর ১টা থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এরপরই সেখানে শুরু হয় সেলফি তুলার হিড়িক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সের মানুষের। এ সময় তারা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন সেলফি তুলতে।
সরেজমিনে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা যায়, দুপুর দেড়টা থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষজন শহীদ মিনারের বেদীতে ফুল দিচ্ছেন। আবার ফুল হাতে নিয়ে সেলফি তুলছেন কেউ কেউ। কেউবা আবার টিকটক ভিডিও ধারণ করছেন সেখানে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা। বাদ যাননি ছোট্ট শিশু-সোনামনিরাও। মা-বাবা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে তারাও এসেছেন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে।
এছাড়াও শহীদ মিনারের বেদীর সংলগ্ন একটি সাইনবোর্ডে জুতা পায়ে বেদীতে উঠা নিষেধ লেখা সাইনবোর্ড থাকলেও অনেকেই জুতা নিয়ে উঠতে চাইলে শহীদ মিনারের দায়িত্বশীলদের কারণে সেখান থেকে সরে যান তারা। শহীদ মিনার এলাকা ও তার আশেপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পোষাক ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে, একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ও মহানগর ইউনিট। এরপর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী এনডিসি, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম, সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো.জাকির হোসেন খান, পিপিএম, জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়, পেশাজীবি সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

You might also like