বিক্ষোভ মিছিল:সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত শাবি ক্যাম্পাস

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)’র এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতভর ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। রাত ১২টার পর থেকে শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখে।শাবি থেকে সংবাদদাতা আরাফ আহমদ জানান, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে মেয়েদের আবাসিক হলের পার্শ্ববর্তী গাজিকালুর টিলায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র বুলবুল আহমেদ গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় দেখতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। বুলবুল ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বুলবুলের মৃত্যুর বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল।

তিনি বলেন,ওই শিক্ষার্থীর বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কয়েকজন শিক্ষার্থী উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানেই তার পালস্ ছিল না। পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে কে বা কারা ছুরিকাঘাত করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোন তথ্য জানা যায়নি। তবে, ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। ময়নাতদন্তের পর তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মৃত্যুর বিষয়টি তার পরিবারকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলায়।এদিকে, ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও জালালাবাদ থানা পুলিশ ওসমানী হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ ও রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেনসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ছুটে আসেন হাসপাতালে।এসএমপির জালালাবাদ থানার ওসি নাজমুল হুদা খান সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ একটি টিলায় বুলবুলের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে অন্য শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে খবর দেয়। তাকে উদ্ধার করে এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আমরা হত্যাকারীদের ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছি।

ক্যাম্পাসে মিছিল, সড়ক অবরোধ

ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় রাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠে শাবি ক্যাম্পাস। গতকাল রাত ১২টায় শিক্ষার্থীরা বুলবুল নিহতের প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখে।এরআগে সোমবার সন্ধ্যা থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ করতে থাকে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগও ক্যাম্পাসে মিছিল করছে। অন্যদিকে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মিছিল মিটিং করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে মিছিল বের করে প্রধান ফটকে আসে। এরপর সেখান থেকে পুনরায় গোলচত্বরে গিয়ে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বুলবুল আহমেদের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ করছে। তারা গোলচত্বর থেকে মিছিল নিয়ে ছাত্রী হল ও ছাত্র হল প্রদক্ষিণ করছে। রাত ১২টা থেকে শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বলে জানান শাবির সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল। তিনি জানান, নিহত বুলবুল ছাত্রলীগ কর্মী ছিল। তবে, সংগঠনের কোন পদে ছিল না।

হত্যার ঘটনায় ৩ জন আটকঃ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন

এদিকে, দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদের নিহতের ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে।অপরদিকে বুলবুলের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনের সড়কে বৃষ্টিতে ভিজে মানববন্ধন করেন তাঁরা। মানববন্ধন শেষে গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি গোলচত্বর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একই স্থানে এসে শেষ হয়।এরআগে সোমবার রাতে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় এসএমপি’র জালালাবাদ থানায় মামলাটি দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন। মামলা নম্বর-২৮। মামলার এজাহারে বলা হয়, বন্ধুদের নিয়ে টিলায় বেড়াতে গিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে বুলবুল নিহত হন। বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণে বুলবুল মারা যান বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

You might also like