বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামে সংবাদ ছিল নির্ভীক সহযাত্রী
প্রগতিশীল রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ ও দৈনিক সংবাদ’-শীর্ষক আলোচনা
বিশেষ প্রতিবেদক
সত্যবাণী
লন্ডন: অনলাইন সংবাদ মাধ্যম সত্যবাণী ও খেলাঘরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘প্রগতিশীল রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ ও দৈনিক সংবাদ’-শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বক্তারা বলেছেন, “স্বাধীকার আন্দোলনের প্রতিটি বাঁকেই সংবাদ ছিলো বাঙালির সহযাত্রী। ব্যবসায়ীক মুনাফার তোয়াক্কা না করে একটি প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণে সংবাদ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে।”
সংবাদের সাবেক প্রতিবেদক ও সত্যবাণীর উপদেষ্টা সম্পাদক আবু মুসা হাসানের সভাপতিত্বে ও সত্যবাণীর সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মুক্ত আলোচনায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংবাদ এর নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন খেলাঘরের প্রাক্তন কর্মী, আইনজীবী সৈয়দ ইকবাল।
সংবাদ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রবীণ রাজনীতিক সুলতান শরীফ, বাংলাদেশের শীর্ষ ইংরেজী দৈনিকগুলোর নিয়মিত কলামিষ্ট, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের।
স্মৃতিচারনমূলক মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বিবিসি বাংলার দুই সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাসুদ হাসান খান, সাংবাদিক বুলবুল হাসান, সারওয়ার-ই আলম, সত্যবাণীর বার্তা সম্পাদক নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, ড. শ্যামল চৌধুরী, রেইনবো ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালের কর্ণধার মোস্তফা কামাল, গয়াছুর রহমান গয়াস, খেলাঘরের প্রাক্তন কর্মী শাহাব আহমেদ বাচ্চু, আমরা একাত্তরের সংগঠক সত্যব্রত দাস স্বপন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক মুনিরা পারভীন, ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ, নতুন দিন অনলাইনের পলি রহমান, খেলাঘর সংগঠক ধনঞ্জয় পাল ও শিক্ষক-সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মিলন।
মুক্ত আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রবীন সংস্কৃতিকর্মী এমদাদ তালুকদার এমবিই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সংস্কৃতিকর্মী মাহফুজা তালুকদার, শিরিনউল্লাহ, মাহবুব রহমান, জনমত নির্বাহী সম্পাদক মাহবুব রহমান, বার্তা সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন, সাংবাদিক আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, সত্যবাণীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দা ফেরদৌসি পাশা, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা, ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ, সংবাদ নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম এর সহধর্মিনী সুমনা করিম, সংস্কৃতিকর্মী স্মৃতি আজাদ ও সঙ্গীত শিল্পী তামান্না ইকবাল প্রমূখ।
মুক্ত আলোচনায় বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে একটি সদ্য স্বাধীন জাতি কোন দিকে যাবে সেই নির্দেশনা দিয়েছিল সংবাদ। জাতিকে প্রগতিমুখী ভাবনায় উদ্দীপ্ত করেছিল সংবাদ। কয়েকটি প্রজন্মের মুক্ত মানস গঠন করায় নিরলস ভূমিকা পালন করেছে সংবাদ। একইসঙ্গে গ্রামীন জনগোষ্ঠিকে প্রাধান্য দিয়ে মফস্বল সাংবাদিকতায় এক বিরাট পরিবর্তন এনেছিল সংবাদ।
আলোচনাটি দৈনিক সংবাদকে নিয়ে হলেও সেখানে বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এই প্রতাপের যুগে দৈনিক সংবাদের মতো প্রিণ্ট মিডিয়ার টিকে থাকার চ্যালেঞ্জের কথা, বাংলা বানানরীতি নিয়ে হাল আমলে খবরের কাগজগুলোতে বিরাজমান বিশৃঙ্খলার কথা, জাতি গঠনে মফস্বল সাংবাদিকতার গুরুত্বের কথা এবং সর্বোপরি প্রগতিশীল প্রজন্ম গঠনে দৈনিক সংবাদের মত প্রগতিমুখী খবরের কাগজের প্রয়োজনীয়তার কথা।
সংবাদ নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম সংবাদকে নিয়ে সুধীজনের আবেগ ও ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমরা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এই প্রতাপের যুগেও চেষ্টা করছি সংবাদের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে কাগজটিকে পাঠকের ভালবাসার জায়গায় টিকিয়ে রাখার জন্য। আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো বড় কিন্তু আমরা আশাবাদী। আমরা চেষ্টা করছি পরিবর্তিত বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠকের চাহিদানুযায়ী ডিজিটাল মিডিয়ায় একটা জায়গা করে নেয়ার জন্য। তিনি এ কাজে সফল হতে সংবাদের সকল পর্যায়ের পাঠকের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনার ফাঁকে ফাঁকে সংবাদ নিয়ে মুক্ত আলোচনা আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে সৈয়দ আনাস পাশা বলেন,‘গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস বারবার স্মরণ করতে হয়, চর্চা করতে হয়। কারণ যত বেশি এগুলো চর্চা করা যাবে, আমাদের সংগ্রামী পূর্ব প্রজন্মের গৌরবগাঁথা তত বেশি পৌঁছাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি আবু মুসা হাসান বলেন, ‘আমাদের পূর্ব প্রজন্মের সংগ্রামী ইতিহাস আমাদের প্রেরণার উৎস। এই উৎস থেকে আমাদের বর্তমান ও পরবর্তী প্রতিটি প্রজন্ম প্রেরণা সঞ্চয় করুক এটি আমরা চাই। আর তাইতো ইতিহাস চর্চা জরুরী। আমাদের এই চর্চা থেকেই আমাদের সন্তানদের জানার আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
উল্লেখ্য, ‘দৈনিক সংবাদ’ বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের অন্যতম পুরনো জাতীয় দৈনিক। ৭৪ বছর অতিক্রমরত এই পত্রিকাটি বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের প্রতিটি বাঁকে পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একটি প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণে এই পত্রিকাটির নিরলস প্রচেষ্টা ছিল সেই শুরু থেকেই, যা এখনও অব্যাহত। ষাটের দশকে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী, আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি সংবাদ দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করে। পূর্ব পাকিস্তানের সবকটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে এই পত্রিকাটি একাত্ম থাকায় এর দপ্তরে প্রায়শ পুলিশের অভিযান পরিচালিত হতো এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বরাবরই এর প্রতি বিরূপ ছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এই পত্রিকার প্রেস, মেশিনপত্র, অফিস আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে একই সাথে নিহত হন সাংবাদিক শহীদ সাবের।