বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক হ্রাস করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি ভারতীয় চাকমা নেতাদের আহ্বান

মতিয়ার চৌধুরী
সত্যবাণী

লন্ডনঃ ভারতীয় চাকমা নেতারা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক হ্রাস করতে প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি স্মারক লিপি প্রদান করেছেন। স্মারক লিপিতে উল্লেখ করা এযাবত হামলায় নয়জন আদিবাসী নিহত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১০০ টিরও বেশি আদিবাসিদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে, ভারতীয় চাকমা নেতারা বাংলাদেশের সাথে অবিলম্বে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস আহ্বান জানিয়েছেন, সেই সাথে তাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের সাথে কোনো বৈঠক বা সংলাপ এড়াতে অনুরোধ করেছেন। চাকমা নেতৃবৃন্দ বলেন ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং সমতলের বসতিকারীদের দ্বারা চলমান হামলার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে (সিএইচটি) আদিবাসী সম্প্রদায় এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ভারতের দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় হামলায় জুনান চাকমা, ৭০ বছর বয়সী ধন রঞ্জন চাকমা, রুবেল ত্রিপুরা এবং লেনিন চাকমা সহ অন্তত নয়জন নিরীহ আদিবাসীর প্রাণ গেছে। খাগড়াছড়ি হাসপাতালে অজ্ঞাত আরও পাঁচজনের মরদেহ রয়েছে। এসব মৃত্যুর পাশাপাশি দীঘিনালা সদরে শতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সহিংসতায় কয়েক ডজন আদিবাসী আহত হয়।ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১০০ টিরও বেশি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্মারকলিপিতে ভারতের চাকমা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সুহাস চাকমা সহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট চাকমা নেতা স্বাক্ষর করেন; সাক্ষরকারী বিশিষ্টজনদের মধ্যে রয়েছেন রাশিক মোহন চাকমা এমএলএ, এবং মিজোরামের চাকমা স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিরুপম চাকমা, মিজোরামের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং জাতীয় তফসিলি উপজাতি কমিশনের সদস্য বিমল চাকমা, ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদের সদস্য ও মানবতা সুরক্ষা ফোরামের সভাপতি ও ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক গৌতম চাকমা, চাকমা হাজং অধিকার জোটের আহ্বায়ক প্রীতিময় চাকমা আশুতোষ চাকমা সভাপতি অল আসাম চাকমা সোসাইটি।স্মারকলিপিতে ১২সেপ্টেম্বর ২০২৪ -এ বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৫ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ১,০৯০টি বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং উপাসনালয় ধ্বংসের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। চলমান সহিংসতা পার্বত্য উপজাতিদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে দমন এবং তাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বহিষ্কারের একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে করা হয়।ঐতিহাসিকভাবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল একটি প্রধান উপজাতীয় অঞ্চল, যেখানে জনসংখ্যার ৯৮.৫% ছিল অমুসলিম। তা সত্ত্বেও, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন এই অঞ্চলটি পাকিস্তানকে দিয়ে দেয়। ১৯৭৯ এবং ১৯৮৩ সালের মধ্যে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ৫০০,০০০ অবৈধ মুসলিম সমতল বসতি স্থাপনকারীকে পুনর্বাসিত করেছিলেন, আদিবাসী জনসংখ্যাকে তাদের নিজ ভূমিতে সংখ্যালঘুতে পরিনত করেছিলেন। আজ, এই বসতি স্থাপনকারীরা এই অঞ্চলের জনসংখ্যার ৫০% এরও বেশি। স্মারক লিপি হস্তান্তরের পূর্বে ভারতীয় চাকমা নেতারা ত্রিপুরার রাজধানী আগর তলা শহরে মিছিল সমাবেশ করেন।

You might also like