বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে (দোতলায়) শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন বনাম ধর্মের নামে রাজনীতি’ শীর্ষক একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এবং সভাপতিত্ব করেন ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।
উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের কার্যকরী সভাপতি আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক শহীদসন্তান অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ধর্মের নামে রাজনীতি চলে আসছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। পাকিস্তান আমলেও আমরা একশ্রেণীর মানুষকে দেখেছি যারা ইসলামের নামে রাজনীতি করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এসে ধর্মের নামে রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছেন। কারণ তিনি জানতেন ধর্মান্ধরা রাজনীতিতে ধর্মকে শুধু অপব্যবহারই করে। এরা ধর্ম ব্যবসায়ী।
তিনি আরো বলেন, ‘অখন্ড ভারতবর্ষে যখনই দাঙ্গা হয়েছে তখনই বঙ্গবন্ধু দাঙ্গাবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। ’৭২-এর সংবিধানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন। বঙ্গবন্ধু দর্শন ছিল গণমানুষের মুক্তি। জামায়াতে ইসলামী এদেশে ধর্মের নামে রাজনীতি করতে গিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। তাদের শিকড় অনেক গভীরে। তাদেরকে উপড়ে ফেলার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দর্শন বাস্তবায়ন করতে হলে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।’
যেখানে জেনারেল জিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভিখারী বানিয়েছিল সেখানে বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছেন। দেশের এই সংকটকালে মুক্তিযোদ্ধাদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আসুন আমরা সবাই ‘’৭১-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামি’ -এই আহ্বান জানিয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘দেশ ও জাতির এক সংকট মুহূর্তে ২০২৩-এর আগস্টে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদৎবার্ষিকী পালন করছি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে কেন্দ্র করে ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীরা বিএনপির ছত্রছায়ায় নির্বাচন বানচালের জন্য বহুমাত্রিক তৎপরতা চালাচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে সারা দেশে তারা যে আগুন সন্ত্রাস, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল এবারও তার পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্র তৈরি করছে। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ ’৭১-এ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপির ছত্রছায়ায় জামায়াত শিবির চক্রের তাণ্ডব।সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির আরো বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক শত্রুরা যখনই ক্ষমতায় গিয়েছে কিংবা সুযোগ পেয়েছে তখনই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা বিকৃত ও বিনষ্ট করতে চেয়েছে। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ’৭২-এর সংবিধানে। যে আদর্শের জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যার নেপথ্য কুশিলবদের চেহারা জাতির সামনে উন্মোচনের জন্য অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে হবে, যে দাবি আমাদের দীর্ঘকালের।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখনো অন্ধকার থেকে মুক্তি পাইনি, যার প্রমাণ আমরা সম্প্রতি দেখতে পেয়েছি যুদ্ধাপরাধী সাঈদী মারা যাওয়ার পর। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। রাষ্ট্র পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর সবকিছু গ্রহণ করা হলেও ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে কেন গ্রহণ করা হবে না তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা চাই অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর সকল আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হোক।মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘রাজাকারের চোখা মিয়ার পুত্র মির্জা ফখরুল দেলু রাজাকারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমি অবাক হয়েছি যখন দেখি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলা কিছু মানুষও তার পক্ষে কথা বলছে।তিনি বলেন, ‘সরিষাবাড়ীতে ১৫ আগস্টের শোক সভায় বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া মাহফিল শেষে সেখানকার এক শিক্ষক সাঈদীর জন্য দোয়া করে যা খুবই মর্মান্তিক একটি ঘটনা।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক হওয়ায় আমি সাঈদীর অনেক কুকর্মে কথাই জানি। সাঈদী নিজ হাতে অধ্যাপক মোহাম্মদ জাফর ইকবালের পিতাকে হত্যা করেছিল।
তিনি বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী তারা প্রকৃত আওয়ামী লীগের নয়। তারা মূলত বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট। এরা রাজাকার আল বদরের বংশধর। ছাত্রলীগে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা অনুপ্রবেশ করে বঙ্গবন্ধুর দলকে কলুষিত করছে এমনকি প্রশাসনে থাকা অনেক কর্মকর্তাও সাঈদীর পক্ষে কথা বলছেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগে পদ-পদবী দেওয়ার পূর্বে নেতাকর্মীদের পরিচয় আগে থেকে নিশ্চিত করতে হবে। এবং একই পন্থা অবলম্বন করতে হবে চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রেও। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিলীন করে এই বিশ্বাসঘাতক রাজাকার, আলবদরের বংশধররা উঠে পড়ে লেগেছে। তাদেরকে যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে নিয়ে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘জামায়াত প্রতি শুক্রবারই বায়তুল মোকাররম দখল করে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে উঠে পড়ে লেগে যায়। আমি খবর পেয়েছি ইতোমধ্যে তারা সে কাজটি সম্পন্ন করেছে। অন্যদিকে যুদ্ধ অপরাধীর পুত্র জিয়ার প্রকৃত আদর্শধারণকারী ফখরুল রাস্তা দখলে নেমে পড়েছেন। এমত অবস্থায় আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে রক্ষা করার জন্য সভা-সেমিনার করছি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত রাখতে ও দেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখার জন্য নিজেদের জীবন বিপন্ন করে এখানে উপস্থিত হয়েছি। কেননা রাস্তায় তারা যে অবস্থার সৃষ্টি করে তাতে জান নিয়ে বাড়ি ফিরব তার কোন নিশ্চয়তা নেই।তিনি আরো বলেন, ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তির মদদদাতা ও উৎসাহদাতা জেনারেল জিয়া যেমনভাবে বঙ্গবন্ধুর লালিত সকল আদর্শকে একে একে বাতিল করেছিল। ঠিক তেমনিভাবে গণতন্ত্রের মানষকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল আদর্শকেও নস্যাৎ করার জন্য জেনারেল জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরী ফখরুল উঠে পড়ে লেগেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি যুদ্ধ করে দিয়ে সাঈদীর জন্য ধর্মান্ধরা রাস্তায় নেমে গায়েবানা জানাজা করছে। মানুষ কতটা ধর্মান্ধ হলে রাষ্ট্রের মূলনীতি, আদালতের রায়ের তোয়াক্কা না করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবদমিত করে এ কাজ করতে পারে।তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমরা লক্ষ্য করছি বঙ্গবন্ধুর দলেও কিছু অনুপ্রবেশকারী বিসমিল্লাহ বলে তাদের বক্তব্য শুরু করে যা জিয়ার আদর্শ। এরাই আওয়ামী লীগের লেবাস ধারণ করে সাঈদীর পক্ষে কথা বলছে; বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধূলিসাৎ করার জন্য। আমরা দুঃখের সঙ্গে আরও লক্ষ্য করছি, আমাদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। কিন্তু ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা নিজেদের আদর্শকে ঠিকই আঁকড়ে আছে।
তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নিকট প্রশ্ন রাখেন, ‘কেন এখন পর্যন্ত একজন চিহ্নিত দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুর পরও মিছিল বের হলো না? কেন ভাতা প্রাপ্ত ২ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় নামলেন না? আমাদের রাস্তায় নামা উচিত ছিল না কী?তিনি বলেন, যতদিন সংস্কৃতি ক্ষেত্রে জিডিপি বৃদ্ধি না পাবে ততদিন আমাদের আদর্শের স্খলন ঘটতেই থাকবে। আমরা দেখেছি বন মন্ত্রণালয় সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিচালনা করছে। দুঃখের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করতে হয়, তাহলে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় কি করছে? বঙ্গবন্ধুর দল এতদিন ক্ষমতায় থাকার পরও কেন আমরা এই দৃশ্য দেখছি? আমরা দেখছি একজন সাজাপ্রাপ্ত চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুর পর তার পক্ষে এত মানুষ রাস্তায় নামছে অথচ কেউ কিছু বলছে না। তাদের প্রতিরোধ করার জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কেউ কি নেই?তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, ধর্মের নামে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি করণের প্রক্রিয়া চলছে। অথচ আমরা কেউ রাস্তায় নামছি না। কেবল আমরা কিছু মানুষ এখানে আজকের সভায় উপস্থিত হয়েছি কিন্তু কোনো আওয়ামী লীগারকে এখন পর্যন্ত রাস্তায় নামতে দেখছি না। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক আমাদের জন্য।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে হত্যার পর বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনীতি ও সেনাবাহিনীতে নানা অঘটন এবং চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রতিষ্ঠিত করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি।তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রত্যাখান করে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে ইসলামিক রাজনীতি চালু করেন এবং মুসলিম জাতিসমূহের সহযোগিতা সংস্থায় বাংলাদেশকে তুলে ধরেন। এসব ব্যবস্থা বাংলাদেশের অনেক উপজাতীয় ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিচ্ছিন্ন ও বিরুদ্ধাচরণ করে যা ভবিষ্যতের বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক ও উপজাতিক দ্বন্দ্বকে ত্বরান্বিত করে। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের দোসর, নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে স্বীকৃতি দেয় এবং ঘোষণা দেন, ‘I will make politics difficult for the politicians.’।
নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘তরুণ বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন রাজনীতি শুরু করেছিলেন তখন এই উপমহাদেশে রাজনীতির সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল ধর্ম। সময়টি ছিল ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদের সময়, হানাহানি এবং রক্তপাতের সময়। এই কলুষিত দুঃসময়েও বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিস্ময়করভাবে ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্ম পরিচয় নয় মানুষ পরিচয়টিই ছিল তাঁর কাছে সবচেয়ে বড়। তাই তাঁর রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম পরিবর্তন করে সকল ধর্মের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য ‘আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানেরও একটি মূল আদর্শ ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। বাংলাদেশকে তিনি সকল ধর্মের সকল বর্ণের সকল সংস্কৃতির আবাসভূমি হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ’৭৫-এর আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ ভোরবেলা পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম একটি হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলো।তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ একটি আদর্শ ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা সেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে সরিয়ে দিয়ে সংবিধানের পরিবর্তন করা হলো, নিষিদ্ধ করে দেওয়া ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার তার বিষাক্ত নখ-দন্ত নিয়ে এই দেশের মাটিতে ফিরে আসার ফলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে তোলা বাংলাদেশ পথ হারিয়ে বিভ্রান্তির কানাগলিতে হারিয়ে যায়।‘সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার পথে, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি গর্ত থেকে বের হয়ে সদম্ভে আস্ফালন করতে প্রস্তুত, জঙ্গিবাদ এ দেশের মাটিতে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সুখী সমৃদ্ধ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে।’ তিনি যোগ করেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের কার্যকরী সভাপতি আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সংবিধান অনুমোদনের প্রাক্কালে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদে যে ভাষণ দেন সেখানে তিনি ‘জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। সংসদকে তিনি জানান, “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্ম কর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করবো না।তিনি আরো বলেন, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন Ñঅনেক নেতাকে আমি জানি যারা মুসলিম লীগের সদস্য যাদের সাথে আমি বহুদিন রাজনীতি করেছি, তারা ইসলামের যে কয়েকটা কাজ করা নিষেধ আছে তার প্রত্যেকটা করে; আবার ইলেকশনে দাঁড়াইয়া বড় বড় পীর মাওলানাদের হাজির করে তাদের কাছ থেকে ফতোয়া নেয় টাকা দিয়ে। এই রাজনৈতিক নেতারাই নিজেদের স্বার্থের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের নেতৃত্ব রক্ষা করার জন্য। জনসাধারণকে ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে তাদের শাসন ও শোষণ করতে চায়।তিনি বলেন, ‘হাজার বছর ধরে বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলমানসহ নানা ধর্ম-বর্ণ-জাতের অবদানে গড়ে ওঠা বাংলার ঐতিহ্যিক সমাজ নিয়ে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ’৭৫-এর বর্বরতম হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন আজও বাংলাদেশে অধরা রয়ে গেছে।