বন্যার পদধ্বনি হুমকির মুখে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ একদিন পর সিলেট সিটির ভোট। চলছে টানা বর্ষণ। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিপদসীমা অতিক্রম করেছে নদ-নদীর পানি। শঙ্কা দেখা দিয়েছে বন্যার। ম্লান হয়ে যাচ্ছে পূণ্যভূমি সিলেটের ভোটের আমেজ। পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা অবস্থান করছেন সিলেটে। তাঁরাও শঙ্কিত টানা এই বৃষ্টি নিয়ে। বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের ইঙ্গিত।এদিকে শক্ত প্রতিদ্বন্ধী না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে আ’লীগের মেয়রপ্রার্থী। কাউন্সিলর পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসও আছে। সিলেটে ১৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সিটি নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি নগরির ৩৫নং ওয়ার্ডের সৈয়দ জাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। গত ১৪ জুনের টানা বৃষ্টিতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যায়। যদিও কয়েক ঘন্টার পরই এই পানি নেমে গেছে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভারি বৃষ্টিতে পানি উঠে যেতে পারে। কিছু বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক।

নগরির ৪২ ওয়ার্ডের মধ্যে বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডের বেশীরভাগই নিম্নাঞ্চলের। এই ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটের আমেজ বেশি। কেননা প্রথমবারের মতো ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচিত করবেন তাদের পছন্দের প্রার্থী। এখন শঙ্কা বন্যার। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবন্ধতায় ম্লান করেছে এইসব এলাকার ভোট উৎসব।
নগরির ৩৮নং ওয়ার্ডের নয়া খুররুমখলা, পীরপুর, তালুকদারপাড়া, মইয়ারচর, টুকেরগাঁও ও গৌরীপুর এলাকার অন্তত ১০জন ভোটার বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন বঞ্চিত। সিটি করপোরেশনের সব ধরণের কর আমরা পরিশোধ করছি। বিনিময়ে কোন উন্নয়ন পাইনি। এবার আমাদের সুযোগ এসেছে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করার। স্বপ্ন দেখছি অবহেলিত এই অঞ্চল আলোকিত করার। কিন্তু কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে চরম জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এবার ভোট দেয়া নিয়েও মনে শঙ্কা কাজ করছে।নগরির ২৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাংবাদিক মঈন উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিন যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বন্যার শঙ্কা তো অবশ্যই রয়েছে। এমন হলে নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে। সাধারণ মানুষ তথা ভোটারের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।এদিকে, একটি সূত্র জানিয়েছে যেসব ভোটকেন্দ্রে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে সেসব কেন্দ্র পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সুুবিধাজনক কেন্দ্র বাছাইয়ে অগ্রাধিকার থাকবে।সার্বিক পরিস্থিতি সতর্ক পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ এমন তথ্য জানিয়েছেন আ’লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি। কিছু কিছু সেন্টার পানিতে ছিলো পরে আবার পানি নেমে গেছে। আশা করছি এমন পরিস্থিতি ভোটের দিন থাকবে না। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি দেখবে।

ভোটের দিন সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ২১ জুন সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯ জুন সোমবার ভোররাত থেকে শুরু করে দুপুর ১১টা পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১১২ আর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া সোমবারও সারাদিন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে।সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সিলেটের প্রধান দু’নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। ১৯ জুন সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ পয়েন্টে নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ১৩.২৩ সেমি। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টেও পানি বেড়েছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৩১ সেমি। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১০.৮০ সিমি।এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কোন সেন্টারে যদি পানি উঠে যায় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিনে ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি।এদিকে নির্বাচনে মোট কেন্দ্র থাকছে ১৯০টি। যেখানে স্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ১ হাজার ৩৬৭টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ৯৫ টি। সবগুলো কেন্দ্রেই থাকছে সিসি ক্যামেরা। ঢাকা থেকে সবগুলো কেন্দ্র সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন।

You might also like