বাউলদের উপর হামলার প্রতিবাদে সিলেটে ‘গান মিছিল’
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ হাতে নানা গিটার কারো বা হাতে ঢোল বা খঞ্জনি আর সবার মুখে গান। লালন, করিম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মরমী আর সূফী সাধকদের গান গেয়ে হাঁটছেন সড়কে। এদের মধ্যে বাউলও আছেন কয়েকজন। আছেন শিল্পী, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মীসহ নানা পেশার মানুষ। বাদ্য আর গানে সড়ক প্রদক্ষিণের এই কর্মসূচির নাম ‘গান মিছিল’।
কুষ্টিয়ায় সাধুসঙ্গে বাউলদের উপর হামলার প্রতিবাদে ১৫ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সিলেট নগরিতে গান মিছিলের আয়োজন করে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন নামের একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। বাউল গান গেয়েই বাউলদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়। নগরির চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে আবার চৌহাট্টায় গিয়ে শেষ হয়।‘গান মিছিল’ শুরুর পূর্বে শহীদ মিনারের সামনে ‘লালন চাও না মৌলবাদ চাও? এই প্রশ্ন রেখে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদুর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’র সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, শাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায়, সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য, সাংস্কৃতিক সংগঠক এনামুল মুনির।কর্মসূচির শুরুতে কিম বলেন, আমরা লালন চাই, করিম চাই, রাধারমণ চাই। মৌলবাদ চাই না। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের পূর্বসূরিরা লড়েছেন। সে লড়াইয়ের ঝান্ডার নিচে আমরাও সমবেত হয়েছি।তিনি বলেন, একদিকে লালন উৎসব হবে, বিশ্ব দরবারে লালন আমাদের পণ্য বলে বিক্রি হবে, অন্যদিকে লালন চর্চায় ব্যরিকেড দেয়া হবে, তা হতে পারে না। এই বৈপরীত্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে।কিম আরও বলেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের লাউবাড়িয়ায় সাধুসঙ্গে সমবেত বাউলদের উপর যারা বর্বরোচিত হামলা করেছে এদের চিহ্নিত করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে বিরামহীন কথা বলতে হবে। আলোচনা পর্বে বক্তারা বাউলদের উপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি জানান।এরপর শুরু হওয়া গান মিছিলে অংশ নেন, লেখক-গবেষক এ কে শেরাম, উদিচী সিলেটের সভাপতি এনায়েত হোসেন মানিক, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, বাউল বশির উদ্দিন সরকার, বাউল সূর্যলাল দাস, অরূপ বাউল, বাউল সৌরভ সোহেল, সংস্কৃতিকর্মী সুজিত শ্যাম জন, আইনজীবি অরূপ শ্যাম বাপ্পী, ভূমি সন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, আদিবাসী নেতা গৌরাঙ্গ পাত্র, সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু, সাবেক ছাত্রনেতা পাপলু বাঙ্গালী, দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র রাজিব রাসেল, সামাজিক সংগঠন ঊষা’র তমিস্রা তিথি, ছাত্র ইউনিয়ন, সিলেট জেলা সভাপতি মনিষা ওয়াহিদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, সিলেটের সদস্য সচিব দেবব্রত দিপন, সংস্কৃতিকর্মী নাহিদ পারভেজ বাবু প্রমুখ।প্রসঙ্গত, ৫ নভেম্বর রাতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লাউবাড়িয়া এলাকায় পলান ফকিরের বাড়িতে সমবেত হন বাউল সাধুরা। সেখানে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় কয়েকটি ঘরবাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। হামলায় গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন লালন ভক্ত ৫ নারী-পুরুষ।ওই হামলার ঘটনায় ৯ নভেম্বর দৌলতপুর থানায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন পলান ফকির। তবে পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।