বঙ্গবন্ধুর ৫০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আজ (১০ জানুয়ারি) এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আয়োজন করেছে। ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বিশিষ্ট আইটি বিশেষজ্ঞ জনাব মুস্তাফা জব্বার। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে প্রধান বক্তা ছিলেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক জিএস ও আইটি বিশেষজ্ঞ জনাব মাহবুব জামান, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, জাগরণ-এর যুগ্ম সম্পাদক সুইডেনপ্রবাসী লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, সুইজারল্যাণ্ডের অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ব্লগার অমি রহমান পিয়াল, বাংলাদেশের অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট লীনা পারভীন, সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার কর্মী আনসার আহমদ উল্ল্যাহ প্রমূখ।

ওয়েবিনারের প্রধান বক্তা শাহরিয়ার কবির বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কালপঞ্জিতে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে লণ্ডন হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথে দিল্লীতে যাত্রাবিরতিকালে এবং স্বদেশে ফিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে দুটি ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের লক্ষ্য ও আদর্শ কী হবে তা বঙ্গবন্ধু স্পষ্টভাষায় ঘোষণা করেছিলেন, যা বিধৃত হয়েছে ১৯৭২-এর ৪ নবেম্বর গৃহীত বাংলাদেশের সংবিধানে। ১০ জানুয়ারির ভাষণে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নৃশংসতম গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের ঘটনা উল্লেখ করে বাংলাদেশের মাটিতে তাদের বিচারের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং এই বিচার প্রক্রিয়া আরম্ভও করেছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়ে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ধর্মের নামে রাজনীতি যেমন চালু করেছে, একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা মুছে ফেলে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবার চক্রান্ত করেছে, যা এখনও অব্যাহত আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ রাজনীতি ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অবস্থানকারী পাকিস্তানপ্রেমী ধর্মব্যবসায়ী, মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে দমন করা না হলে মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ মোল্লা উমরের আফগানিস্তানে পরিণত হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মুস্তাফা জব্বার বলেন, পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের সমাপ্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু সাম্যবাদের ভিত্তিতে একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনের জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের নীতি আদর্শ কী হবে তা তিনি কেবলমাত্র বক্তৃতা নয়, একেবারে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। এখানে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে ফেলার পর আমরা যে ২১টি বছর কাটিয়েছি সেটি ছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর আয়োজন। তারা যে জায়গাটিতে আঘাত করেছিলÑ সেটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে সেখানে আঘাত করা। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এটি বারে বারে করেছে। তাদের শাসনামলে কেবলমাত্র আমরা যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান হারিয়েছি বা বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে পারিনি, তা শুধু নয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত জাতিরাষ্ট্র গঠনের পথে এগোতেও আমরা ব্যর্থ হচ্ছিলাম। ওরা বুঝেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শ হত্যা করা যাবে না, এরপর তারা চার নেতাকে হত্যা করেছে, ওরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাঙালি এমনই এক নৃতাত্ত্বিক শক্তি যারা কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করে না। আমাদের একটি সঙ্ঘবদ্ধ যুদ্ধ প্রয়োজনÑ আমি সাইবার যুদ্ধের কথা বলছি। অনেকে কল্পনা করতে পারবে না যে, অনলাইনে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কতটা সক্রিয়। তারা যে ধরনের অপপ্রচার করছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যেহেতু ফেসবুক আমেরিকার, তাই অভিযোগ করে খুব বেশি লাভ হয় না। বড়জোর দশ পারসেন্ট ক্ষেত্রে আমরা ফিডব্যাক পাই। তাই অনলাইনে স্বাধীনতাবিরোধীদের যে অপপ্রচার সেটি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। সুচিন্তিত মতামত তৈরি করে, তথ্যবহুল আলোচনা দ্বারা তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে।

সভাপতির ভাষণে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫-এ শাহাদতবরণকারী তাঁর সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন বঙ্গবন্ধু না থাকলে বাংলাদেশ কখনও স্বাধীন হতো না। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ন্যায্যতা লাভ করেছে। ১৯৭৫ সালে পাকিস্তানপন্থী স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত না হলে বাংলাদেশ বহু আগেই উন্নত দেশের পংক্তিতে স্থান পেত, যা তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সফল হতে যাচ্ছে।’ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীদের ধর্মের নামে রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।অন্যান্য বক্তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ এবং ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক বাংলাদেশ গড়ার বয়ান কীভাবে আরো সঙ্গবদ্ধভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেটি ভাবতে হবে। একটি কমন ডাটাবেজ আমাদের থাকতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী শুধু ফেসবুক ব্যবহার করছে না, ওরা ইনস্টগ্রাম, লিংকেডিন সহ আরো অনেক মাধ্যম ব্যবহার করছে, ফলে আমাদের শুধু ফেসবুকের দিকে খেয়াল রাখলে হবে না। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

You might also like