বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকীতে নির্মূল কমিটির সম্মেলন
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ ১৫ আগস্ট: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এই সম্মেলনে আলোচ্য বিষয় ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন এবং ’৭৫-এর ঘাতকদের অসমাপ্ত বিচার।নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে আলোচকদের ভেতর ছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মাণিক, মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, শহীদসন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনসার আহমেদ উল্লাহ (যুক্তরাজ্য), ফিনল্যাণ্ড শাখার আহ্বায়ক ডঃ মুজিবুর দফতরি, অস্ট্রেলিয়া শাখার আহ্বায়ক ডঃ একরাম চৌধুরী, তুরস্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক সংস্কৃতিকর্মী শাকিল রেজা ইফতি ও পশ্চিমবঙ্গ শাখার যুগ্ম সম্পাদক সংস্কৃতি কর্মী পার্থ দে। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে কেন্দ্র ও জেলা-উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
সভাপতির ভাষণে শাহরিয়ার কবির বলেন- ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের দর্পণ হচ্ছে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান। ’৭২-এর সংবিধান কার্যকর থাকলে বাংলাদেশে ধর্মের নামে এত নির্যাতন, হানাহানি, সন্ত্রাস, বোমাবাজি, রক্তপাত আমাদের দেখতে হতো না। বাংলাদেশের ৪৯ বছর এবং পাকিস্তানের ৭৩ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যাবতীয় গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসের জন্য দায়ী জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমগোত্রীয় মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক দলগুলি, যা তারা করেছে ইসলামের দোহাই দিয়ে। ’৭২-এর সংবিধান এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আদর্শ মান্য করতে হলে ধর্মকে রাজনীতি ও রাষ্ট্র থেকে বিযুক্ত রাখতে হবে ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও হত্যা বন্ধের পাশাপাশি ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্য।‘বাংলাদেশ যদি একটি আধুনিক ও সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়, যদি আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চায়, যদি যুদ্ধ-জিহাদ-সন্ত্রাস-গণহত্যা বিধ্বস্ত বিশ্বে মানবকল্যাণ ও শান্তির আলোকবর্তিকা জ্বালাতে চায় তাহলে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান বেনিফিশিয়ারি ও নেপথ্যনায়ক আখ্যা দিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান এবং তার অপরাপর দোসরদের বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজন হলে আইন সংশোধন করতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশে মরণোত্তর বিচারের বিধান আছে। সপরিবারে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, অথচ ঘাতকরা মৃত বলে বিচার হবে না এটা আইনের শাসনের পরিপন্থী। বঙ্গবন্ধু যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করেছিলেন, ’৭৫-এর সকল প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য খুনিদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন ’৭২-এর সংবিধান। এই সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের কথা বলা হয়েছিল। একমুখী শিক্ষার কথা বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু দেশের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ডঃ কুদরতে খোদাকে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষানীতি প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এই শিক্ষা কমিশন সুপারিশ করেছিল সংবিধানের বর্ণিত রাষ্ট্রের চার মূলনীতি প্রাথমিক পর্যায় থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত পাঠসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষানীতি কার্যকর থাকলে আমাদের দেশে এত সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের নামে এত হত্যা, সন্ত্রাসের ঘটনা কখনও ঘটত না।অন্যান্য বক্তা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যারা হত্যা করেছে, যারা আলোকাভিসারী এক বীরের জাতিকে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার কৃষ্ণগহ্বরে নিক্ষেপ করেছে- সবাইকে বিচার এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে।